ডাল-ভাত এ দেশের সবচেয়ে জনগ্রাহ্য খাবারের মধ্যে অন্যতম। সহজপাচ্য, সহজলভ্য, সুস্বাদু খাবার বলে তো বটেই, নিরামিষাশীরা ডাল খান শরীরে প্রোটিন যাচ্ছে ভেবেও। তা ছাড়া শুধু নিরিমষভোজীরাই নন, আমিষ খাবার খান যাঁরা, তাঁরাও এক বেলা মাছ-মাংস-ডিমের মতো প্রাণিজ প্রোটিন খেয়ে আরেক বেলায় ডালের মতো উদ্ভিজ প্রোটিন খাচ্ছেন হজমের সমস্যা এড়াতে। মোট কথা, বিকল্প প্রোটিন হিসাবে ডালের কদর আছে। কিন্তু ডালে প্রোটিন ঠিক কতটা আছে? তা একা কি বিকল্প প্রোটিন হতে পারে?
দিল্লির এক বেসরকারি হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরালজি বিষয়ের চিকিৎসক শুভম বাৎস্য এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। ডালে কতটা প্রোটিন থাকে, কতটা খেলে শুধু ডাল দিয়েই প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব, এই সমস্ত বিষয়ে নিজের সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্টে আলোচনা করেছেন চিকিৎসক বাৎস্য। তিনি বলেছেন, ‘‘ডালকে যদি প্রোটিনে ভরপুর খাবার বলে ভেবে খান, তবে বলব, আপনি বোকামি করছেন!’’
ডালে কতখানি প্রোটিন আছে?
খাবারের পুষ্টি-তথ্য মানলে ১০০ গ্রাম রান্না না করা ডালে প্রোটিন রয়েছে ২৪ গ্রাম। সেই হিসাবে মনে হতে পারে দিনের প্রোটিনের প্রয়োজনের অনেকটাই তাতে মিটছে। কিন্তু চিকিৎসক প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘আপনি যখন খাবার খান, তখন কি একবারে ১০০ গ্রাম ডাল খেতে পারেন? তা হলে কী করে ওই ২৪ গ্রাম প্রোটিন আপনার শরীরে যাবে?’’ চিকিৎসক জানিয়েছেন, এক বাটি রান্না করা ডালে বড় জোর ৪-৫ গ্রাম প্রোটিন যায় শরীরে। আর যদি কেউ ওই ২৪ গ্রাম প্রোটিন পেতে চান, তবে তাঁকে ওই ডাল অন্তত পাঁচ বাটি খেতে হবে।
দৈনিক কতখানি প্রোটিন প্রয়োজন হয় শরীরে?
সাধারণত কার ওজন কত, তার উপর নির্ভর করে, তাঁর কতখানি প্রোটিন প্রয়োজন। তবে গড়ে এক জন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী প্রাপ্তবয়স্কের দিনে ৫০ গ্রাম মতো প্রোটিনের দরকার পড়ে। সেই হিসাবে সকালে এবং বিকেলে এক বাটি ডাল খেলে সেই প্রোটিনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পূরণ হতে পারে কোনও ভাবে।
ডাল এবং প্রাণিজ প্রোটিনের মধ্যে তফাত কতটা?
১০০ গ্রাম ডালে যেখানে ২৪ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে, সেখানে ১০০ গ্রাম মুরগির মাংসে রয়েছে ২৮ গ্রাম প্রোটিন, ১০০ গ্রাম ডিমে রয়েছে ১৩ গ্রাম প্রোটিন আর ১০০ গ্রাম মাছে রয়েছে ২২ গ্রাম প্রোটিন।
এই হিসাবটি দেখলে ডালে প্রোটিনের মাত্রা বেশি বলেই মনে হতে পারে। কিন্তু চিকিৎসক বলছেন ডাল এক বারে ১০০ গ্রাম খাওয়া সম্ভব নয়। অন্য দিকে এক বারে দেড়শো গ্রাম মুরগির মাংস খান অনেকেই। একটি মাঝারি মাপের মাছের পিসের ওজনও হয় ১০০ গ্রামের আশপাশে। আর দু’টি সেদ্ধ ডিমের ওজন ১০০ গ্রামের কাছাকাছি। সেই হিসাবে দেখলে ডালের ভাগেই কম পড়ছে প্রোটিন।
আরও পড়ুন:
তবে কি ডাল বিকল্প প্রোটিন নয়?
ডাল ভাল মানের প্রোটিন সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক বাৎস্য। তবে তিনি বলছেন, একা ডালের পক্ষে প্রোটিনের চাহিদাপূরণ সম্ভব নয়। বিশেষ করে যাঁরা নিরামিষভোজী, তাঁরা ডালের পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় ছানা, দুধ, দই, সয়াবিন, বাদাম এবং বীজের মতো খাবারও রাখুন। যাতে তা প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। যাঁরা আমিষাশী তাঁরা অবশ্যই পরিমাণ মেপে মাছ, ডিম বা মুরগির মাংসের মতো কম ফ্যাটযুক্ত প্রোটিন খান।