Advertisement
E-Paper

গৌরী খানের রেস্তরাঁয় পনির বিতর্ক বহমান, আয়োডিন পরীক্ষা কি সত্যিই সঠিক?

গৌরী খানের রেস্তরাঁ ‘তরী’-তে আয়োডিন টেস্ট করে ভেজাল পনির ধরা হয়েছে বলে কথা রটেছে। তার পর থেকেই পনিরের উপর আয়োডিন ফেলে পরীক্ষা করার পদ্ধতিটি খুবই ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে। এই পদ্ধতি কি আদৌ নির্ভরযোগ্য?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:১৭
Is Iodine test is appropriate to identify Fake Paneer, what to do instead

আয়োডিন পরীক্ষা নিয়ে হইচই হচ্ছে, ভেজাল পনির চিনতে এই টেস্ট কি সত্যিই নির্ভরযোগ্য? —ফাইল চিত্র।

শাহরুখ-পত্নী গৌরী খানের রেস্তরাঁ ‘তরী’-তে ভেজাল পনির খাওয়ানো হচ্ছে, এমন অভিযোগ উঠেছে কিছু দিন আগেই। বিষয়টি নিয়ে বেশ হইচই হচ্ছে। উত্তেজনার কারণটা ভেজাল পনির নয়। কারণ, এমন পনির পাড়ার অনেক দোকানেই বিক্রি হয়। যে বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে, তা হল ভেজাল পনির চেনার একটি পদ্ধতি। জনৈক ফুড ব্লগার গৌরীর রেস্তরাঁয় বসে রান্না পনিরের উপর কয়েক ফোঁটা আয়োডিন ফেলে দেখিয়েছেন, পনিরের রং কী ভাবে কালো হয়ে গিয়েছে। তাই দিয়েই তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, আয়োডিন পরীক্ষাতেই চেনা সম্ভব পনির আসল না কি নকল। সাধারণ মানুষজনও হোটেল-রেস্তরাঁর খেতে গিয়ে বা বাড়িতে কিনে আনা পনির সে ভাবে পরীক্ষা করে দেখে নিতে পারেন। এখন কথা হল, ভেজাল পনির চিহ্নিত করতে আয়োডিন পরীক্ষা কি সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য?

কেন্দ্রীয় খাদ্য নিয়ামক সংস্থা বা এফএসএসএআই (ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) খাদ্যে ভেজাল ধরার নানা রকম পদ্ধতি তাদের তালিকায় লিখেছে। সেখানে ভেজাল পনির চেনার জন্য আয়োডিন পরীক্ষার কথাও লেখা আছে। এখন কথা হল, এই পরীক্ষাটিকে সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য বলে মানতে চাইছেন না অনেক পুষ্টিবিদ, খাদ্য পরিদর্শকেরা। কেন, সে কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তাঁরা।

আয়োডিন টেস্ট কী ভাবে কাজ করে?

আয়োডিন টেস্ট হল স্টার্চ চেনার একটি পদ্ধতি। এই বিষয়ে এফএসএসএআই-এর নির্দেশিকায় লেখা আছে, যে খাবারটি পরীক্ষা করা হবে তার উপরে কয়েক ফোঁটা আয়োডিন দ্রবণ ফেলতে হবে। যদি খাবারের রং বদলে কালো বা নীলচে হয়ে যায়, তা হলে বুঝতে হবে তাতে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ আছে। সেই খাবারে চিনির মাত্রাও বেশি। রাসায়নিক ফর্মুলা অনুযায়ী আয়োডিনের দ্রবণে থাকে আয়োডিন ও পটাশিয়াম আয়োডাইড। এর সঙ্গে স্টার্চের বিক্রিয়া হলে, স্টার্চের মধ্যে থাকা পলিস্যাকারাইড (গ্লুকোজ়ের একটি ইউনিট)-এর গঠন বদলে যায়। তখন রঙেও পরিবর্তন আসে। কালচে বা নীলচে রং তৈরি হয়, যা দেখে স্টার্চের আধিক্য বোঝা যায়।

খাদ্য পরিদর্শক ও বিজ্ঞানী সোনালি সিংহ জানিয়েছেন, লো-ফ্যাট পনিরের গড়ন ঠিক রাখতে তার উপর স্টার্চের পরত দেওয়া হয় অনেক জায়গাতেই। এই স্টার্চ ক্ষতিকর নয়। এমন পরত চিজ়েও দেওয়া হয়। কাজেই এর উপর আয়োডিন ফেললে তার রং বদলে যাবেই। তার মানে এই নয় যে, পনিরটিতে ভেজাল মেশানো আছে। পনিরে এমন আরও অনেক উপাদান থাকে যা আয়োডিনের সংস্পর্শে এলে রং বদলাতে পারে। যেমন—

১) প্রি-জিলেটিনাইজ়ড স্টার্চ: শুকনো খাবার, কাস্টার্ডে এমন উপাদান মেশানো হয় যাতে খাবারের ঘনত্ব বাড়ে। লো-ফ্যাট পনিরে দুধের ক্রিম বা ফ্যাট বার করে নেওয়া হয়। তার পর তা কাটিয়ে পনির তৈরি হয়। ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড আইন অনুযায়ী, দুধ কাটার পরে যে অংশ পড়ে থাকে, তাতে ৬০ শতাংশ জল এবং ৪০ শতাংশ দুগ্ধজাত ‘টোটাল সলিড’ থাকা বাধ্যতামূলক। ওই দুগ্ধজাত সলিডের মধ্যে আবার ৫০ শতাংশ ফ্যাট থাকতেই হবে। যদি পনিরে তার চেয়ে কম ফ্যাট থাকে, তা হলে স্টার্চ মিশিয়ে তার ঘনত্ব বাড়ানো হয়। বেশির ভাগ লো-ফ্যাট পনির এমনই থাকে। তাই আয়োডিন পরীক্ষায় ভেজাল ধরা সম্ভব নয়।

২) সোডিয়াম অ্যালজিনেট: পনির দীর্ঘ সময় তাজা রাখতে ও জীবাণু সংক্রমণ ঠেকাতে সোডিয়াম অ্যালজিনেট মেশানো হয়, যা আয়োডিনের সংস্পর্শে এলে রং বদল করে।

৩) কার্বোক্সিমিথাইল সেলুলোজ়: পনিরের গড়ন ও স্বাদ ঠিক রাখতে এই উপাদানটি মেশানো হয়। এতে পনির নরম স্পঞ্জের মতো থাকে। এই উপাদানটিও আয়োডিনের সংস্পর্শে এলে কালচে বা নীল রঙে বদলে যাবে।

ভেজাল পনির ধরতে আয়োডিন পরীক্ষাই একমাত্র উপায় নয়, এমনই মত পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীরও। তিনি জানান, ভেজাল পনিরের ওজন, রং ও গন্ধ আলাদা হয়, যা চেনার আরও উপায় আছে। সাধারণ মানুষ তো আর হাতে আয়োডিন নিয়ে রেস্তরাঁয় খেতে যাবেন না, বা বাড়িতেও রাখবেন না। বড় বড় হোটেল-রেস্তরাঁ কেন, পাড়ার দোকানের প্যাকেটবন্দি পনিরেও ভেজাল থাকতে পারে। দুধ কাটানোর জন্য কী ধরনের অ্যাসিড ব্যবহার করা হচ্ছে, তা-ও দেখা গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া ভেজাল পনিরে কাপড় কাচার সাবান, ইউরিয়া ও এমন কিছু রাসায়নিক মেশানো থাকে যা আয়োডিন পরীক্ষায় ধরা পড়ে না। তা হলে উপায় কী?

সাধারণত গবেষণাগারে পরীক্ষা করলেই বোঝা যাবে পনিরে কী কী ভেজাল রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের জন্য এফএসএসএআই-এর একটি নির্দেশিকা আছে যা থেকে পনির আসল না নকল তা কিছুটা হলেও বোঝা যেতে পারে—

১) বাড়িতে বানানো পনির বা মিষ্টির দোকান থেকে যে পনির কিনবেন, সেটা একদম নরম হবে। রান্নার পরেও পনির তেমনই তুলতুলে নরম থাকবে। কিন্তু ভেজাল থাকলে সেটা অনেকটা রবারের মতো হবে। দেখবেন, পনির রান্নার সময়েই শক্ত হয়ে গিয়েছে।

২) পনিরের একটা ছোট টুকরো কেটে নিয়ে জলে ফুটতে দিন। এ বারে ঠান্ডা করে তাতে সামান্য অড়হড় ডাল মেশান। মিশ্রণটি লাল হয়ে এলে বুঝবেন, পনিরটি খাঁটি নয়।

৩) খাঁটি পনিরের একটা গন্ধ থাকে। খেয়াল করে দেখবেন, যে পনির কিনছেন তাতে গন্ধ রয়েছে কি না। যদি দেখেন কোনও গন্ধই নেই, তা হলে বুঝতে হবে সে পনির খাঁটি নয়।

food adulteration Food Safety
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy