খাবার যা-ই হোক না কেন, জুড়তে হবে প্রোটিন। ঘরোয়া খাবার হোক বা কুকি, বিস্কুট! এমনকি, চিপ্সেও জুড়ছে প্রোটিন! এ ভাবেই চলছে বিজ্ঞাপনী প্রচার। সমাজমাধ্যম জুড়ে প্রোটিনের গুণকীর্তণ! উপকারী নিঃসন্দেহে, কিন্তু প্রোটিন নিয়ে মাতামাতি কোনও বাড়াবাড়ি কি?
বিশ্ব জুড়েই প্রোটিন সাপ্লিমেন্টের বাজার যে প্রসারিত হচ্ছে, তা বিশদ জানাচ্ছে আমেরিকা-ভিত্তিক বাণিজ্য সংক্রান্ত নেটমাধ্যম 'ফরচুন বিজনেস ইনসাইটস'-এর প্রতিবেদন। আবার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের তথ্য বলছে, প্রতি ১০ জন ভারতীয়ের মধ্যে ৭ জনের শরীরে দৈনিক প্রোটিন চাহিদাপূরণ হয় না।
পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলছেন, ‘‘প্রোটিন নিয়ে গবেষণা বলছে, এই উপাদান শুধু পেশি গঠনেই সাহায্য করে না, বিপাকহার, বার্ধক্য নিয়ন্ত্রণ, হরমোনের ভারসাম্য রক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রোটিন খাবার পেট ভরিয়ে রাখে। গবেষণায় উঠে এসেছে প্রোটিন ডায়েট মেদ গলাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ওবেসিটি বা স্থূলত্ব, ডায়াবিটিস যতই বাড়ছে প্রোটিনের ভূমিকা এবং গুরুত্ব বুঝতে পারছে বিশ্ব।’’
তবে প্রোটিন নিয়ে যতটা মাতামাতি, তার সবটাই সঠিক তো? পুষ্টিবিদ সিমরত কাঠুরিয়ার কথায়, তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা প্রোটিন বার (সেটি বাজারজাত হলেও) খেয়ে মনে করছেন, শরীরের জন্য ভাল হচ্ছে। প্রোটিন জরুরি, কিন্তু তা কোনও জাদু করতে পারে না, মনে করাচ্ছেন বেঙ্গালুরুর পেটের চিকিৎসক শুশ্রুত শেট্টি।
ওজন ঝরাতে প্রোটিন জরুরি। প্রাতরাশ থেকে নৈশাহার, এমনকি ছোটদের খাবারেও বাড়তি প্রোটিন কী ভাবে যুক্ত করা যায়, তা নিয়ে সমাজমাধ্যমে পরামর্শের ছড়াছড়ি। সেই প্রচারও এমন ভাবেই হচ্ছে যে, প্রোটিন বাড়লেই খাবার হবে শ্রেষ্ঠ।
আর তা দেখেই বিপদ সঙ্কেত পাচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা। তাঁরা সতর্ক করছেন, প্রোটিনও খাওয়া দরকার পরিমিত পরিমাণে, প্রয়োজন মাফিক। বেশি নয়। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। আইসিএমআর-এনআইএন-এর দেওয়া তথ্য বলছে, শরীরের ওজন অনুযায়ী কেজি প্রতি ০.৮ -১ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন প্রতি দিন খাওয়া উচিত। প্রোটিন যে খুব জরুরি, তা নিয়ে দ্বিমত নেই কারও। তবে প্রোটিন ডায়েটে নজর দিতে গিয়ে কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন এবং খনিজের পরিমাণ কমলে সমস্যা হতে পারে। তাই প্রোটিন খাবার খেলেও অন্য উপাদানগুলিকে অবহেলা করা ঠিক নয়, পরামর্শ পুষ্টিবিদদের। তবে ভারতীয়দের খাবারের পাতে অনেক সময় প্রোটিনও বাদ পড়ে যায়। কার্বোহাইড্রেটের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে পেট ভরলেও, ফাঁক থেকে যায় প্রোটিনে, বলছে আইসিএমআর-এর রিপোর্ট।
কী ভাবে হবে ঘাটতি পূরণ?
দৈনন্দিন ডাল, মাছ, মাংস, বীজ, ছোলা জাতীয় খাবার থেকেই প্রোটিনের চাহিদাপূরণ সম্ভব। বাজারচলতি প্রোটিন বার বা কুকি খেয়ে সেই ঘাটতিপূরণের পরামর্শ মোটেও দিচ্ছেন না পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকেরা। তবে সুস্থ থাকতে শুধু প্রোটিন নয়, ফাইবার, স্বাস্থ্যকর ফ্যাটও জুড়তেও বলা হচ্ছে তালিকায়। বিভিন্ন খাবারের সঠিক সমন্বয়ই সুস্থ থাকার চাবিকাঠি, বলছেন পুষ্টিবিদেরা।