সিঁড়ি ভাঙতে গিয়ে হাঁটুতে ‘খটখট’ বা ‘কড়কড়’ শব্দ শুনছেন? সামান্য কিছু ভেবে অবহেলা করছেন। কিন্তু সম্প্রতি দিল্লির অস্থিরোগ চিকিৎসক ওবায়দুর রহমান তাঁর সমাজমাধ্যমে জানালেন, এই শব্দই হতে পারে বিপদের প্রথম ইঙ্গিত। হাঁটুর কার্টিলেজ ক্ষয় হতে শুরু করলে এমনই শব্দ বেরোয়। হাড়ে হাড়ে ঘর্ষণের আওয়াজ হতে পারে সেটি। চিকিৎসক তাঁর সমাজমাধ্যমের পাতায় এক তরুণীর ঘটনা জানিয়েছেন। প্রতি দিন হাঁটুতে শব্দ হলেও বিষয়টি আমল দেননি তিনি। কয়েক মাস পর আচমকা এক দিন হাঁটু আটকে যায়। যন্ত্রণাও শুরু হয়। তার পর ধরা পড়ে, তিনি ‘কনড্রোমালেসিয়া পাটেলাই’তে আক্রান্ত। যেখানে হাঁটুর নীচের কার্টিলেজ ক্ষয়ে যায়। দীর্ঘ সময় বসে থাকা, ভঙ্গিমা ভুল করা আর বিশ্রামহীন যাপনের কারণে নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই সমস্যার প্রকোপ বেড়েছে। এমনই দাবি সেই চিকিৎসকের। আর তাই তাঁর সতর্কবার্তা, ব্যথা নয়, শব্দই প্রথম সঙ্কেত। তাই হাঁটু থেকে যদি ঘর্ষণের মতো শব্দ শোনা যায়, তা অবহেলা করা ঠিক নয়। শরীরচর্চা, স্ট্রেচিং, পর্যাপ্ত জলপান আর সঠিক ভঙ্গিতে বসা-দাঁড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুললেই সমস্যা অনেকটা এড়ানো যায়। শরীর আসলে সব সময়ই সঙ্কেত দেয়। কেবল শুনতে জানতে হয়। হাঁটুর এই খটখট আওয়াজ হয়তো বলতে চাইছে— সময় এসেছে নিজের যত্ন নেওয়ার।
হাড়ে হাড়ে ঘর্ষণের আওয়াজ। ছবি: সংগৃহীত।
চিকিৎসক পোস্টের ক্যাপশনে জানান, বয়স যখন ২০-র কোঠায়, তখন কে-ই বা শরীরের কথা শোনে! কিন্তু কম বয়সিদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বাড়তে দেখছেন তিনি। প্রতি সপ্তাহে কেউ না কেউ এই সমস্যা নিয়ে আসছেন। বিশেষ করে যাঁরা ৮-১০ ঘণ্টা বসে থাকেন অফিসের কাজের জন্য। অস্থিরোগ চিকিৎসক জোর দিয়ে বলেন, ব্যথা প্রায়শই পরবর্তী পর্যায়ের লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয়। কিন্তু আওয়াজ সবার আগে সঙ্কেত দেয়। তাই নিয়মিত স্ট্রেচিং, শক্তিবৃদ্ধির ব্যায়াম, ভঙ্গি সংশোধন এবং দীর্ঘ ক্ষণ বসে না থাকা— এগুলি অভ্যাস করলে এই রোগ থেকে দূরে থাকা যাবে।
তবে কলকাতার ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট তথা পুষ্টিবিদ অভিজিৎ ভট্টাচার্য এই বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত নন। তাঁর মতে, হাঁটুর কার্টিলেজ ক্ষয় হলে অবশ্যই এমন শব্দ হতে পারে। কিন্তু হাঁটুতে ‘খটখট’ শব্দের কারণ কেবল এটি নয়। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক সময়ে দুই হাড়ের গাঁটে গাঁটে হাওয়া ভরে থাকলে, পেশির সংযোগস্থল দুর্বল হলে, নমনীয় না হলে, অথবা ভিটামিন ডি-র ঘাটতি হলেও হাঁটুতে আওয়াজ হতে পারে। ছোটদেরও হাঁটুতেও এমন সমস্যা হতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, হাঁটুর কার্টিলেজ ক্ষয় হওয়ার জন্য কখনওই বসে কাজ করার অভ্যাস দায়ী হতে পারে না। এটা একেবারেই ভুল দাবি। বসে বসে কার্টিলেজ ক্ষয় হওয়া সম্ভব নয়।’’ চিকিৎসক জানাচ্ছেন, হাঁটুতে আওয়াজ হলেই ভয় পেতে হবে, বা আতঙ্কে ভুগতে হবে, এমনটা নয়, বরং সচেতন হলেই সঠিক পদক্ষেপ করা যাবে।