দিন কী ভাবে শুরু করা উচিত? চা খেয়ে, না কি কফিতে চুমুক দিয়ে? লেবু জল না কি ছাতুর শরবত? নানা মুনির নানা মত। ভাল দিক, খারাপ দিক, সব মিলিয়ে যার যাতে সুবিধা, সেটিকে বেছে নিচ্ছেন। তবে আরও ভাল টোটকার খোঁজে রয়েছেন নিশ্চয়ই? এমনই একটি সহজ কিন্তু কার্যকরী পন্থার জনপ্রিয়তা বেড়েছে আজকাল। আমলকি এবং মোরিঙ্গা বা সজনের মিশ্রণ। আমলকি এবং সজনের যে ঢের উপকারিতা, সেই বিষয়ে মা-ঠাকুরমার সন্দেহ ছিল না বললেই চলে। কিন্তু এখন অনেকাংশে আধুনিক বিজ্ঞান এর উপকারিতা মেনে নিচ্ছে। প্রতি দিন সকালে খালি পেটে এই দুয়ের মিশ্রণটি এক ঢোঁকে গিলে ফেলতে হবে। তবেই নাকি ফলাফল টের পাওয়া যাবে। অনেকেই কফি শটের সঙ্গে মিলিয়ে এটিকে আমলকি এবং মোরিঙ্গা বা সজনের শট বলছেন। গুঁড়ো করে হোক, অথবা বেটে নিয়ে নির্যাসটুকুও পান করতে পারেন।
আমলকি-মোরিঙ্গার শটের উপকারিতা কী কী?
১. কমলালেবুর তুলনায় আমলকিতে প্রায় ২০ গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে। মোরিঙ্গার মধ্যে রয়েছে আয়রন, ক্যালশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। এই দু’টিকে মিশিয়ে দিলে একটি জৈব মিশ্রণ তৈরি হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, প্রাকৃতিক ভাবে আয়রন শোষণকেও উন্নত করে। খালি পেটে পুষ্টির শোষণ সবচেয়ে ভাল ভাবে হয়। তাই সকালে সবার আগে এই শটটি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
২. আমলকি এবং সজনে, দু’টিই কোয়ারসেটিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ। এই যৌগগুলি মস্তিষ্কের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ফলে তা বার্ধক্য এবং মানসিক ক্লান্তির গতি কমাতে সক্ষম। খাদ্যাভ্যাসে এই শটটি যোগ করলে কাজে মনোনিবেশ করার ক্ষমতা বাড়ে। একাধিক সপ্তাহ ধরে এটি খাওয়ার পর অনেকেই নাকি লক্ষ করেছেন, মন-মেজাজ হালকা, ফুরফুরে, শান্ত হয়ে গিয়েছে আগের তুলনায়।
৩. সকালে খালি পেটে আমলকি ও সজনের নির্যাস শরীরে গেলে গ্যাস ও অম্বলের সমস্যা কমতে পারে। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। আমলকি গ্যাস্ট্রিক রসকে উদ্দীপিত করতে পারে এবং লিভারের এনজ়াইমগুলিকে সক্রিয় রাখে। অন্য দিকে, সজনের অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল বৈশিষ্ট্য অন্ত্রকে সুস্থ রাখে। সারা দিন যাতে গোটা পাচনতন্ত্র চাঙ্গা থাকে, সেই বন্দোবস্ত করতে পারে আমলকি ও সজনের মিশ্রণ। হজমের গণ্ডগোল থাকলে আমলকি-মোরিঙ্গা শটের উপর নির্ভর করতেই হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও উপকারী এটি।

আমলকি এবং মোরিঙ্গা বা সজনের মিশ্রণ। ছবি: সংগৃহীত।
৪. সজনে পাতার নির্যাস লিভার থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ফেলতে পারে। যাঁরা ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য এটি নাকি দারুণ পথ্য। অন্য দিকে, আমলকি গ্লুটাথিয়নের শক্তিবৃদ্ধি করে। এটি এক প্রকার শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ বার করে দিতে পারে।
৫. সজনের মধ্যে ন’টি অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা উদ্ভিজ্জ খাবারে পাওয়া যায় না বললেই চলে। সকাল সকাল এই দুয়ের মিশ্রণ পেটে পুরলে অ্যামিনো অ্যাসিডগুলি আরও ভাল ভাবে শরীরে শোষিত হতে পারে। আর এর ফলে পেশি মজবুত হতে পারে। আমলকির প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য ব্যথা এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে দিতে পারে। আপনার কি যোগাসন বা হালকা ব্যায়াম করার অভ্যাস? এই শট খাওয়ার পর থেকে হয়তো দেখবেন, শরীরের নমনীয়তা বেড়েছে এবং ক্লান্তি কমেছে।
আরও পড়ুন:
৬. ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যরক্ষায় আমলকির ব্যবহার বহু দিনের। কোলাজেন গঠন করতে পারে বলে আমলকি খেলে ত্বকে ঔজ্জ্বল্য ফেরে। তা ছাড়া ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন নিয়ন্ত্রণে আমলকির অবদান অপরিসীম। এক দিকে কোলাজেনের ফলে ত্বক টানটান হয়। অন্য দিকে ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে চুল ঝরে পড়তে পারে। সজনের জ়িঙ্ক এবং ভিটামিন এ মাথার ত্বক এবং সারা দেহের ত্বকের কোষগুলিকে পুষ্টি জোগায়।
(এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। সকালে খালিপেটে আমলকি এবং সজনের মিশ্রণ খেতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।)