Advertisement
E-Paper

দুর্বল স্মৃতি, মনঃসংযোগ কমে ৫৬ শতাংশ, বম্বে আইআইটির গবেষণায় উঠে এল পিসিওএসের অনেক অজানা দিক

পিসিওএস মানেই যে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়, বরং তার চেয়েও বড় সমস্যা হবে মনঃসংযোগের অভাব। অকারণে উদ্বেগ ও তার থেকে কাজে ভুলভ্রান্তি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৫ ১২:৫৫
New study says PCOS showed over a 50 per cent slower response In women

পিসিওএসের বিপজ্জনক দিকগুলি কী? ফাইল চিত্র।

ঋতুচক্রের সময় তলপেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব— এ সব ওভারিয়ান সিস্টের উপসর্গ। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) হলে তার নানা উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন অনিয়মিত ঋতুচক্র, শরীর ভারী লাগা, মুখে ব্রণ, অবাঞ্ছিত লোমের আধিক্য ইত্যাদি। এইসবই চেনা লক্ষণ। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, পিসিওএস কেবল যে শরীরে কিছু বদল ঘটায় তা নয়, এর জের পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যেও। পিসিওএস মানেই যে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়, বরং তার চেয়েও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে মনঃসংযোগের অভাব। অকারণে উদ্বেগ ও তার থেকে কাজে ভুলভ্রান্তি।

বম্বে আইআইটির গবেষকেরা তাঁদের সাম্প্রতিকতম সমীক্ষায় দাবি করেছেন, পিসিওএস চিন্তাভাবনা গুলিয়ে দেয়। দেখা গিয়েছে, যে মহিলারা এই অসুখে ভুগছেন তাঁদের একাগ্রতা, মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা প্রায় ৫৬ শতাংশ কমে গিয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতা, কাজে ভুলভ্রান্তি বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। সেই সঙ্গেই দুশ্চিন্তা, উদ্বেগের পাল্লাও ভারী হয়েছে।

বম্বে আইআইটির সাইকোফিজ়িয়োলজি বিভাগের দুই গবেষক মৈত্রেয়ী রেডকর এবং আজিজুদ্দিন খান বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন। শতাধিক মহিলার উপর সমীক্ষা চালিয়ে তাঁরা দাবি করেছেন, পিসিওএস মানসিক স্বাস্থ্যে বড় প্রভাব ফেলে। এর কারণই হল হরমোনের ওঠানামা। কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়। হরমোনের তারতম্যের প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশে। সে কারণে চটপট সিদ্ধান্ত নেওয়া, কোনও কাজে মনোযোগ দেওয়া অথবা উপস্থিত বুদ্ধি নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা অনেক কমে যায় বলে দাবি।

পিসিওএস আসলে কী?

প্রত্যেক মেয়েই জন্মানোর সময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক ডিম্বাণু নিয়েই জন্মায়। সাধারণত সেই সংখ্যাটা হয় ১০ লক্ষ। তবে ঋতুস্রাব শুরুর আগে তার মধ্যে থেকে অনেক ডিম্বাণুই নষ্ট হয়ে যায়। ঋতুচক্র শুরু হয়ে গেলে ডিম্বাশয় থেকে প্রতি মাসেই ডিম্বাণু নির্গত হয়। নিষেক না ঘটলে সেই ডিম্বাণু দেহ থেকে বার হয়ে যায় রক্তের মাধ্যমে। ডিম্বাণু তৈরি ও তা নির্গত হওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন। ডিম্বাণু যেখানে জমা হয় সেটি জরায়ুর একটি স্তর, যার নাম এন্ডোমেট্রিয়াম। ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে এই এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরটিই খসে গিয়ে ঋতুস্রাব হয়। কিন্তু পিসিওএসের ক্ষেত্রে ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার নিয়মটি নির্দিষ্ট রীতি মেনে হয় না। কখনও অপরিণত ডিম্বাণু, কখনও বা আংশিক সম্পূর্ণ ডিম্বাণুতে ভরে যায় ডিম্বাশয়। এই অপরিণত ডিম্বাণুগুলি দেহ থেকে বার হতেও পারে না। একসময় সেগুলিই সিস্টের আকারে জরায়ুতে জমা হতে থাকে। ছোট ছোট টিউমারের মতো দেখতে সেই সিস্ট সাধারণত এক মিলিমিটার থেকে ছয় সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এর থেকে বড় হয়ে গেলে তখন বিপদ বাড়ে। সেই সিস্ট অস্ত্রোপচার করে বার করতে হয়।

গবেষকেরা জানাচ্ছেন, সিস্ট তৈরি হলে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের ক্ষরণে তারতম্য হয়। এই ইস্ট্রোজেন হরমোন শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজও সামলায়। বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এই হরমোনের বড় ভূমিকা আছে। যদি ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ অনিয়মিত হয়, তখনই তার প্রভাব পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যে, দেখা দেয় ‘এন্ডোক্রিন ডিজ়অর্ডার’। যে মহিলারা এই সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের কথাবার্তা, চিন্তাভাবনা অসংলগ্ন হয়ে যায়, এমনকি সামাজিক মেলামেশা করার ক্ষমতাও কমতে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তিও দুর্বল হতে শুরু করে। তাই পিসিওএসের লক্ষণ দেখা দিলে, খুব দ্রুতই চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।

ReplyForward

PCOS Mental State IIT Bombay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy