শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লেই শুরু হয় চিন্তা। তার কারণও আছে। কম বয়েসি ছেলে-মেয়েদের মধ্যেও ইদানীং বাড়ছে হৃদ্রোগের প্রবণতা। অল্প বয়সেও হার্ট অ্যাটাকের একাধিক ঘটনা ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদেরও।
সেই কারমে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ে ভাবতে হয় বৈকি! কোলেস্টেরল বেড়ে গেল হৃদ্রোগের ঝুঁকি যেমন বাড়ে তেমনই ডায়াবিটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তবে সব কোলেস্টেরল খারাপ নয়। রক্তে এলডিএল (লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন) অর্থাৎ ‘খারাপ কোলেস্টেরল’-এর মাত্রা বেশি থাকলে হ্যার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। আবার শরীরে বেশ কিছু উপকারী কোলেস্টেরলও থাকে। হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল) কোলেস্টেরল শরীরের পক্ষে ভাল।
আরও পড়ুন:
সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানা রকম পরামর্শ থাকে। আয়ু্র্বেদ নিয়ে চর্চা করেন এমন একজন দাবি করেছেন, নিয়মিত দু’টি আখরোট জলে ভিজিয়ে খেলে কোলেস্টেরেলের মাত্রা বাড়বে না।
এমন দাবি আদৌ সঠিক? পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলছেন, ‘‘ ভিটামিন ই, বি, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, কপারে পূর্ণ আখরোট স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ভাল। এতে রয়েছে ফাইবার এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। আখরোট ভিজিয়ে খেলে হজমে সহায়ক হয়, আরও কিছু পুষ্টিগুণ মেলে। আখরোটে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। তবে আখরোট খেলেই হবে, সেটি ভেজানোর দরকার হয় না।
তবে, বেঙ্গালুরুর পুষ্টিবিদ অভিলাষা ভি-এর মত আলাদা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘ভেজানো আখরোটে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এই অ্যাসিড কোলেস্টেরলের উৎপাদন কমাতে এবং রক্ত থেকে বার করে দিতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আখরোটে থাকা ফাইবার কোলেস্টেরলের সঙ্গে জোট বেঁধে, সেটির শোষণে বাধা দেয়। ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে পারে না।’’
পাশাপাশি আখরোটের থাকা উপাদান উপকারী কোলেস্টেরল বা এইচডিএল-এর মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক। উপকারী কোলেস্টেরল খারাপ কোলেস্টেরলকে বাড়তে দেয় না। এইচডিএল ধমনীতে থেকে খারাপ কোলেস্টরলকে বার করে দেয়, ফলে কোলেস্টেরল জমে গিয়ে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হতে পারে না। নিয়মিত একটি বা দু’টি আখরোট খেলে তাই স্বাস্থ্য ভাল থাকে। লিপিড প্রোফাইল ঠিক রেখে এটি হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
পুষ্টিবিদ অনন্যা বলছেন, ‘‘আখরোট ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতাও আছে। প্রথমত এটি নরম হয়ে যায় বলে, শক্ত খাবার যাঁরা খেতে পারেন না তাঁদের চিবোতে সুবিধা হয়। ভেজানো আখরোট খেলে হজমে এবং পুষ্টিগুণ শোষণেও সুবিধা হয়।’’
তবে পুষ্টিবিদের সতর্ক করছেন, উপকারী বলেই মুঠো মুঠো আখরোট খাওয়া যাবে না। কিডনি, লিভার, অগ্ন্যাশয়ের কোনও অসুখ থাকলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।