ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরল বাড়ছে কি না, তা জানতে রক্ত পরীক্ষা করান নিশ্চয়ই। ক্যানসার শরীরে বাসা বাঁধছে কি না, তা জানতেও কিন্তু রক্ত পরীক্ষাই নির্ভরযোগ্য। রক্তের কয়েকটি পরীক্ষায় যে কোনও রকম ক্যানসার ধরা পড়তে পারে। আর তার খরচ সাধ্যের মধ্যেই। রুটিন টেস্ট করানোর সময়ে যেমন লিপিড প্রোফাইল, ব্লাড কাউন্ট ইত্যাদি করান, তেমনই এই পরীক্ষাগুলোও করিয়ে রাখলে নিশ্চিন্ত থাকা যায়।
ক্যানসার চিহ্নিত করতে পারে কোন কোন ‘ব্লাড টেস্ট’?
কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি)
রক্তের এটিই প্রাথমিক পরীক্ষা। যে কোনও অসুখেই করতে বলা হয়, তা অনেকেই জানেন না। কমপ্লিট ব্লাড কাউন্টে কিন্তু রক্তের ক্যানসার লিউকিমিয়া বা লিম্ফোমাও ধরা পড়ে। ক্যানসার রক্তকোষে ছড়ালে লোহিত রক্তকণিকা ও প্লেটলেট বা অনুচক্রিকার সংখ্যায় হেরফের হবে, রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণও দেখা দেবে। এই সবই ধরা পড়বে এই টেস্টে।
সার্কুলেটিং টিউমার সেল টেস্ট (সিটিসি)
এই পরীক্ষায় ধরা পড়বে টিউমার কোষের বিভাজন হচ্ছে কি না। কোষে টিউমার থাকলে তার ভগ্নাংশ রক্তেও মিশে যায়। সেগুলি রক্তকণিকার মাধ্যমে বাহিত হতে থাকে। সিটিসি টেস্টে সেটাই ধরা পড়বে। স্তন ক্যানসার, প্রস্টেট বা কোলন ক্যানসার এই রক্ত পরীক্ষায় ধরা সম্ভব।
আরও পড়ুন:
ব্লাড কেমিস্ট্রি টেস্ট
কিডনি, লিভার ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ক্যানসার কোষ তৈরি হচ্ছে কি না, তা ধরা পড়বে এই পরীক্ষায়। এই ব্লাড টেস্টে ধরা পড়ে রক্তের মধ্যে কী কী প্রোটিন রয়েছে, নতুন কোনও অ্য়ান্টিজেন মিশেছে কি না, কী ধরনের উৎসেচক শরীরে তৈরি হচ্ছে। কেবল ক্যানসার নয়, শরীরের প্রতিটি অঙ্গ ঠিকমতো কাজ করছে কি না, কোনও জটিল অসুখ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কি না, তা-ও ধরা পড়বে এই টেস্টে।
ইমিউনোফেনোটাইপিং
ক্যানসারের প্রোটিন তৈরি হচ্ছে কি না, তা ধরা যাবে এই টেস্টে। লিউকেমিয়ায় রোগে আক্রান্ত হলে রক্তের মধ্যে থাকা শ্বেত রক্তকণিকাগুলির গঠন ও বিস্তার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (সিএমএল) রক্তের ক্যানসারেরই একটি ধরন। শ্বেতরক্ত কণিকাগুলি যখন মায়েলয়েড টিস্যু থেকে অনিয়ন্ত্রিত হারে তৈরি হতে শুরু করে এবং শরীরে তার উপসর্গগুলি ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। ইমিউনোফেনোটাইপিং পরীক্ষাটি করালে সেই অস্বাভাবিকতা ধরা পড়বে।
লিক্যুইড বায়োপসি
রক্তের নমুনা নিয়ে এই বায়োপসি করা হয়। বিশেষ রকম মার্কার ব্যবহার করে দেখা হয় ক্যানসার কোষের বিভাজন হচ্ছে কি না। আরও বিশদ জানতে টিউমার কোষের ডিএনএ পরীক্ষাও করা হয়।
ব্লাড প্রোটিন টেস্ট
রক্তে মিশে থাকা প্রোটিন পরীক্ষা করা হয় এই টেস্টে। এতে বোঝা যায়, নতুন কোনও প্রোটিন রক্তে মিশছে কি না। অর্থাৎ, ক্যানসার কোষের অ্য়ান্টিজেন রক্তে বাহিত হচ্ছে কি না। লিউকেমিয়া, মাল্টিপল মায়েলোমা ধরা যাবে এই পরীক্ষায়।
টিউমার মার্কার ব্লাড টেস্ট
শরীরে ক্যানসার কোষ ছড়াতে থাকলে সেই কোষ থেকে নির্গত নানা রকম দূষিত পদার্থ বা রাসায়নিকও রক্তে মিশতে থাকে। টিউমার মার্কার টেস্টে সেই রাসায়নিকগুলিকেই চিহ্নিত করা হয়। এই টেস্ট করালে আগেভাগেই সতর্ক থাকা যায়। ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার আগেই তার থেরাপি শুরু করা সম্ভব।