জল খাওয়ার সঙ্গে কি মানসিক চাপের সম্পর্ক আছে? সম্প্রতি লিভারপুল জন মুর্স ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। তা প্রকাশিত হয়েছে ‘জার্নাল অফ অ্যাপ্লায়েড ফিজ়িয়োলজি’-তে। ২০২৫ সালের অগস্টে প্রকাশিত গবেষণালব্ধ ফলই বলছে, শারীরিক এবং মানসিক— দুই ধরনের চাপ, ক্লান্তির নেপথ্য কারণই হতে পারে জলের অভাব।
আরও পড়ুন:
গবেষণার জন্য একটি সমীক্ষা করা হয়। সমীক্ষায় যাঁরা অংশ নেন, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে দৈনিক দেড় লিটার জল খেতে বলা হয়, বাকিরা খান ২ থেকে আড়াই লিটার। একই রকম পরিস্থিতির মধ্যে সকলকে রাখা হয়। অঙ্ক করা, জনসমক্ষে বক্তৃতা দেওয়ার মতো বেশ কিছু কাজ তাঁদের দেওয়া হয়। দেখা যায়, সকলের প্রতিক্রিয়া প্রায় একই রকম। তবে তফাত হয়েছে হরমোনের নিঃসরণে।
গবেষক নীল ওয়াল্শ বলছেন, ‘‘উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে কর্টিসলের। এটি স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত। এই হরমোনের প্রভাবে দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে হৃদ্রোগ, কিডনির অসুখ এবং ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।’’
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা জল কম খেয়েছেন তাঁদের শরীর কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। কর্টিসলের মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে গেলে শরীরে নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মানসিক চাপ বাড়লে, বেড়ে যেতে পারে হৃদ্স্পন্দন। ক্ষতি হতে পারে স্বাস্থ্যের।
তেষ্টাই যথেষ্ট নয়
তেষ্টা পেলে জল খাব—এমন মানসিকতাই থাকে অনেকের। কিন্তু দেখা গিয়েছে, সমীক্ষায় অংশগ্রণকারীদের মধ্যে যাঁরা কম জল খেয়েছেন তাঁদের কিন্তু তেষ্টা তেমন পায়নি। অথচ প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গিয়েছে, তাঁদের শরীর শুষ্ক। জলের অভাব রয়েছে।
এর ফলে কী হয়?
শরীরে জলাভাব ভ্যাসোপ্রেসিন নামক হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোন শরীরে জল ধরে রাখতে যেমন সাহায্য করে তেমনই, তেমনই এই পদ্ধতিগত কারণে মস্তিষ্কে চাপ পড়ে। বেড়ে যায় কর্টিসলের মাত্রা। একদিকে জল ধরে রাখার চেষ্ট, অন্য দিকে কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে, শারীরিক এবং মানসিক চাপ বাড়তে থাকে।
তা হলে কী উপায়?
শরীর ভাল রাখতে হাঁটাহাটি, ব্যায়াম, সঠিক খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত জল খাওয়া জরুরি। কোনও ব্যক্তির বয়স, ওজন, কায়িক পরিশ্রমের উপর জল কতটা খাওয়া দরকার তা নির্ভর করে। তবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের অন্তত ২ থেকে আড়াই লিটার জল খাওয়া দরকার। ক্ষেত্রবিশেষে মাত্রা বাড়তে পারে।