রাত হলেই বার বার বাথরুমে ছুটে যাওয়া। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার পরেও ঘন ঘন মূত্রনালির সংক্রমণ। বয়সকালে এমন সমস্যা ভোগায়। অনেকেই বিশেষ আমল দেন না, কিন্তু সমস্যা ক্রমশ বেড়ে গেলে আচমকা বিপদের সম্ভাবনা থাকে। প্রস্টেটের অসুখ পুষে রাখতে নিষেধই করেন চিকিৎসকেরা। এমনিও বয়স হলে রক্তে শর্করার মাত্রার হেরফের হতে থাকে, রক্তচাপও ওঠানামা করে। তাই অসুখবিসুখ বাসা বাঁধার আগে কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা অবশ্যই করিয়ে নেওয়া জরুরি।
পুরুষদের মূত্রথলির নীচে প্রস্টেট গ্ল্যান্ড রয়েছে। ওই গ্ল্যান্ড থেকে হরমোন নির্গত হয়। হরমোনের গোলমাল হলে মূত্রনালিতে সমস্যা হয়। ফলে বারে বারেই মূত্রনালির সংক্রমণ বা ইউটিআই হয়। এই বিষয়ে ইউরোলজিস্ট কুমার গৌরব জানিয়েছেন, বয়স পঞ্চাশ পার হলেই প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে সমস্যা দেখা দেয় অনেকের। যেমন প্রস্রাবের সময়ে জ্বালাযন্ত্রণা হতে পারে, বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বার হতে পারে, প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের আকার অস্বাভাবিক বড় হয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে প্রস্টেটে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে। ইদানীং কালে প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এর কারণই হল সঠিক সময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করানো। ফলে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজন শুরু হয়েছে কি না, তা ঠিকমতো বোঝা যায় না। যখন ধরা পড়ে, তখন ক্যানসার অন্তিম পর্বে পৌঁছে যায়। তাই আগে থেকেই সতর্ক হওয়া জরুরি।
বাড়ির বয়স্কদের কী কী স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে রাখবেন?
হিস্টোপ্যাথোলজিক্যাল টেস্ট
এই পরীক্ষাটি এক ধরনের আলট্রাসোনোগ্রাফি। একে বলা হয় ট্রান্স-রেক্টাল আন্ডার সাউন্ড (ট্রাস)টেস্ট। এ ক্ষেত্রে প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের মাপ দেখা হয়। সেটির আকার বড় হতে শুরু করলে সেখান থেকে কোষের নমুনা নিয়ে তা বায়োপসি করে দেখা হয়, কোষের অনিয়মিত বিভাজন শুরু হয়েছে কি না।
ইউরোফ্লোমেট্রি
একটি যন্ত্রে পরীক্ষাটি করা হয়। প্রস্রাবের বেগ পরীক্ষা করা হয় যন্ত্রটিতে। এতে কোনও রকম সংক্রমণ হচ্ছে কি না, তা ধরা পড়ে।
ইউরিন কালচার টেস্ট
প্রস্রাবের নমুনা নিয়ে গবেষণগারে পরীক্ষা করা হয়। প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হয়, তাতে ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটেছে কি না। এর থেকে বোঝা যায়, মূত্রনালির সংক্রমণ কেন বারে বারে ঘটছে। টেস্ট রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, কোন ওষুধগুলি সংক্রমণ নির্মূল করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর হবে।
আরও পড়ুন:
পিএসএ টেস্ট
রাত হলেই বার বার বাথরুমে ছুটে যাওয়া। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার পরেও ঘন ঘন মূত্রনালির সংক্রমণ। বয়সকালে এমন সমস্যা ভোগায়। অনেকেই বিশেষ আমল দেন না, কিন্তু সমস্যা ক্রমশ বেড়ে গেলে আচমকা বিপদের সম্ভাবনা থাকে। প্রস্টেটের অসুখ পুষে রাখতে নিষেধই করেন চিকিৎসকেরা। এমনিও বয়স হলে রক্তে শর্করার মাত্রার হেরফের হতে থাকে, রক্তচাপও ওঠানামা করে। তাই অসুখবিসুখ বাসা বাঁধার আগে কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা অবশ্যই করিয়ে নেওয়া জরুরি।
কিডনি ফাংশন টেস্ট
কিডনিতে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এর থেকে বোঝা যায়, কিডনির অসুখ হওয়ার ঝুঁকি আছে কি না।
পিভিআর টেস্ট
প্রস্টেট ক্যানসার চিহ্নিত করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হল পিএসএ বা ‘প্রস্টেট-স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন টেস্ট’। বয়স্কদের প্রস্টেটের যে কোনও সমস্যা বা সংক্রমণজনিত রোগ হলে এই পরীক্ষাটি করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। পরীক্ষাটিতে পিএসএ অ্য়ান্টিজেনের মাত্রা দেখা হয়। অ্যান্টিজেনের মাত্রা প্রতি মিলিলিটার রক্তে যদি ৪.০ ন্যানোগ্রামের বেশি হয়, তা হলে অস্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে বায়োপসি করে দেখা হয়, কোষের অনিয়মিত বিভাজন হচ্ছে কি না বা ক্যানসার কোষ কত দূর অবধি ছড়িয়েছে।
কিডনি ফাংশন টেস্ট
কিডনিতে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এর থেকে বোঝা যায়, কিডনির অসুখ হওয়ার ঝুঁকি আছে কি না।
পিভিআর টেস্ট
প্রস্রাব করার পরেও মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি হচ্ছে কি না বা সেখানে প্রস্রাব জমে আছে কি না, তা জানতে এই পরীক্ষাটি করা হয়। এর নাম পোস্ট-ভয়েড রেসিডুয়াল ইউরিন ভলিউম টেস্ট। পিভিআরের স্বাভাবিক মাত্রা ১০০ মিলিলিটারের নীচে থাকে। এর থেকে বেশি হলে তা চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে।