২৩০ কিলোগ্রাম ওজন নিয়েও বিচলিত ছিলেন না আদনান সামি। অনুরাগীরাও তাঁকে সে ভাবে দেখতেই অভ্যস্ত ছিলেন। গানের জগতে সুখ্যাতির নিরিখে তিনি তখন মধ্যগগনে। ফলে নিজের স্বাস্থ্যের বিষয়ে চিন্তার কোনও জায়গা ছিল না। যত ক্ষণ না পর্যন্ত মৃত্যুভয় তাঁর মাথায় জাঁকিয়ে বসে। তার পরই জীবনযাপনে বদল এনে ১২০ কিলোগ্রাম ওজন কমিয়ে ফেলেন আদনান। ভক্তেরা তাঁর চেহারায় আমূল বদল দেখে হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন। তার পর থেকে জল্পনা শুরু হয়, অস্ত্রোপচার করে শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি বাদ দিতে হয় আদনানকে। সম্প্রতি সে জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তিনি জানান, জীবনযাপনে বদল এনে ৬ মাসে ওজন কমিয়েছেন গায়ক।
মাত্র ৬ মাসে এই পরিমাণ ওজন কমানো সকলের পক্ষে অবশ্যই সম্ভব নয়। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং পরিকল্পনা সাকার করার অনুপ্রেরণা পাওয়াও খুব কঠিন। কেউ যদি শুরুও করে ফেলেন, তার পরও মাঝরাস্তায় ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু আদনানের মনে এত জোর কী ভাবে এল?
বাবার সঙ্গে আদনান সামি। ছবি: সংগৃহীত।
সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেপথ্য কারণ নিয়েই কথা বলেছেন সঙ্গীতশিল্পী। যা ছিল, মৃত্যুভয়। আদনানের বাবা অগ্ন্যাশয়ের (প্যানক্রিয়াস) ক্যানসারে ভুগছিলেন তখন। ২০১৬ সালে লন্ডনের একটি হাসপাতালে বাবার চিকিৎসার জন্য যান গায়ক। সেখানে তাঁরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। সমস্ত পরীক্ষার ফলাফল আসার পর চিকিৎসক আদনানকে বলেন, ‘‘আপনার সমস্ত পরীক্ষার ফলাফল বেশ দুশ্চিন্তার। আপনি যদি এ ভাবেই জীবন কাটিয়ে যান, তা হলে আমি একেবারেই অবাক হব না যদি আজ থেকে ৬ মাস পরে আপনার বাবা-মা কোনও হোটেলঘরে আপনার দেহ উদ্ধার করেন।’’
এর পরও ভীতি ধরেনি আদনানের মনে। খানিক ক্ষণের মধ্যেই সব কথা ভুলে গিয়ে বাবার সঙ্গে একটি বেকারিতে খেতে যান গায়ক। সেই দোকানের প্রায় অর্ধেক খাবার খেয়ে ফেলেন তিনি। পেস্ট্রি-সহ সব কিছু। তার পর বাবা আর থাকতে না পেরে কাঁদতে কাঁদতে ছেলেকে বলেন, ‘‘আমায় কথা দাও, তুমি আমার কবরে মাটি দেবে, আমায় যেন তোমার কবরে মাটি দিতে না হয়।’’ ঠিক সে দিন থেকে ওজন কমানোর পথে চলা শুরু আদনানের। আর কোনও দিন পিছনে ফিরে তাকাননি।
টেক্সাসের হিউস্টনের এক সুখ্যাত পুষ্টিবিদের সাহায্যে উচ্চ-প্রোটিনযুক্ত ডায়েট তৈরি করে সেটি মানতে শুরু করেন আদনান। তার ৬ মাস পর গায়ককে দেখে চিনতে পারেনি অনুরাগীমহল। কোনও ব্যারিয়াট্রিক অস্ত্রোপচার বা লাইপোসাকশন নয়, কেবল খাওয়াদাওয়ায় বদল এনে এমন কঠিন কাজকে তিনি সম্ভব করেন।