শরীরে আয়রনের ঘাটতি। তা থেকে রক্ত কমে যাওয়া। ভারতে এমন অসুখ আজও চিন্তার। ‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে’-র রিপোর্ট বলছে, ৬৭.১ শতাংশ শিশু, ৫৯.১ শতাংশ বয়সন্ধিতে থাকা মেয়ে রক্তাল্পতার শিকার। স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের একটি রিপোর্ট বলছে, পরিস্থিতির মোকাবিলায়, ২০২৪-২৫ সালে ১৫.৪ কোটি শিশু এবং কৈশোরের দোরগোড়ায় পৌঁছনো মেয়েকে ফোলিক অ্যাসিড এবং আয়রন ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে।
ঘরে ঘরেই এমন সমস্যায় ভোগেন শিশু থেকে বিভিন্ন বয়সের মহিলারা। দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়া, মাথা ধরা, দুর্বলতা— এগুলি সবই রক্তাল্পতার লক্ষণ। আয়রনের ঘাটতি দূর করতে চিকিৎসকেরা ট্যাবলেট, ভিটামিনও দেন। তবে এমন সমস্যার সমাধানে মা-ঠাকুরমাদের টোটকা হল কুলেখাড়া পাতা। শাক হিসাবে এই পাতা খাওয়ার চল। অনেকে কুলেখাড়ার রসও খান।
আয়রনের উৎস হিসাবে কুলেখাড়ার খ্যাতি আছে, কিন্তু এখনও গ্রামের এই সহজলভ্য, সস্তা বিস্ময়-গাছটির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে তেমন ওয়াকিবহাল নন অনেকেই। ১০০ গ্রাম কুলেখাড়ায় মেলে ৭.০৩ মিলিগ্রাম আয়রন। শুধু তা-ই নয়, কুলেখাড়ায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, পটাশিয়াম, বিটা ক্যারোটিন, রাইবোফ্লেভিন, ক্যালশিয়ামের মতো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। খাদ্যগুণে পালং, কলমি বা মেথিশাককেও টেক্কা দিতে পারে কুলেখাড়া।
কুলেখাড়ার গুণ অনেক বলছেন পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক। শুধু রক্তাল্পতা দূর করতেই নয়, শরীর ভাল রাখার অনের গুণই আছে এতে।
রক্তাল্পতা হওয়ার নেপথ্যে আয়রনের ঘাটতি থাকে। রক্তাল্পতা হলেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাকে আয়রনের অভাবজনিত কারণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়। শুধু আয়রন ডেফিসিয়েন্সি থেকেই অ্যানিমিয়া হয়, এমন নয়। রক্তাল্পতা একটি উপসর্গ মাত্র। নানা রোগের কারণে অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে।
আয়রনে পূর্ণ
আয়রনের ঘাটতি হলে সেই অভাব পূরণ করতে পারে কুলেখাড়া, মত পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিকের। তিনি বলছেন, ‘‘উচ্চ মাত্রায় আয়রন থাকার জন্য রক্তাল্পতা হলে কুলেখাড়া খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে রক্তে আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধির সহজ উপায় এই শাক খাওয়া।’’
লিভার ভাল রাখে
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর কুলেখাড়া পাতায় লিভার ভাল রাখার পুষ্টিগুণ রয়েছে। মূলত যকৃত বা লিভার থেকে দূষিত পদার্থ বার করতে এই পাতা কার্যকর। হজমে সহায়ক পিত্তরস উৎপাদনেও কুলেখাড়া কাজে আসে।
প্রদাহনাশক উপাদান
ফ্ল্যাভোনয়েডস, অ্যালকালয়েডস, ফেনোলিকস-এর মতো উপাদান মেলে এতে, যা প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে। প্রদাহ শরীরের কোষ, কলার ক্ষতি করে।
হজমে সহায়ক
কুলেখাড়ায় ফাইবার থাকে, যা পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। খাবার হজম এবং সুস্থ থাকার জন্যও ফাইবারের প্রয়োজন হয়।
রোগ প্রতিরোধক
অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ভিটামিন সি থাকায় এটি রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। এতে থাকা নানা রকম খনিজ শরীর ভাল রাখতে সাহায্য করে।
পুষ্টিবিদ গুলনাজ় শেখ জানাচ্ছেন, এই পাতার উপকারিতা পেতে হলে জলে ফুটিয়ে, সেই জল খাওয়া ভাল। আমলকি, পাতিলেবু কুলেখাড়ার সঙ্গে খেলেও ভাল। কারণ, ভিটামিন সি আয়রন শোষণে সহায়ক।
কুলেখাড়ার পুষ্টিগুণ নিয়ে যে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে, তা নয়। তবুও রক্তবৃদ্ধির প্রাকৃতিক ওষুধ হিসাবে এই পাতার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।