Advertisement
E-Paper

উদ্বেগ বা অবসাদে ভুগছেন কি আপনার বাবাও? কোন লক্ষণে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন?

পড়াশোনা থেকে ঘুরতে যাওয়া, পুজোর কেনাকাটা, স্ত্রী থেকে সন্তান সকলের দায়দায়িত্ব নেন, আবদার মেটান যে মানুষটি, তিনিও কিন্তু অবসাদে ভুগতে পারেন। বাবাদের মনের খেয়াল রাখবেন কী ভাবে?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫ ১০:০৫

ছবি: সংগৃহীত।

বিশ্ব জুড়েই সমস্যার নাম অবসাদ, উদ্বেগ। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হে‌ল্‌থ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেস এবং দ্য ন্যাশনাল মেন্টাল হেল্‌থ সার্ভের যুগ্ম সমীক্ষা হয়েছিল বিগত কয়েকটি বছর ধরে। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া সমীক্ষার ফলাফল বলছে, ভারতের শহরাঞ্চলে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ২০ জনের মধ্যে এক জন অবসাদ সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন।

মানসিক চাপ, অবসাদ এবং উদ্বেগের সমস্যা কমবয়সি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক এবং বয়স্কদের মধ্যেও দেখা যায়। মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপ জানাচ্ছেন, বিভিন্ন সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গিয়েছে, পুরুষদের তুলনায় মহিলারাই বেশি অবসাদে ভোগেন। তবে পুরুষদের মানসিক চাপ, অবসাদ, উদ্বেগ যে নেই, তা কিন্তু নয়।

পরিবারের দায়দায়িত্ব, কর্মক্ষেত্রের চাপ, সম্পর্কের টানাপড়েন, পুরনো কোনও ট্রমা, অনেক কারণই থাকতে পারে অবসাদ এবং উদ্বেগের পিছনে। অনেক সময় দেখা যায়, বাড়ির পুরুষেরা চট করে মন খুলে কথা বলতে পারেন না। মহিলারা যেমন কান্নাকাটি করে মনের কষ্ট কখনও বলে ফেলেন, পুরুষেরা সচরাচর তেমনটা করেন না। তা হলে কী ভাবে বুঝবেন, তাঁর মনে কোনও গোপন কষ্ট রয়েছে? উদ্বেগের শিকার তিনি?

মনো-সমাজকর্মী বলছেন, ‘‘সাধারণ মনখারাপ আর অবসাদ আলাদা। এ ব্যাপারে এক জন মহিলা এবং পুরুষের অনুভূতিগুলো বিশেষ আলাদা হয় না, বহিঃপ্রকাশের ধরন আলাদা হতে পারে।’’

গুরুগ্রামের মনোরোগ চিকিৎসক ত্রিদিব চৌধুরী, মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপ, দু'জনেই জানাচ্ছেন, আচরণে বেশ কিছু পরিবর্তন হলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

পুরুষদের অবসাদের নেপথ্য কারণ কী হতে পারে?

পারিবারিক দায়িত্ব: পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন পুরুষকে পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিতে হবে, এই ভাবনায় বেশির ভাগ মানুষই বিশ্বাসী। আর্থিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো উপার্জন না থাকা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক ঘটিত টানাপড়েন, এমন নানা কারণ থাকতে পারে উদ্বেগের নেপথ্যে।

সামাজিক ভাবনা: পুরুষ কখনও কাঁদে না, এমন ধারণায় বদ্ধমূল হয়ে থাকা। সে ভাবনা ছিঁড়ে বেরোতে পারেন না অনেকেই। মনের কথা বলতে না পারা, অনুভূতি চেপে রাখার প্রবণতাও মানসিক চাপ বা অবসাদের কারণ হতে পারে।

কর্মক্ষেত্রের চাপ: কাজের জগতে সাফল্য না পাওয়া, উপার্জন আশানুরূপ না হওয়া, কর্মক্ষেত্রে অপমান, নিজেকে ব্যর্থ মনে হওয়া অবসাদের পিছনে থাকতে পারে।

মেজাজ খারাপ থাকে প্রায়ই? শান্ত স্বভাবের মানুষটির আচরণ আচমকা রুক্ষ হয়ে গিয়েছে। কথায় কথায় মেজাজ হারাচ্ছেন? কিংবা আচমকাই কি তিনি ভীষণ চুপচাপ হয়ে যাচ্ছেন? অন্তত দু’তিন সপ্তাহ ধরে একই রকম বদল চোখে পড়লে বুঝতে হবে, কোথাও হয়তো সমস্যা হচ্ছে।

ঘুম ঠিকমতো হয় তো! মাঝেমধ্যে দু-এক দিন ঘুম না হওয়া বিশেষ কোনও ব্যাপার নয়। কিন্তু হঠাৎ করে ঘুম কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া কিন্তু অবসাদ বা উদ্বেগের লক্ষণ হতে পারে। সারা দিন কাজে উৎসাহ না থাকলে এবং একই জিনিস দিনের পর দিন চলতে থাকলে সতর্ক হওয়া দরকার।

খিদে কমে যাওয়া: খাওয়া-দাওয়া কিছু দিন আগে পর্যন্ত ঠিকই ছিল। হঠাৎ করেই অনীহা তৈরি হয়েছে? বদহজম বা পেটের গন্ডগোলে এমনটা হতেই পারে। কিন্তু সে সব সমস্যা না থাকলে বা অস্বাস্থ্যকর খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হলে খেয়াল রাখা দরকার।

কাজে অনীহা: দৈনন্দিন কাজে কোনও উৎসাহ নেই, কাজের তাগিদ নেই, এমনটা যদি মাসখানেক চলতে থাকে তা হলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। অবসাদ বাসা বাঁধলে কোনও কাজই করতে ভাল লাগে না কারও।

শারীরিক সমস্যা: আচমকা মাথায় ব্যথা, ক্লান্তি, মেজাজ হারানো, চিৎকার চেঁচামেচি করা যদি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়, তা হলেও সাবধান হওয়া প্রয়োজন। কখনও আবার দীর্ঘ রোগযন্ত্রণাও অবসাদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

মোহিত রণদীপ বলছেন, ‘‘ বাড়ির সদস্যের মধ্যে যদি জীবন নিয়ে অনীহা তৈরি হয়, মৃত্যুর কথা বলতে থাকেন, তা হলে কিন্তু একেবারেই সময় নষ্ট করা ঠিক নয়। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।’’

কিন্তু সমস্যা হয় অন্যত্র। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাড়ির কর্তা যা বলবেন, তার উপরে কথা বলা যায় না এখনও বহু বাড়িতেই। তা ছাড়া বয়স হলে মেজাজ আরও তিরিক্ষি হয়ে ওঠে। সেই মেজাজের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে বাড়ির অন্য সদস্যেরা কখনও কখনও সেই মানুষটির সঙ্গে দূরত্বও রাখতে শুরু করেন। সেই মানুষটি যে অবসাদে রয়েছেন, তাঁর যে সাহায্য প্রয়োজন, তা বুঝলেও, কী ভাবে সমাধান হবে? মোহিতের পরামর্শ, সরাসরি মনের কথা জিজ্ঞাসা করতে না পারলেও শান্ত ভাবে তাঁর শারীরিক কুশল জিজ্ঞাসা করা যায়। ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে কথা বলে চেষ্টা করতে হবে, মনের মধ্যে কী চলছে বোঝার। সমস্যা হল, মানসিক চিকিৎসক বা মনোবিদের কাছে বাড়ির কর্তাব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া সহজ নয়। তিনি নিজে যেতে না চাইলে তা এক প্রকার অসম্ভব। বয়স্কদের মধ্যে এমন প্রবণতা লক্ষ করলে যে চিকিৎসক তাঁকে দেখেন, তাঁর কাছেই সমস্যার কথা বলা যেতে পারে, পরামর্শ মোহিত রণদীপের।

তবে মৃত্যুচিন্তা বা নিজেকে শেষ করে ফেলার মানসিকতা তৈরি হচ্ছে বোঝা গেলে দেরি না করে মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

Father's Day Mental Depression Psychiatrists Health Care Tips Mental Health Tips
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy