Advertisement
E-Paper

টাটকা নয়, উপকার বেশি বাসি ভাতে? সত্যি কি তাই? কী এমন বদল হয় এতে?

টাটকা ভাত খাওয়াই স্বাস্থ্যকর বলে সকলে জানেন। কিন্তু বাসি ভাতের এত গুণ? চিরাচরিত ভাবনা কি তবে বদলের পালা?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ১১:০৬
বাসি ভাত টাটকা ভাতের চেয়ে বেশি উপকারী?

বাসি ভাত টাটকা ভাতের চেয়ে বেশি উপকারী? ছবি: সংগৃহীত।

বেঁচে যাওয়া ভাত এবং রুটি পর দিন খাওয়ার চল আছে বহু বাড়িতেই। কেউ ভাতে জল ঢেলে পান্তা করে খান। কেউ আবার তা ফ্রিজে রেখে দেন। খাওয়ার আগে ভাল করে গরম করে নিলেই হল, মনেই হয় না তা বাসি ভাত।

বাড়তি ভাত ফেলে দিতে কষ্ট হয় বলেই অনেকে বাসি খান। কেউ আবার সকালের তাড়াহুড়োয় রান্নার ঝামেলা এড়াতে ফ্রিজে ভাত রেখে দেন। তা গরম করে খান।তবে যে কারণেই বাসি ভাত খাওয়া হোক না কেন, তাতে উপকারিতা যথেষ্ট, এমনটাই বলছেন পুষ্টিবিদেরা। তার কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ফ্রিজে রাখা ভাত যখন গরম করা হয়, স্টার্চ পরিণত হয় রেজ়িস্ট্যান্ট স্টার্চে। এই রেজ়িস্ট্যান্ট স্টার্চ রক্তে শর্করার মাত্রা তুলনামূলক কমাতে, পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে।

‘পাবমেড’ জার্নালে প্রকাশিত ২০১৫ সালের গবেষণালব্ধ তথ্যে প্রকাশ, ভাত ফ্রিজে রেখে দিলে এতে রেজ়িস্ট্যান্স স্টার্চের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। পরীক্ষার জন্য কিছুটা রান্না করা ভাত ১০ ঘণ্টা ঘরের তাপমাত্রায় রেখে দেওয়া হয়। আর রান্না করা বাকি ভাত ফ্রিজে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে ঠান্ডা করা হয়। তারপর তা ফের গরম করা হয়। দেখা যায়, ফ্রিজে রাখা ভাতে রেজ়িস্ট্যান্ট স্টার্চের মাত্রা অনেক বেশি।

কী লাভ হয় এতে?

· এটি স্টার্চকে দ্রুত চিনিতে পরিণত হতে বাধা দেয়।

· শর্ট চেন ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে, ভাল ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

· শর্ট চেন ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে তৈরি হয় ব্যুটিরেট নামে এক ধরনের উপাদান, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখে।

কলকাতার পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলছেন, ‘‘ফ্রিজে রাখার পর সেই ভাত গরম করে খেলে এতে রেজ়িস্ট্যান্ট স্টার্চের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তার ফলে খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হয়। ওজন কমাতেও তা সহায়ক ।’’ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স একটি সূচক বা স্কেল যা নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা নির্ধারণ করে। কোনও খাবারের জিআই ইনডেক্স বেশি হওয়ার অর্থ, সেটি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। এ ক্ষেত্রে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কমে যায়।

ফ্রিজে রাখা বাসি ভাত শুধু ডায়াবিটিকদের জন্য ভাল নয়, তা হজমেও সহায়ক। পেটের স্বাস্থ্য ভাল থাকে এতে।

আর কী লাভ বাসি ভাতে?

ফ্রিজে রেখে যেমন অনেকে ভাত খান, কেউ আবার রাতভর জল ঢেলে রাখেন। এতে ভাত মজে যায়, তৈরি হয় পান্তা। পান্তা ভাতের উপকারিতা কম নয়। পান্তা ভাতে ডায়েটরি ফাইবার বেশি থাকে। ফলে পেট পরিষ্কারে তা সাহায্য করে। অন্য দিকে, পান্তা ভাত পেট ঠান্ডা রাখে। অন্ত্রে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যাও বৃদ্ধি করে।

মজে যাওয়া ভাত পুষ্টিগুণ শোষণেও সহায়ক। আয়রন, ক্যালশিয়াম, জ়িঙ্কের মতো খনিজ শোষণে তা সাহায্য করে। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে ভাত ১২ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে ফারমেন্ট করলে বা মজিয়ে নিলে তাতে খনিজের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তা হলে কি টাটকা ছেড়ে বাসি ভাত খাবেন?

টাটকা খাবার খাওয়ার সঙ্গে এর কোনও বিরোধ নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বাসি খাবার কী ভাবে রাখা হচ্ছে। সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করতে না পারলে তা থেকে পেটের অসুখ হতে পারে। ফ্রিজে ভাত রাখতে হলে তা বায়ুনিরোধী কৌটোয় রাখুন। একটি কৌটো থেকে বার বার ভাত বার করা ঠিক নয়। ফ্রিজে রাখা ভাত টকে গেলে ফেলে দেওয়াই ভাল।একই যুক্তি পান্তাভাতের ক্ষেত্রেও। কী ভাবে তা রাখা হচ্ছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। পান্তা ভাত মজে যায় বলে কিছুটা টক স্বাদের হয়। তবে সেটিও বুঝেশুনে খাওয়া প্রয়োজন। পচা গন্ধ বেরোলে না খাওয়াই ভাল।

পুষ্টিবিদ মনে করাচ্ছেন, শুধু বাসি ভাত খেলেই উপকার হবে তেমনটা নয়। কারণ, রক্তে শর্করার মাত্রা বা ওজন কমা একটি উপাদানের উপর নির্ভরশীল নয়। ভাতের সঙ্গে আর কী খাওয়া হচ্ছে, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। উপকারিতা রয়েছে বলে নিয়মিত বাসি ভাতই খেতে হবে তা নয়।

Stale Rice Benefits Health Tips
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy