বড় বা জটিল রোগ নেই। অথচ খুচরো অসুখ লেগেই আছে বাড়িতে। কারও জ্বর তো কারও পেট খারাপ, কেউ হজমের সমস্যায় ভুগছেন তো কারও যখন তখন সর্দিকাশি। সঙ্গে গায়ে-হাত-পায়ে ব্যথা। মাথাধরা-ক্লান্তিবোধ— এ সবই স্পষ্ট ইঙ্গিত করছে দুর্বল রোগপ্রতিরোধ শক্তির দিকে। অর্থাৎ পরিবারের সদস্যরা যে খাবার খাচ্ছেন তা রোগের সঙ্গে লড়ার জন্য যথেষ্ট নয়। এক চিকিৎসকের মতে, এ সমস্যার আসল সমাধান লুকিয়ে বাড়ির রান্নাঘরেই।
বাড়ির রান্নাঘরই হল সেই জায়গা, যেথান থেকে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান মেলে। দক্ষিণ দিল্লির এক ক্যানসার হাসপাতালের চিকিৎসকের কপিল গয়াল বলছেন, ‘‘কাঁচা সব্জি ধুয়ে পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে, তা রান্না করা এবং রান্না করা খাবার নিরাপদে রাখা— সবই হয় রান্নাঘরে। আর এই সবকিছুর উপরেই নির্ভর করে খাবারের পুষ্টিগুণ। যেখানে কোনও গন্ডগোল হলে তার প্রভাব পড়বে পরিবারের স্বাস্থ্যেও।’’
চিকিৎসক বলছেন, শুধু রান্নাঘরের কিছু অভ্যাসে বদল এনে পরিবারের স্বাস্থ্য ভাল রাখা যেতে পারে। তার জন্য মূলত যে বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে, তা হল—
১। কোন তেলে রান্না হচ্ছে
খাবারের পুষ্টিগুণ বাড়বে নাকি নষ্ট হবে, তার অনেকটাই নির্ভর করছে, তা কোন তেলে রান্না করা হচ্ছে তার উপর। অনেকে রান্না ঘরে এক বার ব্যবহার হওয়া তেল ব্যবহার করেন। এই অভ্যাসের ফলে কোলেস্টেরল থেকে শুরু করে হার্টের রোগ, লিভাবের সমস্যা এমনকি, ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। ভারতীয় রান্নাঘরে রান্নার জন্য সবচেয়ে ভাল হল ঘি। ইদানীং পুষ্টিবিদেরা দানা থেকে তৈরি তেল ব্যবহার করতে বারণ করছেন। বদলে অলিভ অয়েল, নারকেল তেল, রাইস ব্র্যান অয়েল বা বাদাম তেল ব্যবহার করতে বলছেন।
২। কতটা তাপমাত্রায় রান্না হচ্ছে
বেশি তাপমাত্রায় খাবারের ভিটামিন নষ্ট হতে পারে। তাই খাবার তৈরি করার সময় মাঝারি আঁচেই বেশিরভাগ রান্না করতে বলছেন চিকিৎসক। ভাজার বদলে সিদ্ধ করা বা ভাপিয়ে নেওয়া রান্নায় গুরুত্ব বেশি দিতে বলছেন। এড়াতে বলছেন ডুবো তেলে ভাজা কিংবা গ্রিল করা বা ঝলসানো রান্না। কারণ তাতে তাপমাত্রা বেশি লাগে।
৩। সব্জি-মাছ-মাংস তাজা কি না
মরসুমি এবং স্থানীয় শাক-সব্জি বেছে নিলে তা তাজা পাওয়া যাবে। অন্য ঋতুর সব্জি খেলে তা মিলবে হিমঘর থেকে। চিকিৎসক বলছেন, সবসময়ে তাজা সব্জি-মাছ-মাংস খেতে। হিমঘরে রাখা বা প্যাকেটজাত কাঁচা খাবার আনা মানেই, তাতে রাসায়নিক থাকবে।
৪। কী ভাবে খাবার রাখছেন
শাকসব্জি ফ্রিজে রাখাই ভাল। কারণ তাতে খাবারের ভিটামিন, ফাইবারের মাত্রা বজায় থাকে। অন্য দিকে, কিছু কিছু আনাজ আর ফল আবার ফ্রিজে রাখলে তাতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট নষ্ট হতে পারে।
৫। কোন বাসন ব্যবহার হচ্ছে
অনেকেই গরম খাবার ঢেলে দেন প্লাস্টিকের পাত্রে অথবা এমন কোনও ননস্টিক পাত্রে রান্না করলেন, যার কোটিং নষ্ট হয়ে গিয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই খাবারে মিশতে পারে ক্ষতিকর রাসায়নিক। যা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। নিরাপদে থাকতে লোহা, স্টিল অথবা সেরামিকের বাসন ব্যবহার করুন। কারণ তা থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক খাবারে মেশার ঝুঁকি নেই।
৬। নুন-চিনির ব্যবহার
খাবারে অতিরিক্ত নুন বা অতিরিক্ত চিনি দেওয়া ভাল নয়। দু’টি উপাদানই শরীরে প্রদাহ বৃদ্ধি করতে পারে। যা সরাসরি প্রভাব ফেলবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর। তাই এই দুই স্বাদবর্ধকের ব্যবহারও হোক পরিমিত।