বন্ধ্যত্বের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলেন। পরীক্ষায় ধরা পড়ল শুক্রাণু বা ডিম্বাণুতে গিজগিজ করছে ‘পিটিএফই’। এক জন বা দু’জনের সমস্যা নয় কিন্তু। ইদানীং বন্ধ্যত্বের সমস্যার নেপথ্যে এই ‘পিটিএফই’-কে অনেকাংশে দায়ী করছেন চিকিৎসকেরা। মুম্বইয়ের বিড়লা ফার্টিলিটি অ্যান্ড আইভিএফ সেন্টার অনেক সন্তানহীন দম্পতির জননকোষের এমন হাল দেখে চমকে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে 'পাবমেড' থেকেও নানা সময়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
কি এই ‘পিটিএফই’?
ননস্টিক বাসনে নিশ্চয়ই রান্না করেন। সাধারণত ননস্টিক পাত্রের উপরে একটি আস্তরণ থাকে। তাতেই থাকে এক ধরনের রাসায়নিক, যার নাম ‘পলিটেট্রাফ্লুরোইথিলিন’ (পিটিএফই)। এটি এক ধরনের পলিমার, যা উচ্চ তাপেও গলে না। কিন্তু যদি ননস্টিক বাসনের উপরের স্তরটা উঠে যায় বা তাতে চিড় ধরে, তা হলে কিন্তু বিপদ। তখন ওই রাসায়নিক বেরিয়ে এসে রান্না করা খাবারে মিশে যাবে এবং শরীরে ঢুকতে থাকবে। দিনের পর দিন এই রাসায়নিক শরীরে ঢুকলে তা রক্তপ্রবাহে জননকোষগুলিতেও গিয়ে ঘাঁটি গেড়ে থাকবে। শুক্রাণু ও ডিম্বাণুতে যদি এই রাসায়নিক ঢোকে, তা হলে দুইয়েরই অবস্থা বেহাল হবে। শুক্রাণুর গুণগত মান ও সংখ্যা যেমন কমবে, তেমনই ডিম্বাণুর নিষিক্ত হওয়ার ক্ষমতা লোপ পাবে। ফলে বন্ধ্যত্বের সমস্যা দেখা দেবে অচিরেই।
আরও পড়ুন:
স্বাভাবিক ভাবে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন বা নিষেকের জন্য প্রয়োজন অন্তত ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি শুক্রাণু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র ২০১০-এর নির্দেশিকা অনুসারে এর মধ্যে খুব কম করে অন্তত ৪০ শতাংশ গতিশীল এবং ৪ শতাংশ সঠিক গঠনের শুক্রাণু হতে হবে। কিন্তু যদি রাসায়নিক থেকে সংক্রমণ ঘটে, তা হলে শুক্রাণুর কার্যকারিতা কমবে। যদি শুক্রাণুর সংখ্যা, গতিশীলতা কমে যায়, তখনই বন্ধ্যত্বের সমস্যা দেখা দেবে।
ননস্টিক পাত্রের উপরের স্তরটির নাম ‘টেফ্লন’। ওই স্তরেই থাকে পিটিএফই। পুরনো ননস্টিক বাসন বা রং উঠে যাওয়া ননস্টিক কড়াইতে অনেকেই রান্না করেন। এতে ওই টেফ্লনের স্তরটা নষ্ট হয়ে যায়। তখন তাতে থাকা রাসায়নিক বেরিয়ে আসতে থাকে। পিটিএফই শুধু নয়, আরও এক ধরনের রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছে শুক্রাণুতে, যার নাম ‘পিএফএএস’ (পার অ্যান্ড পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল সাবস্ট্যান্স)। এটিও থাকে ননস্টিক বাসনে।
‘পিটিএফই’ হোক বা ‘পিএফএএস’, শরীরে এই রাসায়নিক ঢুকলেই হরমোনের গোলমাল শুরু হবে। পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ অনিয়মিত হয়ে যাবে। শুক্রাণুর গুণগত মান কমবে। অন্য দিকে, ডিম্বাণুর উৎপাদন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হবে। মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের তারতম্য হবে। এতে রজোনিবৃত্তি পর্ব অনেক দ্রুত এগিয়ে আসবে।