হার্ট অ্যাটাক মানেই আতঙ্ক। হৃদ্রোগে কী কী উপসর্গ দেখা দিতে পারে তার একটা ধারণা অনেকেরই আছে। যেমন, আচমকা বুকে ব্যথা, সারা শরীরে ঘাম, তার পরেই চোখের সামনে সব অন্ধকার। কিন্তু জেনে রাখা ভাল, হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ সকলের ক্ষেত্রে সমান নয়। বিশেষ করে পুরুষদের শরীরে যে যে লক্ষণ ফুটে উঠবে, মহিলাদের ক্ষেত্রে তেমনটা না-ও হতে পারে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, মহিলাদের হৃদ্রোগের লক্ষণ অনেকটাই আলাদা। বিশেষ করে হার্ট অ্যাটাক জানান দিয়ে আসে না। নিঃশব্দ ঘাতক বা ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’ শরীরে থাবা বসানোর আগে তার কিছু বিশেষ লক্ষণ জেনে রাখা জরুরি।
অত্যধিক শারীরিক পরিশ্রম, ঠিকমতো পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম বড় কারণ বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। রজোনিবৃত্তির পরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমতে থাকে। এই হরমোনই শরীরের অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি নিয়ন্ত্রণ করে। কাজেই রজোনিবৃত্তি পর্বে শরীরের যে যত্ন নিতে হয়, তা-ও নেন না অনেক মহিলাই, ফলে চুপিসারে শরীরে বাসা বাঁধে হৃদ্রোগ।
মহিলারা কোন কোন লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন?
প্রচণ্ড ক্লান্তি ভাব। রাতে ঘুমিয়েও সকালে ক্লান্তি যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরেও ঝিমুনি আসছে, এমন লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে। দিনের পর দিন যদি ক্লান্তি ভাব বাড়তেই থাকে তা হলে সবার আগে ইসিজি করিয়ে নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন:
হৃদ্রোগ মানে যে কেবল বুকে ব্যথা হবে তা নয়। নীরব হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে শরীরের আরও কিছু জায়গায় ব্যথা হয়, যেমন হাত, পিঠ, গলা, কোমর ও চোয়াল। এই সব জায়গায় ব্যথা হলে অনেকেই পেশির ব্যথা ভেবে এড়িয়ে যান। বিশেষ করে মহিলাদের কাঁধ, চোয়াল ও হাতে ব্যথা হতে পারে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হল শ্বাসকষ্ট। বুকে ব্যথা হবে না, কিন্তু শ্বাস নিতে গেলে বুকে লাগবে। সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা বা জ্বর না থাকা সত্ত্বেও শ্বাসের সমস্যা হতে থাকবে।
অম্বলের সমস্যা অত্যধিক বেড়ে যাবে। কিছু খেলেই গা গোলানো, বমি ভাব ও সেই সঙ্গে গলা-বুক জ্বালা করার মতো লক্ষণ দেখা দেবে। ওষুধ খেয়েও এমন সমস্যার সমাধান হবে না।
আরও পড়ুন:
উদ্বেগ মাত্রা ছাড়াবে। যখন তখন প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে। এই লক্ষণকে মানসিক সমস্যা ভেবে এড়িয়ে গেলে ভুল হবে।
মাসখানেক ধরে যদি ঘুম কম হয়, বারে বারে ঘুম ভেঙে যেতে থাকে, ঘুমের মধ্যে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, তা হলে সাবধান হতে হবে।
হার্টের রোগ তলে তলে মাথাচাড়া দিচ্ছে কি না, তা নির্ণয় করার অনেকগুলি পরীক্ষা আছে। যেমন অ্যাঞ্জিয়োগ্রাম, ইলেকট্রোকার্ডিয়োগ্রাম, ইকোকার্ডিয়োগ্রাম, স্ট্রেস টেস্ট, কার্ডিয়াক এমআরআই করিয়ে রাখলে ভাল হয়। সেই সঙ্গেই ‘সিটি ক্যালশিয়াম স্কোর’ টেস্ট করিয়ে নিলে বোঝা যাবে হার্টে ব্লকেজ হচ্ছে কি না। কম বয়সিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে এই পরীক্ষাটি। সেই সঙ্গেই জীবনযাপনে নিয়ন্ত্রণ আনা জরুরি। সুষম খাবার খাওয়া, জাঙ্ক ফুড কম খাওয়া, নিয়মিত শরীরচর্চা করলেও হার্ট ভাল থাকবে।