অল্প বয়সেই ত্বক বুড়িয়ে যাচ্ছে। দামি ক্রিম, সিরাম, ময়েশ্চারাইজ়ার মেখেও কাজ হচ্ছে না। তাই ত্বকের জেল্লা, তারুণ্য ধরে রাখতে আজকাল অনেকেই ‘হরমোন থেরাপি’র সাহায্য নেন। কিন্তু হরমোন এ ক্ষেত্রে কী ভাবে কাজ করে? চিকিৎসকেরা বলছেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনের নেপথ্যে হরমোনের অনেকখানি ভূমিকা রয়েছে।
হরমোনের মাত্রা বেড়ে কিংবা কমে গেলে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, প্রজনন সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে, মনমেজাজ বিগড়ে থাকার মতো সমস্যাও অস্বাভাবিক নয়। উদ্বেগ, অবসাদ, উৎকণ্ঠা ঘিরে ধরে। আবার, এই হরমোনই গোটা শরীরের পাশাপাশি ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়াকে ত্বরান্বিত করে। ‘এন্ডোক্রাইন সোসাইটি জার্নাল’-এ এই সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। একই সঙ্গে হরমোন কী ভাবে ত্বকে বয়সের ছাপ ফেলে, আবার তারুণ্যও ধরে রাখে, সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে গবেষণায়।
আরও পড়ুন:
হরমোনের কারণে কী ভাবে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে?
অল্প বয়সে ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার নানাবিধ কারণ থাকতে পারে। বাহ্য কারণ হিসাবে পরিবেশ দূষণ, সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির কথা বলতেই হয়। আবার ত্বকে বলিরেখা পড়ার নেপথ্যে বেশ কিছু হরমোনের ভূমিকা রয়েছে। ইনসুলিনের মতোই গ্রোথ হরমোন, ইস্ট্রোজেন, মেলাটোনিনের হরমোনের হেরফেরে ত্বকের তারুণ্য উধাও হতে পারে।
কোন কোন হরমোন ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে?
১) ত্বকের টান টান ভাব বজায় রাখতে এবং ক্ষত নিরাময়ে গ্রোথ হরমোনের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। ত্বকের নিজস্ব প্রোটিন, অর্থাৎ কোলাজেন উৎপাদনের হার বাড়িয়ে তুলতেও সাহায্য করে।
২) ত্বকের আর্দ্রতা এবং ইলাস্টিসিটি বজায় রাখতে সাহায্য করে ইস্ট্রোজেন। রজোনিবৃত্তির সময়ে মহিলাদের শরীরে এই হরমোনের মাত্রা কমতে শুরু করে।
৩) ত্বকে সহজে বলিরেখা পড়তে দেয় না রেটিনল এবং ট্রেটিনোয়িন নামক দু’টি হরমোন।
৪) সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির হাত থেকে ত্বকের ক্ষয়ক্ষতি রুখে দিতে পারে মেলাটোনিন হরমোন। ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামতের কাজও করে।
৫) ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে অক্সিটোসিন। ফলে র্যাশ, ব্রণের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ভিতর থেকে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
আরও পড়ুন:
হরমোনের সমতা বজায় রাখতে গেলে কী করতে হবে?
১) অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ভিটামিন সি রয়েছে, এমন ফল খেতে পারলেও ভাল হয়। তাতে মেলাটোনিন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
২) পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এবং হরমোন উৎপাদনে জলের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতেও জল খেতে হবে।
৩) নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। শরীর সচল থাকলে তবেই স্বাভাবিক ভাবে হরমোন উৎপাদনের হার বাড়বে।
৪) হরমোনের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমোনো প্রয়োজন। রাতে অন্তত পক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা না ঘুমোলে মেলাটোনিন হরমোনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।