মাছ খাওয়া পছন্দ নয় অনেকেরই। বাঙালি যতই মাছে-ভাতে সুখ খুঁজে পাক না কেন, এমন অনেকেই আছেন যাঁরা বলেন যে, মাছে গন্ধ লাগে। ডিম বা মাংস খেলেও মাছ ছুঁয়েও দেখেন না তাঁরা। আবার যাঁরা নিরামিষে রুচি রাখেন, তাঁদের কাছে মাছ-মাংস, সবই ব্রাত্য। সে ক্ষেত্রে রোজের পাতে যাতে পুষ্টির ঘাটতি না পড়ে, তার জন্য বিকল্প উপায় ভেবে রাখা জরুরি।
প্রাণিজ প্রোটিনের মধ্যে মাছে আছে লিন ফ্যাট। অর্থাৎ, যা সহজপাচ্য এবং শরীরের ট্রান্স ফ্যাট-মুক্ত। মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে ভিটামিন বি, আয়রন, জ়িঙ্ক, আয়োডিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সেলেনিয়ামের মতো যৌগ। তা ছাড়া মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে ওমেগা-৩ খুবই জরুরি। অসুখবিসুখের সঙ্গে লড়াই হোক বা হাড় মজবুত রাখা, হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড জরুরি। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে যে সব পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রয়োজন হয়, তার মধ্যে অন্যতম হল ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। তাই রোজের ডায়েটে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, এমন খাবার রাখারই পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা। মাছ যাঁরা খেতে ভালবাসেন না অথবা খান না, তাঁরা এই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও বাকি খনিজগুলির জোগান পেতে কী ধরনের খাবার খাবেন, তা জেনে রাখা জরুরি।
আরও পড়ুন:
মাছ না খেলে তার পরিবর্তে কী কী খেতে পারেন?
আমিষ বিকল্প
ডিম: পুষ্টিগুণের জন্যই ডিমের কদর। একটি ডিম থেকে শক্তি মেলে ৭৮ ক্যালোরি। এতে প্রোটিন থাকে ৬.৩ গ্রাম, ফ্যাট ৫.৩ গ্রাম। এ ছাড়াও এতে মেলে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। ভিটামিন বি১২, ভিটামিন এ, ফসফরাস, সেলিনিয়াম-সহ একাধিক খনিজ।
মুরগির মাংস: চিকেনে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এটি ভিটামিন বি৬, নিয়াসিন এবং সেলেনিয়ামেরও ভাল উৎস।
নিরামিষ বিকল্প
১) ভিটামিন এবং খনিজে সমৃদ্ধ আখরোট ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের অন্যতম উৎস। এতে মেলে আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড (এএলএ), যা মস্তিষ্ক এবং হার্টের জন্য উপকারী। নিয়মিত ২-৩টি ভেজানো আখরোট খেলে খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে। হার্টের অসুখের ঝুঁকি কমে। এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ় রক্তচাপ বশে রাখতে সহায়ক।
২) ডাল ও কিনোয়া মাছের পুষ্টিকর বিকল্প হতে পারে। মুগ, মসুর, ছোলা, রাজমা এবং সয়াবিনের মতো ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। কিনোয়ায় প্রায় সব ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে।
৩) মাছ না খেলে পনির বা টোফু খেতে পারেন। সয়াবিন থেকে তৈরি টোফু এবং দুধ থেকে তৈরি পনির প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের ভাল উৎস।
৪) গরম ভাতে ঘি খেতে পছন্দ করেন? ঘি-তেও প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ আছে।
৫) দুধ এবং টক দই প্রোটিন ও ক্যালশিয়ামের ভাল উৎস। এক কাপ টক দইয়ে ১৩ গ্রামের মতো প্রোটিন থাকে। এক কাপ গরুর দুধে প্রায় ৩.৪ গ্রাম প্রোটিন থাকে। আবার ১০০ গ্রাম পনিরে পাওয়া যায় প্রায় ২৩ গ্রাম প্রোটিন। ফলে প্রোটিনের উৎস হিসাবে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার অত্যন্ত উপকারী।