গত দু’মাস ধরে ইউরোপ ও আমেরিকার নানা দেশে এক সংক্রামক রোগ নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। নিউ ইয়র্কের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, জুলাই মাস থেকে এখনও অবধি চার জনের মৃত্যু হয়েছে এই রোগে। হাসপাতালে ভর্তি শতাধিক। লন্ডনেও ছড়িয়েছে এই রোগ। সেখানেও তিন থেকে চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আক্রান্ত বহু মানুষ। করোনার পরে আবারও এক সংক্রামক রোগ নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। মারাত্মক শ্বাসকষ্টে ভুগছেন রোগীরা, নষ্ট হচ্ছে ফুসফুসের কোষ। আক্রান্তদের অনেককেই হাসপাতালে ভেন্টিলেটরে রাখতে হয়েছে।
লেজিওনেল্লা ব্যাক্টিরিয়া থেকে নিউমোনিয়ার মতো রোগ ছড়াচ্ছে বলে খবর। এই রোগের নাম লেজিওনেয়ার্স ডিজ়িজ। রোগের লক্ষণ অনেকটা নিউমোনিয়ার মতোই। আক্রান্ত হচ্ছে ফুসফুস, শ্বাসকষ্টে ভুগছেন রোগী। নিউ ইয়র্কের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, হ্রদ, নদী, উষ্ণ প্রস্রবণ, ঝর্নায় নেজিওনেল্লা ব্যাক্টেরিয়া বেশি থাকে। জলবাহিত হয়েই রোগ ছড়াচ্ছে বলে অনুমান স্বাস্থ্য আধিকারিকদের।
রোগের লক্ষণ নিউমোনিয়ার মতো
নিউমোনিয়া হল ফুসফুসের সংক্রমণ। এই রোগে ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে জলও জমতে পারে। লেজিওনেল্লা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে তেমনই উপসর্গ দেখা দিচ্ছে বলে খবর। প্রথমে জ্বর হচ্ছে। তার সঙ্গে কাশি। পাশাপাশি, শ্বাসকষ্টও দেখা দিচ্ছে। গভীর শ্বাস নেওয়ার সময়ে বুকে ব্যথা অনুভব করছেন রোগী। এ ছাড়া, মাথায় যন্ত্রণা, ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়া, খাওয়ায় অনীহা, সারা ক্ষণ বমি বমি ভাবও দেখা দিচ্ছে। যাঁদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, বিশেষ করে শিশু কিংবা প্রবীণ মানুষের ক্ষেত্রে এই রোগ মারাত্মক হয়ে দেখা দিচ্ছে।
ইউরোপে, বিশেষত ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন এবং জার্মানির মতো দেশগুলোতে এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এ ছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং আফ্রিকার মতো দেশগুলিতেও রোগের প্রকোপ বেশি। লেজিওনেয়ার্স রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো ছাড়া গতি নেই। বিশেষ করে হার্টের রোগ, ডায়াবিটিস থাকলে বা ফুসফুসের রোগ আগে থেকেই থাকলে, বিপদ বেশি।
রোগী কত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন, এটা নির্ভর করে আক্রান্তের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন, তার উপরে। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে প্রকোপ কিছুটা কমে। রোগ পুরোপুরি সারতে মোটামুটি দু’সপ্তাহ সময় লাগে। কখনও অবশ্য তার বেশিও লেগে যেতে পারে। সবটাই নির্ভর করছে, সংক্রমণ কতটা হয়েছে, তার উপরে। সঙ্গে অবশ্যই রোগীর প্রতিরোধ ক্ষমতাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ।