সন্তান হারানোর যন্ত্রণা পেয়েছেন সেলিনা জেটলি। ২০১৭ সালে যমজ পুত্রসন্তান জন্ম দেওয়ার পর পরই এক শিশুর মৃত্যু হয়। বেশ কয়েক দিন নিওন্যাটাল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হলেও বাঁচানো যায়নি শামশেরকে। সেলিনা এখন তিন সন্তানের মা। প্রথম বারও যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, উইনস্টন এবং বিরাজ। পরের বারও যমজ সন্তানের জন্ম দেন, যাদের নাম শামশের এবং আর্থার। কিন্তু শামশেরকে হারাতে হয় সেলিনা এবং তাঁর স্বামী পিটার হ্যাগকে। যমজ সন্তান ধারণ করা বলিউড অভিনেত্রীর জিনগত। তাঁর মা-ও যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, কিন্তু বাঁচানো যায়নি। তাঁর পূর্বসূরিদের মধ্যে একজন যমজ সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে প্রয়াত হন। অর্থাৎ যমজ সন্তান ধারণ কেবল যে আনন্দের, তা নয়। মাতৃত্বযাত্রার সুখের পাশাপাশি সেলিনাও শিকার হয়েছিলেন এক বিরল লিভারের জটিলতার। ইন্ট্রাহেপাটিক কোলেস্ট্যাসিস অফ প্রেগ্ন্যান্সি (আইসিপি)।
মূলত তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে পৌঁছনোর পর এই রোগ দেখা যায়। এর উপসর্গ হল, হাতে-পায়ে হঠাৎ অসহনীয় চুলকানি। বাইরে থেকে কোনও দাগ দেখা যাচ্ছে না, অথচ শরীরে ভিতরে দানা বাঁধছে বড়সড় রোগ। রাতের দিকে কষ্ট বেড়ে যেত। প্রথম দিকে কারণ ধরতে পারতেন না, তেমন পাত্তাও দিতেন না সেলিনা। তার পর নিজের স্ত্রীরোগ চিকিৎসককে সমস্যার কথা বলার পরে তিনি হেপাটোলজিস্টের কাছে যেতে বলেন। সেখানে চিকিৎসক জানান, নায়িকা আইসিপি-তে আক্রান্ত। এই রোগ হলে লিভার থেকে পিত্তরস বেরোতে না পেরে রক্তে জমে যায়। এর ফলে হাতের তালু আর পায়ের তলায় প্রচণ্ড চুলকানি হয়। মায়ের অস্বস্তির পাশাপাশি এতে গর্ভস্থ শিশুর জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়ে। সময়মতো প্রসব না হলে অকালে জন্ম বা গর্ভেই মৃত্যু হতে পারে শিশুর।
সময়মতো চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণের ফলে প্রথম বার সেলিনার যমজ সন্তানেরা সুস্থ ভাবে জন্ম নেয়। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
সেলিনাকে এই অভিজ্ঞতা দ্বিগুণ ভাবে নাড়া দিয়েছিল। কারণ তাঁর নিজের মায়েরও এক সময় যমজ সন্তান হয়েছিল, কিন্তু তারা বাঁচেনি। ঠিক সেই আতঙ্কই কাজ করছিল তাঁর মনে। প্রতিটি দিন কেটেছে ভয় আর দুশ্চিন্তায়। কেবল প্রথম বার নয়, দ্বিতীয় বার যখন গর্ভে যমজ সন্তানের আগমন হল, তখনও এই সমস্যা দেখা দিয়েছিল তাঁর।
সৌভাগ্যবশত সময়মতো চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণের ফলে প্রথম বার সেলিনার যমজ সন্তানেরা সুস্থ ভাবে জন্ম নেয়। তবে তিনি এই অভিজ্ঞতা জানিয়ে সব হবু মাকেই সতর্কবার্তা দিতে চেয়েছেন। গর্ভধারণের পর অস্বাভাবিক চুলকানি হলে কখনওই অবহেলা না করার পরামর্শ দিচ্ছেন সেলিনা। ইনস্টাগ্রামের পোস্টে তাই লিখেছেন, ‘‘কেবল চুলকানিই আমার সন্তানদের কেড়ে নিতে পারত।’’ চিকিৎসকেরাও বলছেন, অন্তঃসত্ত্বাকালীন অবস্থায় চুলকানি সব সময় স্বাভাবিক নয়। তা কখনও লিভারের গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। তাই এমন কিছু হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া জরুরি।