দিনভরের ক্লান্তি কেটে যায় স্নানে। তবে স্নান করারও নিয়ম আছে। বালগি-মগ দিয়ে মাথায় হুড়মুড় করে জল ঢাললেই হল না। আবার শাওয়ার খুলে আধ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন, তা-ও ঠিক নয়। স্নানের নিয়ম আর মানেন ক’জনে! কিন্তু বয়স্কদের এ ব্যাপারে সাবধান থাকতে বলা হচ্ছে। স্নানের সময়ে কিছু ভুল অনেক প্রবীণই করেন। আর তাতে বিপদও ঘটে। কোন কাজগুলি স্নান করার সময়ে একেবারেই করা উচিত নয়, তা জানেন কি?
স্নান করার সময়ে বিপদ হবে! শুনতেও অবাক লাগে। তবে এমনই হয় এবং ঘটে চলেছে। স্নানের সময়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কম নয়। বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাথরুমে হার্ট অ্যাটাক বা স্নান করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা, স্ট্রোক— আকছারই ঘটে। দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ থেকে এই বিষয়ে একাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে সেই ২০১২ সাল থেকে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, এমন কিছু কারণ আছে, যার জন্য এমন অঘটন ঘটে। বয়স্কদের সংখ্যাই সেই তালিকায় বেশি।
বাথরুমে হৃদ্রোগের কারণ কী কী?
ঘুম থেকে উঠেই বাথরুমে
ঘুমচোখ খুলেই বাথরুমে চলে যাওয়ার অভ্যাস আছে অনেক প্রবীণেরই। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ঘুম ভাঙার পরে আগে দুই পা মাটিতে রেখে কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। এতে শরীর ধাতস্থ হওয়ার সময় পাবে। রক্ত চলাচল শুরু হবে। ঘুম বা বিশ্রামের সময়ে হৃৎস্পন্দনের হার কম থাকে। যদি হঠাৎ করে বিছানা থেকে নেমেই বাথরুমে গিয়ে স্নান করতে শুরু করেন, তা হলে যেমন শরীরের তাপমাত্রার হেরফের হবে, তেমনই হৃৎস্পন্দনের হার অনিয়মিত হয়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়বে। শরীর আগে সইয়ে নিতে হবে কিছু ক্ষণ। পারলে হাঁটাহাঁটি করুন, হালকা শরীরচর্চাও সেরে নিতে পারেন।
আরও পড়ুন:
জলের তাপমাত্রা
ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। খুব ঠান্ডা জল বা অত্যধিক উষ্ণ জল মাথায় ঢাললে রক্তজালিকাগুলির ক্ষতি হয়। এতে রক্তচাপের ওঠানামা শুরু হয়। অনেকেই গরমের সময়ে খুব ঠান্ডা জলে স্নান করা শুরু করেন, অথবা শীতের সময়ে জল অনেক ক্ষণ ঘরে গরম করে সেই গরম জলই মাথায়-গায়ে ঢালতে থাকেন। এতে কিন্তু রক্তচাপের তারতম্য ঘটে বিপদ ঘনাতে পারে।
প্রথমেই মাথায় হুড়মুড়িয়ে জল ঢালা নয়
বাথরুমে গিয়েই মাথায় জল ঢালতে শুরু করেন? এই অভ্যাস ক্ষতিকর। গবেষকেরা বলেন, আগে দুই পা জলে ভেজাতে হবে। এতে জলের তাপমাত্রার সঙ্গে শরীর মানিয়ে নিতে শুরু করবে। তার পর দুই হাত, কাঁধ, মুখে ও শেষে মাথায় জল দেবেন ধীরে ধীরে। গোটা প্রক্রিয়াটা ধাপে ধাপে মেনে চললে ব্রেন স্ট্রোক বা আচমকা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।
কোন কোন লক্ষণ বুঝলেই সতর্ক হবেন?
১) স্নানের সময়ে বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘোরার সমস্যা হলে সাবধান!
২) হার্টের অসুখ আগে থেকেই রয়েছে এমন ব্যক্তির যদি স্নানের সময়ে শ্বাসকষ্ট নয়, অথবা বাম হাত ও বাম কাঁধে ব্যথা করে, তা হলে সতর্ক হতে হবে।
৩) বুকে চিনচিনে ব্যথা, অতিরিক্ত ক্লান্তি ভাবও ভাল লক্ষণ নয়।
৪) বাথরুমে গিয়ে মাঝেমধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যান বা চোখে অন্ধকার দেখেন, এমন লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে।