মধ্য চল্লিশে দৃষ্টি আচমকা ঝাপসা হতে শুরু করলে অনেকেই ভাবেন, ক্লান্তির কারণে হচ্ছে। বাড়ির প্রবীণ মানুষটি যদি আশপাশের দৃশ্য ঠিকমতো দেখতে না পান, তা হলে ছানি ভেবে নেন অনেক ক্ষেত্রেই। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে এলে তখন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে ধরা পড়ে, কারণটা ছানি নয়, গ্লকোমা। চোখের এই অসুখের নাম শুনলেই আতঙ্ক শুরু হয়। গ্লকোমা এমন এক রোগ, যা নির্মূল করার তেমন চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও নেই। গ্লকোমার যে কোনও চিকিৎসাই জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। সে জায়গায় আশার আলো দেখাচ্ছে এক নতুন রকম লেজ়ার থেরাপি— ডায়োড লেজ়ার সাইক্লোফোটোকোঅ্যাগুলেশন। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকেরা এই থেরাপিটির আরও উন্নত পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছেন। এ দেশেও গ্লকোমার চিকিৎসায় থেরাপিটি করা হয়।
নতুন চিকিৎসাটি কেমন?
গ্লকোমা এমন এক অবস্থা, যা চোখের ভিতরে চাপ তৈরি করে ,যাকে বলা হয় ‘ইন্ট্রাঅকুলার প্রেশার’। চোখের যে অংশ দিয়ে ফ্লুইড বা তরল প্রবাহিত হয়, সেই রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে তা কোনও একটি স্থানে জমতে শুরু করে। এর ফলে অপটিক নার্ভে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়। এই চাপ বাড়তে থাকলে অপটিক স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই স্নায়ুই মস্তিষ্কে ছবি ও সঙ্কেত পাঠায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই স্নায়ু খারাপ হলে দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ চলে যেতে পারে। গ্লকোমার কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেলে বা দৃষ্টিশক্তি চলে গেলে, তা ফেরানো আর সম্ভব হয় না। তাই চিকিৎসকেরা যখন অস্ত্রোপচার করেন, তখন একটাই লক্ষ্য থাকে যে, চোখের ভিতরে তৈরি হওয়া ওই চাপকে কোনও ভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। নতুন চিকিৎসা ‘ডায়োড লেজ়ার সাইক্লোফোটোকোঅ্যাগুলেশন’ সেই কাজটিই করবে।
গ্লকোমার চিকিৎসায় আশা জাগাচ্ছে নতুন রকম লেজ়ার থেরাপি। ছবি: ফ্রিপিক।
আরও পড়ুন:
ডায়োড লেজ়ারের কাজ হল নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রশ্মি চোখের ভিতরে পাঠানো। প্রথমে রোগীর চোখের চারপাশের পেশি অবশ করার ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে। এর পরে চোখের সাদা অংশ বা স্ক্লেরার ভিতর দিয়ে লেজ়ার রশ্মি পাঠানো হবে, যা সরাসরি গিয়ে পড়বে সিলিয়ারি বডিতে। এই সিলিয়ারি বডির কাজ হল তরল তৈরি করে চোখকে আর্দ্র রাখা ও চোখের ভিতরের চাপ নিয়ন্ত্রণ করা। সিলিয়ারি বডির ভিতরে থাকে সিলিয়ারি পেশি, যা চোখের লেন্সের আকৃতি, তরল উৎপাদনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। চোখের কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করাও এর কাজ। নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের লেজ়ার রশ্মি সিলিয়ারি বডির কিছুটা অংশ নষ্ট করে দেবে। এতে সিলিয়ারি বডি থেকে অত্যধিক তরলের উৎপাদন বন্ধ হবে। ফলে চোখের ভিতরের চাপ কমবে। এতে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
ডায়োড লেজ়ারের সুবিধা কী কী?
চোখের দৃষ্টি যাঁদের ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে, তাঁরা এই চিকিৎসাটি করাতে পারেন।
ডায়োড লেজ়ার থেরাপিতে চোখ কাটাছেঁড়া করার প্রয়োজন হয় না।
মাত্র ১৫-২০ মিনিটে চিকিৎসাটি করা সম্ভব।
লেজ়ার থেরাপিতে রোগীর যন্ত্রণা কম হয়। প্রায় ব্যথাহীন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়।
লেজ়ার থেরাপি করালে রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। থেরাপির পরবর্তী জটিলতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে না।
ডায়োড লেজ়ার থেরাপির খরচ এ দেশে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার মতো। তবে লেজ়ার থেরাপির নানা ভাগ রয়েছে। রোগীর অবস্থা বুঝেই তা করা হয়। সে ক্ষেত্রে খরচ লাখের উপরেও হতে পারে।