ইরান থেকে আমেরিকা, তুরস্ক থেকে ভারতের নানা প্রান্ত— কবাবপ্রীতি বিশ্বের কোনায় কোনায়। কিন্তু কবাবের রন্ধনপ্রণালী যে এত বিপজ্জনক, তা কে জানত! টিক্কা থেকে রেশমি, আগুনে ঝলসানো মাংসতে নাকি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে। মহামারি সংক্রান্ত একাধিক গবেষণায় দাবি, খাদ্যতালিকার ধরন-ধারণ ক্যানসারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সবচেয়ে জরুরি তথ্য, এক তৃতীয়াংশ ক্যানসার খাবার থেকেই তৈরি হয়। খাবারে বিভিন্ন ধরনের কার্সিনোজেনিক উপাদান থাকে, যেমন প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া রাসায়নিক পদার্থ, সিন্থেটিক উপাদান এবং কবাবের মতো খাবার রান্নার সময়ে তৈরি হওয়া যৌগ। অর্থাৎ আগুনে ঝলসানো খাবারেই বিপদ লুকিয়ে।
ক্যানসার রোগের চিকিৎসক সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করা খাবার, বা উচ্চ তাপমাত্রায় বানানো খাবার যেমন কবাবের নাইট্রোস্যামাইন যৌগ অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের বড়সড় কারণ। এই উপাদানটি আসলে কার্সিনোজেনিক (কার্সিনোজেন হল এমন পদার্থ, যা ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে)। কোনও এক প্রকার কবাব নয়, সব ধরনের কবাবেই এই ঝুঁকি থাকে। আগুনে ঝলসানো যে কোনও খাবারেই ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে। তবে মাঝেমধ্যে খেলে আতঙ্কের কারণ নেই। কিন্তু নিয়মিত কবাব খাওয়ার অভ্যাস থাকলে, তা থেকে ক্যানসারের সম্ভাবনা রয়েছে।
সতর্ক হতে হবে কবাব খাওয়ার বিষয়ে। ছবি: সংগৃহীত।
আগুনে পোড়ানো কোনও খাবারই তার মানে ভাল নয়?
চিকিৎসকের কথায়, ‘‘মাছ ও মাংসই আগুনে পুড়িয়ে খাওয়া হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। আর এগুলিই বেশি অস্বাস্থ্যকর। কারণ, প্রাণিজ প্রোটিনের সঙ্গে সম্পর্কিত এই নাইট্রোস্যামাইন যৌগ। যখনই মাছ বা মাংসের মতো প্রাণিজ প্রোটিন আগুনে উচ্চ তাপমাত্রায় ঝলসানো হচ্ছে, তখন সেই প্রোটিনের অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে নাইট্রোস্যামাইন যৌগ তৈরি হয়। আর প্রায়শই যদি সেই উপাদানটি খাওয়া হয়, তাতে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়বে। বিশেষ করে প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে। সব্জি জাতীয় খাবার আগুনে খুব বেশি পোড়ানো হয় না। তবে সেই ধরনের খাবার ক্ষতিকারক নয়। কারণ সব্জিতে অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে না।’’ সুতরাং গ্রিল করা বা ঝলসে মাংস খাওয়া সীমিত করতে হবে। নয়তো ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
একই সঙ্গে খুব বেশি রেড মিট খাওয়া নিয়েও সতর্ক করলেন চিকিৎসক। কারণ, তাতে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। মাঝেমধ্যেই যদি উচ্চ-ফ্যাটযুক্ত খাবার (যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই) খাওয়া হয়, তা হলে ওজন বৃদ্ধি পেয়ে স্তন ক্যানসার, গলব্লাডারের ক্যানসার, জরায়ুর ক্যানসার, কোলন ক্যানসারের প্রবণতা বাড়তে পারে। ফলে জাঙ্ক ফুড খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি বলে পরামর্শ চিকিৎসকের।