ঋতুস্রাবের সময়ে তলপেটের ব্যথায় অনেকেই ভোগেন। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে সেই ব্যথা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অথবা দেখা যায়, ঋতুস্রাবের ৫-৭ দিন আগে যন্ত্রণা হচ্ছে। চিকিৎসকের কথায়, এগুলি এন্ডোমেট্রিয়োসিসের লক্ষণ। পুণের তরুণীর তেমনই এক রোগ ধরা পড়েছে তবে সেটি এন্ডোমেট্রিয়োসিসের চেয়েও মারাত্মক। এই রোগের নাম ‘কিসিং ওভারিস’। বিরল এই রোগটি খুব কম জনেরই হয়।
তরুণী জানিয়েছেন, তাঁর ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে গিয়েছিল মাস কয়েক, সেই সঙ্গে তলপেটের অসহ্য যন্ত্রণা ওষুধ খেয়েও সারছিল না। উঠতে-বসতে পিঠে ব্যথা ভোগাচ্ছিল। শুরুতে ভেবেছিলেন সারা দিন বসে কাজ করার জন্যই এমন হচ্ছে। কিডনিতে পাথর জমেছে কি না, সে পরীক্ষাও করিয়েছিলেন। অর্থোপেডিক সার্জনও দেখান। তবে রোগ ধরা পড়েনি। যন্ত্রণাও ক্রমেই বাড়তে থাকে। অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয়। রাতভর পেটের ব্যথায় ঘুমোতে পারতেন না তিনি। শেষে আলট্রাসাউন্ড করিয়ে ধরা পড়ে তাঁর জরায়ুতে দু’টি বড়সড় সিস্ট হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, দু’টি জরায়ুর পিছনের দিকের দেওয়াল পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জরায়ুর এন্ড্রোমেট্রিয়ামের স্তর জমাট বেঁধে সিস্ট তৈরি করেছে। জরায়ুর দেওয়াল এমন ভাবে জুড়ে গিয়েছে যে, তার চাপে চারপাশের অঙ্গগুলির কাজকর্মও ব্যাহত হচ্ছে। পুণের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই অবস্থাকে বলা হয় ‘সুপারফিশিয়াল পেরিটোনিয়াল এন্ডোমেট্রিয়োসিস’। লক্ষণ এন্ডোমেট্রিয়োসিসের মতোই, তবে জরায়ু পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে থাকার কারণে একে বলা হয় ‘কিসিং ওভারিস’।
কেন হয় এই রোগ?
জরায়ুর ভিতরের লাইনিং বা স্তর হল এন্ডোমেট্রিয়াম। এই বিষয়ে স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, প্রতি মাসে জরায়ুর এই এন্ডোমেট্রিয়াম অংশের স্তর খসেই ঋতুস্রাব হয়। কিন্তু এন্ডোমেট্রিয়াম জরায়ুর বাইরে, তলপেটের যে কোনও জায়গায় বা শরীরের অন্য কোথাও চলে এলে, তাকে বলে এন্ডোমেট্রিয়োসিস। যদি শরীরের অন্য কোথাও ওই স্তর জমে রক্ত জমাট বাঁধতে থাকে, তখন সেখানে সিস্ট তৈরি হয়। ডিম্বাশয়, তলপেটের পিছনে, মূত্রথলি, বর্জ্য নির্গমনের পথে এমন সিস্ট হতে পারে। সেই সঙ্গেই তলপেটের মধ্যে ফ্যালোপিয়ান টিউবগুলি জড়িয়ে যায়। এতে ডিম্বাণু ফ্যালোপিয়ান টিউবে ঢুকতে পারে না। তখন সন্তানধারণে সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুন:
কিসিং জরায়ুর রোগ নানা কারণে হতে পারে। খুব বেশি পরিমাণে জাঙ্ক ফুড খেলে, নেশা করলে তখন শরীরে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে যায়। টক্সিন জমতে জমতে শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে। তখন জরায়ুর ভাল ব্যাক্টেরিয়াগুলি নষ্ট হয়ে খারাপ ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বাড়ে এবং সেগুলি এন্ডোমেট্রিয়োসিস কোষে পরিবর্তিত হয়ে যায়। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, অত্যধিক মানসিক চাপ এন্ডোমেট্রিয়োসিসের আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে।
চিকিৎসা কী?
মেয়েদের খেয়াল করতে হবে, ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে যাচ্ছে কি না। তলপেটে যন্ত্রণা সারতে চাইছে না, সেই সঙ্গেই পেটে ও পিঠের পেশিতে ক্রমাগত ক্র্যাম্প হচ্ছে, অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিচ্ছে— তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। অনেক সময়ে হাঁটুর ব্যথাও ভোগাতে থাকে। সিটি স্ক্যান, এমআরআই করালে রোগ ধরা পড়ে। ল্যাপারোস্কোপির সাহায্যে নাভিতে ছোট্ট ফুটো করে যন্ত্রের মাধ্যমে পেটের ভিতরে দেখা হয় যে কোথায় সমস্যা রয়েছে। অ্যাডভান্সড স্টেজের এন্ডোমেট্রিয়োসিসের ক্ষেত্রে ল্যাপেরোস্কোপির সাহায্যে সার্জারি করা হয়।