পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওএস হরমোনজনিত অসুখ। এখনকার সময়ে ঘরে ঘরে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পিসিওএসের কারণে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ডিম্বাশয়ে সিস্ট এমনকি এর থেকে বন্ধ্যাত্বের সমস্যাও হচ্ছে মহিলাদের। পিসিওএস হওয়ার অনেক কারণের কথাই বলেন চিকিৎসকেরা যার মধ্যে স্থূলত্ব, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন যেমন রয়েছে, তেমনই একটি বড় কারণ হল দূষণ। ‘সায়েন্স ডায়রেক্ট’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, দূষণের কারণে দেশে পিসিওএসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এই দূষণ কেবল বাতাস থেকে হবে তা নয়, প্লাস্টিকজাত সামগ্রী, রোজের ব্যবহারের কিছু পণ্য থেকেও হতে পারে।
সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, দেশে প্রতি পাঁচ জন মহিলার মধ্যে এক জন আক্রান্ত পিসিওএসে। এর অন্যতম বড় কারণই হল দূষণ। বাতাসে ভাসমান দূষিত কণা শ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকছে, সেই সঙ্গে প্লাস্টিকজাত পণ্য থেকেও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মাইক্রোপ্লাস্টিক জমা হচ্ছে রক্তে। এই সব প্লাস্টিকের কণায় থাকে ফ্যালেট, বিপিএ-র মতো রাসায়নিক। এগুলি শরীরে ঢুকেই রক্তে মিশে যায়। তার পর সোজা চলে যায় মস্তিষ্কে। ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের কোষ নষ্ট করতে শুরু করে। যার প্রভাব পড়ে শরীরের বাদবাকি অঙ্গগুলিতেও। প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিকের টিফিন বাক্স বা মাইক্রোঅয়েভে খাবার গরম করার প্লাস্টিক নির্মিত পাত্র থেকেও ছড়াতে পারে এই সব রাসায়নিক। সাম্প্রতিক নানা গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্লাস্টিকের কাপ, এমনকি চিউয়িং গামেও মিশে থাকে অতি সূক্ষ্ম প্লাস্টিকের কণা। চিবোনোর সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলি লালায় মিশে যায় ও সেখান থেকে রক্তে মিশে হরমোনের তারতম্যের কারণ হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:
প্লাস্টিকের বিপিএ ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণে বাধা দেয়। এর ফলে হরমোন ঘটিত নানা রোগ হতে পারে মহিলাদের। ইস্ট্রোজেন হরমোন মহিলাদের শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সামলায়। এর ক্ষরণে তারতম্য হলে পিসিওএসের সমস্যা কেবল নয়, বন্ধ্যাত্বের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া বাতাসে ভাসমান দূষিত কণা, কার্বন মনোক্সাইড, মিথেন, নাইট্রজেন ডাইঅক্সাইডের মতো গ্যাস শরীরে প্রদাহ বৃদ্ধি করতে পারে, যা ডিম্বাশয়ের কোষগুলির ক্ষতি করে। এর জেরে ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই প্লাস্টিকজাত সামগ্রী কমই ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পাশাপাশি, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্যকর ডায়েটের প্রয়োজন। ধূমপান যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভাল।