—প্রতীকী ছবি।
কারও মুখের দিকে তাকালেই মনে হচ্ছে, মুখটা কালো ও ঝাপসা। টিউবলাইটের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে, লাইটের মাঝখানে যেন গর্ত রয়েছে! চোখে এ রকম সমস্যা কয়েক দিন ধরেই হচ্ছে? এমনটা হলে বুঝতে হবে, সমস্যাটি রেটিনার। রেটিনার ম্যাকুলায় ছিদ্র হলে দৃষ্টিজনিত এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব, চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। দেরি হলে দৃষ্টিশক্তি হারানোর সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। বিভিন্ন কারণে রেটিনার সমস্যা দেখা দিতে পারে। মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং ডায়াবেটিক ম্যাকুলার এডিমা— রেটিনার কার্যকারিতা কমে যাওয়ার পিছনে এই কারণগুলিকেই দায়ী করেন চিকিৎসকেরা।
কর্মব্যস্ততা, ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে যে মানসিক চাপ তৈরি হয়, তার প্রভাব পড়ে ঘুমের উপর। মানসিক চাপ বাড়লেই রক্তে কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। এই হরমোনে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতার উপর প্রভাব ফেলে, এই হরমোনের প্রভাবে চোখও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের বিভিন্ন সমস্যা বাড়তে থাকে। যা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় স্বচ্ছ দৃষ্টিতে। এমনই একটি সমস্যা রেটিন্যাল ডিজেনারেশন। ডিজেনারেশন মানে ক্ষয়। এখন মানুষের আয়ু বেড়েছে। তাই শরীরের ক্ষয়জনিত সমস্যাও বেশি। যত বেশি দিন বাঁচবেন, তত ক্ষয় হবে। রেটিন্যাল ডিজেনারেশন সে রকমই একটা সমস্যা। যার সম্ভাবনা বেড়ে যায় বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে। তবে এই ক্ষয় হলেই যে অন্ধত্ব অবশ্যম্ভাবী, তা কিন্তু নয়। ঠিক সময়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকটা সারিয়ে তোলা যায়। ডায়াবেটিক ম্যাকুলার এডিমা মূলত ডায়াবেটিক রোগীদের হয়। মানসিক চাপ থেকেও রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। তাই এই রোগ ঠেকাতেও মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে।
কলকাতার গ্লোবাল আই হসপিটালের চিকিৎসক অনিরুদ্ধ মাইতি বলেন, “আমার কাছে যে রোগীরা আসেন, তার মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন কিংবা ডায়াবেটিক ম্যাকুলার এডিমার সমস্যায় ভোগেন। প্রাথমিক পর্যায়ে চোখের রোগের লক্ষণ ও উপসর্গগুলি শনাক্ত করা এবং সময় মতো চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্যা থেকে প্রতিকার পেতে মানসিক চাপ কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করা আর সময় মতো ওষুধ নিয়ে আমরা রেটিনার এই সব সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারি।’’
কী ভাবে রেটিনার সমস্যা এড়িয়ে চলবেন?
১) সবার আগে মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে হবে। এর জন্য নিয়মিত শ্বাসের ব্যায়াম, যোগাসন, ধ্যান করতে হবে। পড়াশোনা কিংবা কলেজের কাজকর্ম ছাড়াও এমন কোনও কাজে মন দিন, যা আপনার করতে ভাল লাগে। মাঝেমাঝে ঘুরতে যান, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটান।
২) রাতে বেশি ক্ষণ জেগে থাকবেন না। প্রতিদিন শরীরের সাত থেকে আট ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন। ঘুমোনোর আগে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকুন।
৩) বছরে অন্তত এক বার চক্ষু পরীক্ষা করাতেই হবে। পরীক্ষা করালেই একমাত্র রেটিনার অসুখ ধরা পড়ে। যত দ্রুত রোগ ধরা পড়বে, সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ততটাই বেশি।
৪) এ ছাড়াও খাওয়াদাওয়ার উপরেও নজর রাখতে হবে। বেশি করে মরসুমি ফল, শাকসব্জি, লিন প্রোটিন, শস্যজাতীয় খাবার ডায়েটে রাখতে হবে। ধূমপানেও রাশ টানা জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy