Advertisement
E-Paper

ডায়াবিটিস নির্মূল হবে? ইনসুলিনের বিকল্প হতে চলেছে অগ্ন্যাশয়ের কোষ! নতুন আবিষ্কারের দাবি বিজ্ঞানীদের

রোগের ওষুধ তৈরি হবে শরীরের ভিতরেই। নিজে থেকেই সারবে অসুখ। সূচ ফোটানোর যন্ত্রণা আর সইতে হবে না।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৫ ১৪:৪০
New Cell Therapy technique could free people with Diabetes from taking insulin injections

সুগার কমে যাবে, শরীরেই তৈরি হবে ওষুধ, নতুন কোষ থেরাপিতে অসাধ্য সাধন করছেন গবেষকেরা।

ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সম্পূর্ণ নিরাময় হয় না, এত দিন এমন ধারণাই ছিল। রক্তে শর্করা বেড়ে গেলে রোগীর অবস্থা বুঝে খাওয়ার ওষুধ বা ইনসুলিনই দিতেন চিকিৎসকরা। কিন্তু এখন ধারণা বদলাচ্ছে। গবেষকেরা জোর গলায় দাবি করছেন, ডায়াবিটিসও একটা সময়ে নির্মূল করে ফেলা সম্ভব হবে। কারণ, বাইরে থেকে এই রোগের প্রতিষেধক ইনসুলিন ইঞ্জেকশনই আর নিতে হবে না! রোগের ওষুধ তৈরি হবে শরীরের ভিতরেই। নিজে থেকেই সারবে অসুখ। সুচ ফোটানোর যন্ত্রণা আর সইতে হবে না।

‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ ডায়াবিটিসের নতুন থেরাপি নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। টাইপ ১ ডায়াবিটিস একেবারে গোড়া থেকে ছেঁটে ফেলার মরিয়া চেষ্টা করছেন ফ্লোরিডার ইউনিভার্সিটি অফ মায়ামি মিলার স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকেরা। ইনসুলিন ইঞ্জেকশনের সাহায্য ছাড়াই রোগ সারানোর দাবি নিয়ে হইচইও কম হচ্ছে না। শরীরের ভিতরেই রোগের দাওয়াই তৈরি হবে, এই বিষয়টি নিয়ে কৌতূহলও তৈরি হয়েছে।

কোন পথে এগোচ্ছে গবেষণা?

অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ থেকে তৈরি ইনসুলিন হরমোনই যত নষ্টের গোড়া। এই হরমোনের ক্ষরণ কম হলে বা বিটা কোষই নষ্ট হতে থাকলে, তখন গোলমাল বাধে শরীরে। ইনসুলিনের অভাবে খাবার থেকে আসা গ্লুকোজ় আর জারিত হতে পারে না। দলা দলা হয়ে জমতে থাকে রক্তে। তখনই রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে শুরু করে। টাইপ ১ ডায়াবিটিসে ইনসুলিনের জন্মদাতা বিটা কোষগুলি নষ্ট হতে থাকে। তখন বাইরে থেকে ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ইনসুলিন বাইরে থেকে নেওয়ার বদলে যদি শরীরেই তৈরি করা যায়, তা হলে রোগও সারে আর সুচ ফোটানোরও দরকার পড়ে না। কিন্তু তা হবে কেমন করে?

এখান থেকেই গবেষণার শুরু। অগ্ন্যাশয়ের কোষগুলিকে যদি চাঙ্গা করে তোলা যায় বা সেগুলিকে সুস্থ কোষ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা যায়, তা হলেই ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ স্বাভাবিক থাকবে। সেটি করতেই এক ধরনের ‘সেল থেরাপি’ করছেন গবেষকেরা। মায়ামি ইউনিভার্সিটির গবেষক গিয়াকোমো ল্যানজ়োনি জানিয়েছেন, প্রথম প্রথম সুস্থ মানুষের অগ্ন্যাশয় থেকে ‘আইলেট’ কোষ তুলে তা ডায়াবিটিসের রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছিল। আইলেট হল অনেকগুলো কোষের সমষ্টি। অগ্ন্যাশয়ের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতে থাকে এই কোষপুঞ্জ। তিন রকম আইলেট কোষ আছে শরীরে— আলফা, বিটা এবং ডেল্টা। আইলেট কোষপুঞ্জে আলফা কোষ থাকে ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং বিটা থাকে ৬০ থেকে ৭৫ শতাংশ। এই বিটা থেকেই তৈরি হয় ইনসুলিন। কাজেই সুস্থ কোষ প্রতিস্থাপিত করতে পারলে হরমোন তৈরিতে আর কোনও বাধাই থাকবে না।

কিন্তু এতে সমস্যা হল দু’টো। প্রথমত, রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করতে যে সংখ্যক আইলেট কোষ প্রয়োজন, তা সব সময়ে পাওয়া সম্ভব নয়, দ্বিতীয়ত, এই প্রক্রিয়া খুবই জটিল ও সময়সাপেক্ষ। ঝুঁকিপূর্ণও বটে। তাই গবেষণাগারেই অগ্ন্যাশয়ের কোষ আলাদা করে তৈরি করারই সিদ্ধান্ত নেন গবেষকেরা। স্টেম কোষ থেকে অগ্ন্যাশয়ের কোষ তৈরি করার কাজ শুরু হয় এবং সে কাজে সাফল্যও আসে। বিজ্ঞানীরা দেখেন, হাজার হাজার কোষ গবেষণাগারেই তৈরি করা যাচ্ছে এবং সেগুলি রোগীদের শরীরে প্রতিস্থাপন করাও যাচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে ১৪ জন রোগীর শরীরে কোষ প্রতিস্থাপন করে দেখা গিয়েছে, ইনসুলিন নিজে থেকেই তৈরি হচ্ছে শরীরে। ইঞ্জেকশন নেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। গবেষকেরা জানিয়েছেন, আরও বেশি সংখ্যক মানুষের উপর পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই পদ্ধতিটি আগামী দিনে সকলের জন্য নিয়ে আসা যাবে কি না, সে চেষ্টা চলছে।

Type 1 Diabetes Diabetes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy