কোভিডকালের আগে ও পরে। সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তীর জীবনের দুই ভিন্ন অধ্যায়। কোভিডের আগে গায়িকার রুটিন বলতে কেবল মঞ্চ, পারফরম্যান্স এবং বাড়ি এসে ঘুম। কিন্তু স্বাস্থ্যের প্রতিশোধস্পৃহা স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করে। জানান দিতে শুরু করে নানা ধরনের রোগের মাধ্যমে। পিসিওডি-র (পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম) সমস্যা বেড়ে যায়। লকডাউনের সময় বাড়িতে বসে থেকে থেকে শরীর আরও খারাপ হতে থাকে। ভিডিয়ো কলে নীলাঞ্জন ঘোষ (তখনও বিয়ে হয়নি) কিছু ব্যায়াম দেখিয়ে দিলে সে সব করার চেষ্টা করতেন কেবল। কিন্তু উপকার মিলছিল না কোনও কিছুতেই। সে সময়ে এক বন্ধু ইমনকে এক যোগপ্রশিক্ষকের সন্ধান দেন। সেই থেকে ইমনের জীবনের পরবর্তী অধ্যায় শুরু।
যোগাসন করতে ভালবাসেন ইমন। যোগাভ্যাস করা মোটেও সহজ নয়। সে কথা অস্বীকারও করেন না ইমন। কিন্তু নিজের পরিচিত বলয় থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু চেষ্টা করতে করতেই উপকৃত হয়েছেন গায়িকা। এখন স্বামী নীলাঞ্জনের সঙ্গে রোজ রাতে নিজেদের ছাদে ব্যাডমিন্টন খেলেন। তাতে ঝরঝরে থাকে শরীর এবং মন।
আরও পড়ুন:
ইমনের কথায়, ‘‘কোভিডের সময়ে আমি আমার বাড়ির কাছেই এক যোগ প্রশিক্ষকের কাছে যাওয়া শুরু করি। প্রথম এক-দু’টি মাস বড্ড কঠিন লেগেছিল। ধীরে ধীরে টের পাই, শরীরে শক্তি বাড়ছে। খুব উপকার হয়েছে আমার। এখন রোজ হয়তো যোগাসন করা হয় না, কিন্তু প্রতি সপ্তাহে এক-দু’বার তো করিই। প্রতি দিন রাতে ৯টা থেকে ১০টা ব্যাডমিন্টন খেলিই আমরা। নয়তো মঞ্চে দাপিয়ে বেড়ানো সহজ নয়। নিজেকে সুস্থ রাখাটা যে কতটা জরুরি, বুঝতে পারি এখন। তা ছাড়া নিজেকে দেখতেও সুন্দর লাগে এখন। দেহের আকার-আকৃতিও আগের থেকে বেশি সুন্দর হয়েছে বলে মনে হয়। মন-মেজাজও ভাল থাকে। হুটহাট রেগে যাওয়ার সমস্যাও কমে। মন শান্ত হয়। সময়মতো ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নিতে পারে মন। সবই কিন্তু যোগাভ্যাসের কারণেই হয়েছে আমার।’’
সঙ্গীতশিল্পী শরীর ভাল রাখার পাশাপাশি নিজের গলার স্বাস্থ্য নিয়ে খুব সচেতন। আর সে কারণে উচ্চস্বরে কথা না বলা বা রেগে চিৎকার না করা অথবা বেশি কথা না বলা অভ্যাস করেন। কষ্ট হয় মাঝেমধ্যে। হয়তো কথা জমে আছে, অথচ গলার জন্য নিজেকে আটকে রাখতে হয়। এমন সব সময়ে ইমন লেখালিখি করেন। লিখতে শুরু করলে জমা কথা বেরিয়ে যায়। আর রোজের প্রয়োজনে ফোন ধরার চেয়ে মেসেজ করতে তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ। বন্ধুরাও জানেন, ইমন এ বার মৌনব্রত পালন করছেন, ‘ডাম্ব-শারাট্স’ খেলে খেলে মনের ভাব প্রকাশ করবেন। তা ছাড়া গলার স্বাস্থ্যরক্ষায় যষ্টিমধু খাওয়া বা ঈষদুষ্ণ জল পান করা, কাঁচা পানপাতা চিবানো বা অল্প লবঙ্গ খাওয়া তো রয়েছেই রুটিনে। গলার আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য যা যা কার্যকরী, সবই করতে হয় ইমনকে।
খাদ্যাভ্যাসে তেমন কড়াকড়ি না থাকলেও বাড়ির খাবারই পছন্দ করেন তিনি। দূরে কোথাও অনুষ্ঠান করতে গেলে সব সময়ে তা মেনে চলা যায় না ঠিকই, তাও খানিক প্যাক করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন গায়িকা।