আচমকা বুকে ব্যথা! সঙ্গে একটা ব্যাখ্যাতীত অস্বস্তিবোধ! যেন বুকের উপর খুব ভারী একখানি পাথর বসিয়ে দিয়েছে কেউ। আবার কোনও কোনও ব্যথা ছুঁচ বেঁধানোর মত তীক্ষ্ণ। টনটনে তাঁর যন্ত্রণাবোধ। মুশকিল হল, এই সব উপসর্গ যেমন হার্ট অ্যাটাকের কারণে হতে পারে, তেমনই একই ধরনের ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকেও। কোনটি কিসের ব্যথা বুঝবেন কী ভাবে? কখনই বা বুঝবেন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার? এক হার্টের চিকিৎসক এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন।
দিল্লির খ্যাতনামী হার্টের চিকিৎসক রমাকান্ত পন্ডা এক পডকাস্টে বলেছেন, বুকে ব্যথা হার্ট অ্যাটাক থেকেই হচ্ছে কি না, আর তার জন্য তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন কি না তা বুঝতে হলে কয়েকটি বিষয় জানতে হবে। কারণ অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের ব্যথাকেও কেউ কেউ গ্যাসের ব্যথা ভেবে ভুল করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসা পেতে দেরি হয়ে যাবে। যা থেকে প্রাণসংশয়ও হতে পারে।
কোন কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন হার্ট অ্যাটাক?
১। রমাকান্ত জানাচ্ছেন, হার্ট অ্যাটাকের কারণে যে বুকে ব্যথা বা অস্বাস্তিবোধ হয়, তাকে বলা হয় এএমআই বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন। এমন হলে রোগী হঠাৎ তীব্র চাপ অনুভব করতে পারেন বুকের মাঝখানে। মনে হতে পারে প্রচণ্ড ভারী কিছু বসানো হচ্ছে বুকের উপরে, যা ক্রমশ আরও ভারী হয়েই চলেছে। অথবা প্রচণ্ড জোরে কিছু বেঁধে দেওয়া হচ্ছে বুকে।
২। এ ধরনের ব্যথা বুকের মাঝখানে হবে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বুকের বাঁ দিকেও হতে পারে। তবে ব্যথা ক্রমশ ছড়াবে। চোয়াল, গলা, কাঁধ, বাহু, পিঠের উপরের অংশেও ছড়াতে পারে।
৩। এর পাশাপাশি, শ্বাস নেওয়ার সমস্যা, মাথা ঘোরা, বমি হওয়া, চোখে অন্ধকার দেখার মতো সমস্যাও হতে পারে রোগীর। এমনকি, শরীর ঠান্ডা হলেও গায়ে ঘাম হতে পারে।
গ্যাসের ব্যথার সঙ্গে কোথায় পার্থক্য?
গ্যাস বা জিইআরডি-র কারণে হওয়া ব্যথার কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই। চিকিৎসক রমাকান্ত বলছেন, ‘‘সচরাচর ওই ব্যথা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছলে মনে হতে পারে খুব তীক্ষ্ণ সুচ বেঁধার মতো বা ছুরিঘাতের মতো যন্ত্রণা হচ্ছে পেটের উপরের অংশের ঠিক উপরে অথবা বুকের হাড়ের নীচের অংশে। তবে মাঝখানে নয়। কোনও একটি দিকে। এর সঙ্গে একটা জ্বালাভাব থাকতে পারে। পেটে চাপ লাগতে পারে। তবে এমনটা হলে মাথা ঘোরা, ঘাম হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায় না সচরাচর। যা হার্ট অ্যাটাকে দেখা যায়।’’
কখন হাসপাতালে নিয়ে যাবেন?
১। রমাকান্ত বলছেন, ‘‘হার্ট অ্যাটাকের কোনও একটি লক্ষণও যদি দেখা যায় তবে অবিলম্বে আপৎকালীন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। জীবনদায়ী কিছু ওষুধ হাতের কাছে রাখা উচিত। যা রোগীর জিভের নীচে রাখলে কাজ হতে পারে।’’
২। হাতের নাগালে থাকা উচিত অ্যাম্বুল্যান্সের নম্বরও। কারণ হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে উপসর্গ শুরু হওয়ার পরের ৬০ মিনিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে যদি জরুরি চিকিৎসা শুরু হয়ে যায়, তবে রোগীর বাঁচার সুযোগ অনেকটাই বেড়ে যায়।