ডায়াবিটিস ধরা পড়লে খাওয়ার চেয়ে, না খেতে পারার তালিকাই অনেক সময় লম্বা হয়ে দাঁড়ায়। কোনটা খেলে ভাল, কোনটা খেলে কতটা ক্ষতি, তা নিয়ে প্রশ্ন, ধন্দ চলতেই থাকে। কেউ বলেন, ডায়াবিটিস হলে ভাত খাওয়া যায় না। কারও বক্তব্য, মিষ্টির যুক্ত রসালো ফলে রাশ টানতে হয়। সেই তালিকায় আরও একটি প্রশ্ন থাকে, ইডলি, দোসার মতো খাবার কি ডায়াবেটিকেরা খেতে পারেন? কারণ, ইডলি বা দোসার মিশ্রণ তৈরির জন্য চালের ব্যবহার হয়। চালে তো বটেই, ডালেও কিছুটা কার্বোহাইড্রেট থাকে।
পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলছেন, "ইডলি এবং দোসা দুই, খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি, অর্থাৎ এই খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তবে, কী ভাবে তা খাওয়া হচ্ছে, পরিমাণ কী থাকছে তার উপর নির্ভর করে এর লাভ-ক্ষতি। ডায়াবেটিকেরা ইডলি এবং দোসা খেতে পারেন, তবে মাপ বুঝে।"
ইডলি-দোসায় কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ
একটি মাঝারি মাপের ইডলিতে ৩৯ কিলোক্যালোরি থাকে। কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ ৮ গ্রাম।
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) হল একটি মানদণ্ড, যা কোনও খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কতটা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে সেই ব্যাপারে ইঙ্গিত দেয়। ইডলির জিআই ৭০-৭৭।
একটি মাঝারি দোসায় ১২০ কিলোক্যালোরি শক্তি মেলে।কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ ১৫-১৮ গ্রাম। জিআই ৭৭-৮০।
পুষ্টিবিদ জানাচ্ছেন, চাল-ডালের মিশ্রণটি মজিয়ে নিয়ে যেহেতু ইডলি বা দোসা তৈরি হয়, তাই এই খাবার থেকে ভিটামিন শোষণ তুলনামূলক ভাল হয়। সাদা ভাতের বদলে এটি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ তুলনামূলক কম বৃদ্ধি পায়। তবে তা-ও নেহাত কম নয়।
প্রোটিন এবং ফাইবার
বিউলির ডাল ব্যবহার হয় দোসা এবং ইডলি তৈরিতে। এতে প্রোটিন মেলে। তবে ডাঁটা-সহ রকমারি সব্জি সহ সম্বর ডাল এবং নারকেলের চাটনি দিয়ে ইডলি বা দোসা খেলে খাবারে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ জুড়বে। রক্তে শর্করার মাত্রা বশে রাখতে হলে, ফাইবার যোগ করা খুব জরুরি।
গ্লাইসেমিক লোড
একটি ইডলির গ্লাইসেমিক লোড ১০। তবে কেউ দুটো ইডলি বা একটি দোসা খেলে তা হয়ে যাবে দ্বিগুণ অর্থাৎ ২০। পুষ্টিবিদ বলছেন, ডায়াবিটিকদের ক্ষেত্রে জিআই লোড ১৫-র নীচে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কী ভাবে দোসা-ইডিলি হবে ডায়াবেটিক-বান্ধব
চালের বদলে মিলেট, ওটস, রাগি ব্যবহার করে দোসা বা ইডলির মিশ্রণ তৈরি করা যেতে পারে।
মশলা দোসার ক্ষেত্রে আলুর বদলে নানা রকম সব্জি যোগ করা যেতে পারে।
সম্বর এবং চাটনি ফাইবারের জোগান দেবে, বাড়তি প্রোটিন জুড়বে। বাদাম এবং নারকেলের চাটনিতে থাকবে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট।
পুষ্টিবিদ মনে করাচ্ছেন, এই দুই খাবার পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই দস্তুর।