দেখতে সাদা বলের মতো। বছর কয়েক পিছিয়ে গেলেও যে খাদ্যদ্রব্যটির নাম অনেকেই জানতেন না, সেই মাখানাই এখন জায়গা করে নিয়েছে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষজনের হেঁশেলে। সন্ধ্যায় মুচমুচে কিছু খেতে ইচ্ছে করছে? তেলেভাজা, চানাচুর নয়, বরং পুষ্টিবিদেরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন কম ক্যালোরির, ফাইবার, খনিজে সমৃদ্ধ মাখানা অল্প ঘিয়ে নেড়েচেড়ে খাওয়ার।
সম্প্রতি বাজেট পেশের সময় কেন্দ্রীয় সরকারও মাখানা উৎপাদনে বিশেষ উৎসাহ দেখিয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে মাখানা চাষিদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ বোর্ড গড়ার কথাও ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
স্ন্যাক্স হিসাবে মাখানা খাওয়ার চল শুরু হয়েছে। কিন্তু সকালের জলখাবারে কি বাজারচলতি সিরিয়ালের বদলে দুধে ভিজিয়ে মাখানা খাওয়া যায়? এতে কি বাড়তি পুষ্টিগুণও মিলবে?
তবে তার আগে জানা প্রয়োজন, মাখানা আসলে কী। এটি হল পদ্মফুলের বীজ। ইংরেজিতে বলা হয় 'ফক্স নাট'। পদ্মের বীজ সংগ্রহ করে ধুয়ে, প্রক্রিয়াকরণের পর, খোসা ছাড়িয়ে তা প্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হয়।
ফাইবার, প্রোটিন, প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ— সবই মেলে এতে। যাঁরা ওজন কমাতে চাইছেন, তাঁরাও নিশ্চিন্তে খাবারটি রাখতে পারেন ডায়েটে। অন্য দিকে, সুষম খাবারের তালিকায় পড়ে দুধ। ভিটামিন এ, ডি, ক্যালশিয়াম, ম্যাগমেশিয়াম, পটাশিয়ামে ভরপুর এই পানীয়। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, দুধে মাখানা ভিজিয়ে খেলে দুই উপাদানের পুষ্টিগুণই মিলেমিশে যাবে। পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ভিটামিন, খনিজ থাকায় মাখানা খুবই পুষ্টিকর। শরীর ভাল রাখার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। ঘিয়ে ভেজে যেমন মাখানা খাওয়া যায় তেমনই দুধে ভিজিয়েও খেতে পারেন এটি। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্য ভাল। হার্টের রোগীরাও স্বচ্ছন্দে খেতে পারেন।’’
দুধ-মাখানার উপকারিতা
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: মাখানায় রয়েছে প্রচুর ফাইবার। যা পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে, হজমে সাহায্য করে। ওজন কমাতে গেলে ভাল মানের ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরাও। এ ছাড়া, এতে প্রোটিন, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম রয়েছেই। পাশাপাশি, দুধে মেলে ভিটামিন এ, ডি। মাখানায় ক্যালোরির পরিমাণ কম। ফলে দুধ এবং মাখানা খেলে তা ওজন বশে রাখতেও সাহায্য করবে। দুধ যে হেতু তরল, তাই শরীরে জলের অভাবও কিছুটা হলে পূরণ হবে।
হাড় মজবুত রাখে: দুধ এবং মাখানা— দুইয়ে মেলে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম। দুধে থাকা ভিটামিন ডি হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। ফলে সকালের জলখাবারের তালিকায় দুধ, মাখানা রাখলে হাড়ের ক্ষয় রোধ করা সম্ভব হবে।
কারা, কী ভাবে কতটা খেতে পারবেন?
সকালের জলখাবারে যেমন দুধে ভিজিয়ে মাখানা খাওয়া যাবে, তেমনই স্ন্যাক্স হিসাবে ঘিয়ে ভেজে খেতেও কোনও অসুবিধা নেই। সিরিয়ালের বদলে এই বীজ রাখা যেতেই পারে জলখাবারে। উপকারিতার কথা ভাবলে তাতে যোগ করা যাবে না চিনি। পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘যে কোনও সুস্থ মানুষই দিনে ৩০-৫০ গ্রাম মাখানা খেতে পারেন। তবে কোনও অসুস্থতা থাকলে, যেমন কোনও খাবারই হজম হচ্ছে না, এমন লক্ষণ দেখা দিলে দুধ-মাখানা এড়িয়ে চলাই ভাল। কারও শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকলে মাখানা খাওয়া যাবে না। কিডনির সমস্যা থাকলেও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মাখানা খাওয়া ঠিক নয়।’’