Advertisement
E-Paper

অন্ধকার ঘরে ঘুরছে ছায়ামূর্তিরা! কেউ চেপে ধরছে গলা, অতিলৌকিক নয়, এ ভ্রম মস্তিষ্কেরই, কাদের হয়?

আগেকার দিনে মা-ঠাকুরমারা বলতেন ‘বোবায় ধরা’। ঘুমের মধ্যে গোঙানি, খিঁচুনি হত অনেকের। ভূতের গল্পের সুবাদে ভূতে ধরা বা ‘নিশিতে পাওয়া’-বলে মনে করা হত।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫ ০৯:০৬
ঘুমের মধ্যে শরীর অসাড়, দৃষ্টিবিভ্রম কেন হয়?

ঘুমের মধ্যে শরীর অসাড়, দৃষ্টিবিভ্রম কেন হয়? ছবি: ফ্রিপিক।

মাঝরাতে ঘুম ভেঙেই মনে হল, ঘরের ভিতর আপনি একা নন। জানলা দিয়ে আসা ক্ষীণ আলোয় দেখা যাচ্ছে কার যেন অবয়ব। দেওয়ালে কালো কালো ছায়ামূর্তিদের আনাগোনা। ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে হাত-পা যেন সেঁধিয়ে যাচ্ছে শরীরের সঙ্গে। আচমকাই মনে হল বুকের উপর কয়েক মণ ভারী বোঝা চেপে বসেছে। কেউ যেন চেপে ধরছে গলা। ভয় এতটাই যে, অবশ হয়ে গিয়েছে গোটা শরীর। বাধা দেওয়ার শক্তিটুকু যেন নেই। অনেকের সঙ্গেই ঘটে এমন। কেউ ভাবে্ন, ভূতপ্রেতের আনাগোনা বুঝি শুরু হল বাড়িতে। আবার কেউ ভয়ঙ্কর কোনও অতিলৌকিক ঘটনা বলে ভেবে বসেন। আসলে এ সব কিছুই নয়। পুরোটাই মস্তিষ্কের ভ্রম এবং দৃষ্টিবিভ্রমও বটে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘স্লিপ প্যারালিসিস’।

আগেকার দিনে মা-ঠাকুরমারা বলতেন ‘বোবায় ধরা’। ঘুমের মধ্যে গোঙানি, খিঁচুনি হত অনেকের। ভূতের গল্পের সুবাদে ভূতে ধরা বা ‘নিশিতে পাওয়া’-বলে মনে করা হত। আসলে ‘স্লিপ প্যারালিসিস’ কয়েক মুহূর্তের জন্য গোটা শরীর অসাড় করে দেয়। শুধু মুখের আওয়াজই নয়, যে কোনও রকম নড়াচড়াও বন্ধ হয়ে যেতে পারে এতে। পুরোটাই কিন্তু ঘটে অল্প সময়ের জন্য। কিন্তু ওইটুকু সময়ের আতঙ্কের জেরে অনেকের হ্যালুসিনেশন বা দৃষ্টিবিভ্রমও ঘটতে পারে।

স্লিপ প্যারালিসিস কেন হয়?

পুরোটাই স্নায়বিক পরিস্থিতির কারণে হয়। চিকিৎসক রণবীর ভৌমিকের মতে, ঘুম ও জেগে থাকার মাঝামাঝি একটা পর্যায়ে যখন মস্তিষ্ক খুব সজাগ থাকে, সে সময়েই অল্প কিছু ক্ষণের জন্য ‘পক্ষাঘাত’ হতে পারে। ঘুম যখন গভীরে পৌঁছয়নি, মস্তিষ্ক সক্রিয় রয়েছে তখনই মানুষ স্বপ্ন দেখে। তেমনই একটি পর্যায়ে যদি পেশির শক্তি কমতে থাকে, মস্তিষ্ক থেকে সঙ্কেত পেশিতে ঠিক মতো না পৌঁছয়, তখন পেশির অসাড়তা দেখা যায়। সেই সঙ্গে দৃষ্টিবিভ্রমও হতে পারে। অনেকেই এই সময়ে আধো-জাগ্রত অবস্থায় নানা রকম অদ্ভুতদর্শন প্রাণী দেখেন অথবা ছায়ামূর্তি ঘুরে বেড়াতে দেখেন।

মানসিক চাপ অত্যন্ত বেড়ে গেলেও এমন হতে পারে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, স্লিপ অ্যাপনিয়া আর স্লিপ প্যারালিসিস কিন্তু এক নয়। অ্যাপনিয়ার ক্ষেত্রে ফুসফুসের উপর চাপ বাড়ে, শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে সমস্যা হয়, পালস রেট বেড়ে যেতে পারে, নাক ডাকার সমস্যা দেখা দেয়। হার্টের সমস্যা থাকলে বা ওজন খুব বেশি হলে এই রোগ হতে পারে। তবে স্লিপ প্যারালিসিস তখনই হয়, যখন ঘুমের স্বাভাবিক চক্র ঘেঁটে যায়। যাঁরা কম ঘুমোন, বেশি রাত জাগেন অথবা অত্য়ধিক দুশ্চিন্তা করেন, তাঁদের এমন হতে পারে।

স্লিপ প্যারালিসিসে বেশি ভোগেন কম বয়সিরাই। কিশোর-কিশোরী বা তরুণেরা, খুব বেশি হলে তিরিশ বছরের মধ্যে তাঁদের বয়স। অল্প বয়সি ছেলেমেয়েদের জীবনে পড়াশোনা বা আনুষঙ্গিক ক্ষেত্রের খুব চাপ থাকে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক, পারিবারিক পরিবেশও অনেক সময়ে মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। তা ছাড়া এখন রাত জেগে মোবাইলে স্ক্রল করা, বেশি রাত অবধি জেগে টিভি দেখার প্রবণতা বেড়েছে। এ সবও মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। এই সমস্ত কিছুই ঘুমের নিয়মিত ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে, যার পরিণতিতে স্লিপ প্যারালিসিস হতে পারে।

চিকিৎসা কি আছে?

স্লিপ প্যারালিসিস কোনও রোগ নয়, তাই এর কোনও ওষুধ বা থেরাপি আছে, এমনটা নয়। স্লিপ প্যারালিসিস থেকে রেহাই পেতে হলে সঠিক সময়ে ঘুমোতে হবে, টানা ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। নেশার মাত্রা কমাতে হবে, মোবাইলের ব্যবহার সীমিত করতে হবে। তবে স্লিপ প্যারালিসিসের সমস্যা বেশি, ঘন ঘন বা তীব্র হলে অনেক সময়ে মেলাটোনিন হরমোন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

Sleep Paralysis
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy