দেখতে যতই লোভনীয় হোক, খাবারে আর কৃত্রিম লাল রং ব্যবহার করা যাবে না। আমেরিকায় ‘রেড ৩’ নামক ওই রঙের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সে দেশের ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ)। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই লাল রঙে থাকা রাসায়নিক ক্যানসারের ঝুঁকি বহু গুণে বাড়িয়ে দিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, শিশুদের জটিল মনোরোগের কারণও হতে পারে তা। এ দেশে মহারাষ্ট্র, কর্নাটকে খাবারে কৃত্রিম রঙের ব্যবহার নিয়ে কড়াকড়ি করা হয়েছে আগেই। কবাব-সহ চিকেনের নানা পদে কৃত্রিম রং মেশাতে বারণ করা হয়েছে।
কেক-পেস্ট্রি, চকোলেট, যাবতীয় বেক্ড ও ফ্রোজেন খাবার এবং কফ সিরাপে ‘রেড ৩’ নামক কৃত্রিম লাল রংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। ‘রেড ৩’ রংটি আসলে এরিথ্রোসিন নামক একধরনের কৃত্রিম রং, যা বিভিন্ন খাবার ও পানীয়ে মেশানো হয়। কফ সিরাপেও রংটি মেশানো হত এত দিন। গবেষণাগারে ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে যদি রংটি শরীরে ঢোকে, তা হলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়বে। যে ক’টি ইঁদুরের শরীরে পরীক্ষা করা হয়েছিল, তারা সকলেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে এফডিএ।
আরও পড়ুন:
ওহায়ো ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা দীর্ঘ সময় ধরেই খাবারে ব্যবহৃত কৃত্রিম রঙের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করছেন। গবেষক এল ইউজিন আর্নল্ড দাবি করেছেন, কৃত্রিম রং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছোটদের ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজ়অর্ডার’ (এডিএইচডি) রোগের কারণ। অত্যধিক চঞ্চলতা, মনঃসংযোগের অভাব ও শিশুদের আচরণগত সমস্যা এবং ছোট থেকেই দুর্বল স্মৃতিশক্তি, বারে বারে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা এই রোগের লক্ষণ হতে পারে। আবার কখনও শিশুদের আচরণ হিংসাত্মকও হয়ে উঠতে পারে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, কৃত্রিম রঙের রাসায়নিক মস্তিষ্কের পেশি ও স্নায়ুর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। ডোপামিন হরমোনের ক্ষরণে তারতম্য ঘটায়। হাসি-কান্না, আনন্দ, বিরক্তি, রাগ, দুঃখ, অভিমান, স্মৃতিশক্তি— সবই নিয়ন্ত্রণ করে এই হরমোন। তাই এর তারতম্য হলে জটিল মানসিক বা স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।