বন্ধুদের সঙ্গে হইহুল্লোড়, পার্টি। খানিক লাগামছাড়া হয়ে গিয়ে অতিরিক্ত মদ্যপান করে ফেলেছেন। এ দিকে সকালে চোখ খুলতেই মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা, বমি বমি ভাব, খিদেবোধ নেই। আপনি আসলে সেই পরিস্থিতিতে রয়েছেন, যাকে বলা হয় ‘হ্যাংওভার’। আর হ্যাংওভারের উপসর্গগুলির জেরে গোটা দিন নষ্ট হতে পারে। কিন্তু মদ্যপানের পরের দিন সুস্থ থাকতে অনেকেই নানা রকম টোটকা প্রয়োগ করেন। কেউ অ্যান্টিসিড খেয়ে নেন, কেউ বা জল বেশি খান, কেউ আবার খাবার বুঝেশুনে খান। এমনই একটি টোটকা নিয়ে হইচই সমাজমাধ্যমে।
সম্প্রতি আমেরিকান সঙ্গীত প্রযোজক বেনি ব্লাঙ্কো হ্যাংওভার দূর করার সমাধান নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জানান, তিনি নাকি মদ্যপান করার আগে ছোট এক গ্লাস জলপাই তেল বা অলিভ অয়েল পান করে নেন। তিনিও নাকি সদ্যই আবিষ্কার করেছেন এই টোটকা। তার নেপথ্যে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, অ্যালকোহল পানের আগে অলিভ অয়েল খেলে তা পেটে একটি আস্তরণ তৈরি করে দেয়। ফলে অ্যালকোহল খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারে না। তা ছাড়া অলিভ অয়েলে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে বলে নাকি অ্যালকোহল শোষণের গতি কমে যায়। একাধিক চিকিৎসক এ নিয়ে সমাজমাধ্যমে লেখালেখি করেছেন। কেউ বলেন ভুয়ো, কেউ বলেন কার্যকরী। তার মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলসের এক অ্যানাস্থেশিয়োলজিস্ট মায়রো ফিগুরার দাবি, অলিভ অয়েল পেটে স্তর তৈরি করতে পারে কি না, বা অ্যালকোহলের শোষণ কমিয়ে দিতে পারে কি না, এ রকম কোনও প্রমাণ নেই। তবে অলিভ অয়েলে ভর্তি থাকে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য। তা হলে এই টোটকা পুরোপুরি মিথ্যে না-ও হতে পারে। কারও দাবি, যেহেতু অলিভ অয়েল হজমের গতি কমায়, তাই কিছুটা পরিমাণে অ্যালকোহল শোষণ ধীর হলেও হতে পারে।
লাগামছাড়া হয়ে গিয়ে অতিরিক্ত মদ্যপান করে ফেলেছেন? ছবি: সংগৃহীত।
কিন্তু আদৌ কি এই টোটকা হ্যাংওভার কাটাতে সক্ষম, না কি কেবলই সমাজমাধ্যমের ট্রেন্ড? উত্তর দিলেন চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদ—
গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরী প্রথমেই টোটকাটিকে নাকচ করে দিলেন। তাঁর মতে, হ্যাংওভার প্রতিরোধে জলপান, পরিমিত খাওয়াদাওয়া সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
পুষ্টিবিদ রেশমী রায়চৌধুরীও চিকিৎসকের সঙ্গে সহমত। তাঁর কথায় এই টোটকা একেবারেই ‘সমাজমাধ্যমের চমক’। তবে একই সঙ্গে রেশমী বলছেন, ‘‘এই টোটকার কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। তবে অ্যালকোহলের সঙ্গে খাবার খেলে প্রভাবটা কম পড়ে। সেটা চিরকালীন সত্য। তাতে হ্যাংওভার কমবে। এ বার যদি কেউ অলিভ অয়েল খেয়ে তার পর মদ্যপান করেন, তাতে এই তেলের ফ্যাট পেটের উপর একটি আস্তরণ তৈরি করতে পারে। এর পর অ্যালকোহল পান করলে শোষণ কম হবে। তবে যে কোনও খাবার খেলেই একই কাজ হবে। প্রোটিন জাতীয় আর ফ্যাট জাতীয় খাবার এ ক্ষেত্রে কার্যকর, যেমন অনেকে চিজ় খান এ সময়ে। উদ্দেশ্য সেই একই। শরীরে যাতে জলের ঘাটতি না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাই বেশি করে জল খাওয়া দরকার, পরিমাপ মেনে খাবার খাওয়া জরুরি। তবেই হ্যাংওভার কম হবে।’’