ফল মাত্রই উপকারী। এতে থাকে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ। শরীর ভাল রাখতে হলে খাওয়া যায় যে কোনও ফলই। তবে যদি ওজন কমাতে হয়, খেতে হয় ক্যালোরি মেপে তখন ফল নিয়েও ভাবনাচিন্তার দরকার হয় বৈকি!
কমলালেবু হোক বা আমলকি— শীত পড়ার মরসুমে দুই ফলই সহজে মেলে। দু’টি ফলেই রয়েছে ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জরুরি। তবে ওজন কমানোর জন্য যদি ফল বাছাই করতে হয়, বেছে নেবেন কোনটি? না কি কমলালেবু, আমলকি দুটোই তালিকায় রাখা যাবে?
আরও পড়ুন:
কমলালেবুর পু্ষ্টিগুণ
কমলালেবু কিন্তু মোটেই উচ্চ ক্যালোরির ফলের তালিকায় পড়ে না। রসালো হলেও একটি মাঝারি মাপের কমলালেবুতে ৬৬-৭৩ কিলোক্যালোরি মেলে, বলছেন পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক। ফলটির ৮৬ শতাংশ জল থাকে। ফাইবার থাকায় এই ফল হজমক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আচমকা রক্তে শর্করার মাত্রাও বেড়ে যায় না। শর্করা মেশে ধীরে ধীরে। ১০০ গ্রাম কমলালেবুতে কার্বোহাইড্রেট মেলে প্রায় ১৪.৮-১৬.৫ গ্রাম, ফাইবার ২.৪-২.৭ গ্রাম। এছাড়া, শর্করা ৯-১০ গ্রাম, প্রোটিন ০.৭৫-১ গ্রাম ফ্যাট ০.১-০.৩ গ্রাম, ভিটামিন সি ৪৭ - ৫৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৮০ - ১৮১ মিলিগ্রাম, ক্যালশিয়াম, ৩৩ - ৪০ মিলিগ্রাম, ফোলেট প্রায় ১৬ - ২৫.৯ মাইক্রোগ্রাম থাকে।
আমলকির পুষ্টিগুণ
আমলকিও ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর। অনন্যা জানাচ্ছেন, কাঁচা আমলকিতে ক্যালোরির মাত্রাও বেশ কম। একটি কাঁচা আমলকিতে শক্তি পাওয়া যায় ৪০-৫৮ কিলোক্যালোরি।
১০০ গ্রাম আমলকিতে ভিটামিন সি মেলে ৩০০ থেকে ৭০০ মিলিগ্রাম। কার্বোহাইড্রেট প্রায় ৮ - ১৪ গ্রাম, ডায়েটারি ফাইবার ৩ – ৪.৩ গ্রাম, প্রোটিন ০.৭৫ - ১ গ্রাম, ফ্যাট ০.১ - ০.৬ গ্রাম, পটাশিয়াম ৪০ - ১৩০ মিলিগ্রাম, ক্যালশিয়াম ২০ - ৫০ মিলিগ্রাম, লোহা ০.৩ - ১.২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.০৩ - ০.১ মিলিগ্রাম।
ওজন ঝরানোর জন্য কোন ফল ভাল?
আমলকিতে ক্যালোরির পরিমাণ সামান্য কম ঠিকই, কমলালেবুর পুষ্টিগুণ কিছু কম নয়। বরং এ নিয়ে গবেষণায় দেখা গিয়েছে ওজন কমাতে আমলকির নির্যাস বিশেষ উপকারী। লিভারের জমা ফ্যাটও গলিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে আমলকি। শুধু ওজন কমানো নয় বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখতে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতেও ছোট্ট ফলটির কার্যকারিতা অনেক।
অন্য দিকে, কমলালেবুর উরকারিতাও কম নয়। ফাইবার থাকায়, এটি খেলেও চট করে রক্তে শর্করা বাড়বে না। আমলকির মতো হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় অতটা কার্যকর না হলেও, কমলালেবু সুস্বাদু। পেট ভরাতেও সাহায্য করে।
হজমের জন্য কোনটি ভাল?
আমলকির হজম করার ক্ষমতা রয়েছে। খাওয়ার পরে সে কারণে আমলকি খাওয়ার চলে। তবে কমলালেবুও সেই তালিকায় পিছিয়ে নেই। ফাইবার থাকায় এটিও হজমে সহায়ক। কমলালেবুও পেট ভরাতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায়। আমলকি পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এবং পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে।
অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট
নানা ভাবে শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালস তৈরি হয়। এই র্যাডিক্যালস শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সেই স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। আমলকিতে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েডস, পলিফেনলের মতো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। কমলালেবুতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের মাত্রা আমলকির চেয়ে কম হলেও, এতে থাকা ভিটামিন সি এবং ফাইটোকেমিক্যালস সংক্রমণ প্রতিহত করতে সাহায্য করে।
কোন ফলের কী ভূমিকা?
কমলালেবু শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে, রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে। আমলকি ফ্যাট কমায়, বিপাকহারের গতি বৃদ্ধি করে। আমলকি লিপিড-প্রোফাইলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে, প্রদাহ কমাতেও সহায়ক। ফলে তুলনামূলক আলোচনায় ওজন কমানোর জন্য আমলকি এগিয়ে থাকবে। পুষ্টিগুণেও এই ফল কমলালেবুতে টেক্কা দেয়। তবে তার অর্থ এই নয়, ওজন কমাতে হলে কমলালেবু বাদ দিতে হবে। বরং নিয়ম করে যে কোনও ফলই খাওয়া যেতে পারে।