পঞ্চাশ বা ষাটে পা দিয়েও যদি যৌবনের মতোই মাথা ভর্তি চুল থাকে, তা হলে কেমন হয়? ধরুন, টাক পড়ল না, চুল উঠল না, এমনকি চুলে পাকও ধরল না। ঠিক কুড়ি বা ত্রিশের কোঠায়, যেমন মাথাভরা চুল ছিল, তেমনটাই থেকে গেল। শুনতে যতই অবাস্তব মনে হোক, এমন কিন্তু সম্ভব। তাতে কোনও রকম ‘হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট’ করানোর প্রয়োজনও পড়বে না। নতুন চুল গজাবে স্বাভাবিক নিয়মেই এবং তাতে পাকও ধরবে না। আমেরিকার ৪৭ বছর বয়সি উদ্যোগপতি ব্রায়ান জনসন এমন ভাবেই তাঁর চুল যৌবনের মতো ধরে রেখেছেন।
ব্রায়ানের নাম এখন বেশ পরিচিত। তাঁকে এ কালের ‘যযাতি’ বলে ডাকা হচ্ছে। ভারতীয় পুরাণে উল্লিখিত রাজা যযাতি যেমন জরা ঠেকাতে তাঁর পুত্রের থেকে যৌবন ধার নিয়েছিলেন, ব্রায়ানও শুরুতে তাঁর ছেলের থেকে প্লাজ়মা ধার নিয়ে যৌবন ধরে রাখার চেষ্টা করেন। তাতে কাজ না হওয়ায় হাইপারবেরিক অক্সিজেন থেরাপি করিয়ে নিজের শরীরের বয়স অনেক কমিয়ে ফেলেছেন। ওই থেরাপিতে ত্বকের যৌবন ফিরল, কিন্তু চুলের কোলাজেন তো নতুন করে তৈরি হল না। সে কারণে আরও এক রকম থেরাপি করিয়েছেন ব্রায়ান। তার নাম হল ‘রেড লাইট থেরাপি’। লেজ়ার আলোর সাহায্যে মাথার ত্বকের কোষ পুনরুজ্জীবিত করা হয় এই থেরাপিতে। তাতে নতুন করে কোলাজেনও তৈরি হয়।
কী থেরাপি করিয়েছেন ব্রায়ান?
এই থেরাপিকে বলা হয় ‘লো-লেবেল লেজ়ার থেরাপি’ (এলএলএলটি) বা ফোটোবায়োমডিউলেশন (পিএমবি)। এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের লেজ়ার আলো ফেলে ত্বকের মৃতপ্রায় কোষকে সজীব করে তোলা যায়। সাধারণত ৬৩০-৬৭০ এবং ৮১০-৮৫০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকরশ্মি দিয়ে থেরাপিটি করা হয়। এতে ত্বকের কোষে নতুন করে কোলাজেন তৈরি হয়। ত্বকের কোষে রক্তপ্রবাহ বাড়ে, অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রবাহ শুরু হয়, ফলে নতুন করে কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজন হয়।
আরও পড়ুন:
গবেষকেরা দেখছেন, ৬৫০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের লাল লেজ়ার আলোকরশ্মি দিয়ে থেরাপি করলেই চুলের বৃদ্ধি শুরু হয়। মাথার ত্বকের কোষে ‘অ্যাডেনোসিন ট্রাই ফসফেট’ (এটিপি) তৈরি হয়, যা কোষের শক্তি বাড়ায়। ফলে নতুন করে চুল গজানো শুরু হয় এবং সেই চুল হয় ঠিক যৌবনেরই মতো।
এই থেরাপি ১০-২০ মিনিট ধরে করা হয়। কত দিন সময় লাগবে, তা ঠিক করেন চিকিৎসকই। থেরাপি করার ৮-১২ সপ্তাহের মধ্যেই নতুন করে চুল গজানো শুরু হয়। চুলের ঘনত্বও বাড়ে। তবে এই থেরাপির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, যেমন থেরাপি করানোর পরেই মাথার যন্ত্রণা, চোখে ব্যথা হতে পারে। মাথার ত্বকে চুলকানি বা র্যাশও দেখা দিতে পারে।