চিনিই সবচেয়ে বড় খলনায়ক। মেদ জমা থেকে ডায়াবিটিস— যাবতীয় দোষ চিনির ঘাড়েই চাপানো হচ্ছে। সে দিক থেকে তেলও কম যায় না। বিশ্ব জুড়েই এখন ‘অ্যান্টি-সুগার’ ডায়েট করার দিকেই মজেছে এখনকার প্রজন্ম। রান্না থেকে চিনি, তেল সব বাদ দিতে হবে। যদি ডায়াবিটিসের আতঙ্ক কাটাতে হয়, ওজনও ঝরাতে হয়, তা হলে জীবন থেকে তেল, চিনি, মিষ্টি, ময়দা বাদ দেওয়াই দস্তুর। তা হলে রইল পড়ে কী? ভাত, রুটি, দানাশস্য ইত্যাদি। সেগুলিও প্রায় বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছেন মডেল ও অভিনেত্রী বিদ্যা মালভারে। ‘চক দে ইন্ডিয়া’ খ্যাত অভিনেত্রী সপ্তাহ খানেক ধরে এমন ডায়েট করছেন, যাতে চিনির নামমাত্র নেই, এমনকি মিষ্টি জাতীয় কোনও খাবারই নেই, নেই শস্যও। তাতেই নাকি সুগার, প্রেশার, ইনফ্ল্যামেশনের মতো সমস্যাগুলিকে জয় করে ফেলেছেন বিদ্যা।
বয়স ৫২। দেখে বোঝার উপায় নেই। তাঁর সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্ব নিয়ে চর্চা হয় নিয়মিত। পঞ্চাশ পেরিয়েও তারুণ্যের দীপ্তি ঝরে পড়ছে তাঁর অবয়বে। যেমন ছিপছিপে গড়ন, তেমনই ফিট তিনি। বিদ্যা গর্ব করেই জানিয়েছেন, সুগার ছুঁতে পারেনি তাঁকে, রক্তচাপের হেরফেরও হয় না। আর প্রদাহ জনিত সমস্যা বা ওই বয়সে গিয়ে হরমোনের কোনও রোগব্যাধি কখনওই হয়নি তাঁর। এর কারণই হল তাঁর খাওয়াদাওয়ার পদ্ধতি। রোজ এমন কিছু খান বিদ্যা যা থেকে সুগার বা প্রদাহ হবেই না। অথচ হজম ভাল হবে এবং বার্ধক্যকেও ঠেকিয়ে রাখা যাবে দীর্ঘ দিন।
তালিকা থেকে কী কী বাদ দিয়েছেন বিদ্যা?
চিনি, মিষ্টি জাতীয় সব খাবার বাদ
মিষ্টি ফলও খান না
মিষ্টি জাতীয় সব রকম পানীয় বাদ দিয়েছেন
কোনও রকম স্ন্যাক্স খান না, শুধু তিন বেলার খাবার খান
ভাত, রুটি সব বাদ, মিলেট বা রাগি ছাড়া কোনও দানাশস্যও খান না।
পাউরুটি, পাস্তা, বিস্কুট, কুকিজ় ছুঁয়েও দেখেন না।
আরও পড়ুন:
তা হলে কী কী খান?
সকাল থেকে রাত অবধি তিন বার খাবার খান বিদ্যা। তাঁর পাতে থাকে নানা ধরনের শাকসব্জি, বাদাম ও বীজ। আলু একেবারেই খান না। ভাত বা রুটি যে হেতু খান না তাই ইচ্ছা মেটাতে মাঝেমধ্যে রাগি খান। তা-ও সপ্তাহে একবার মাত্র।
আরও পড়ুন:
বিদ্যা জানিয়েছেন, বিকেলের মধ্যে রাতের খাওয়া সেরে নেন। তার পর ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টার উপোস। দিনে তিন বার খাওয়ার মাঝে যদি কখনও খিদে পায়, তা হলে কিছুটা বাদাম বা বীজ খেয়ে নেন। তবে তা পরিমিত। সারা দিনে কতটা বাদাম বা বীজ খাবেন, তার পরিমাণ নির্ধারিতই থাকে।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের জন্য এ২ ঘি, নারকেল তেল ও অ্যাভোকাডোকে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন অভিনেত্রী। স্যালাড খেলে ড্রেসিংয়ের জন্য সামান্য অলিভ অয়েল ব্যবহার করেন।
রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম, ১০ মিনিটের মেডিটেশন ও সারা দিনে ৩ লিটার জল খেয়েই শরীর ঝরঝরে রেখেছেন বিদ্যা।
পুষ্টিবিদেরা বলেন, শরীরে বারে বারে জীবাণু সংক্রমণ, হজম প্রক্রিয়ায় গোলমাল, অতিরিক্ত টক্সিন জমে গেলে বা প্রচণ্ড উদ্বেগ, মানসিক চাপ থেকে প্রদাহ বাড়ে। ‘ক্রনিক’ প্রদাহ হলে ইনসুলিনের ভারসাম্যও নষ্ট হয়, রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে থাকে। তাই এমন ডায়েট মেনে চলতে হবে যাতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে যা মাছ, বাদাম, বীজ ও সব্জি থেকে পাওয়া যায়। যেমন, চিয়া বীজ, তিল, তিসি বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, কাঠবাদাম। সবুজ শাকসব্জি খেতে হবে বেশি করে। রান্নায় বা চা-কফিতে চিনি খাওয়া একেবারেই চলবে না। যে কোনও রকম প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।