পুজো মানেই ক’টা দিনের জন্য দৈনন্দিন নিয়মের বাইরে গিয়ে আনন্দে মেতে ওঠা, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে দেদার আড্ডা আর ভাল খাওয়াদাওয়া। তবে আনন্দের সঙ্গে যে অনিয়ম চলে, তার প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্যে। যদিও চিকিৎসকদের মতে, খাওয়াদাওয়া-সহ বিভিন্ন বিষয়ে আগেভাগেই যদি একটু সচেতন হওয়া যায়, তা হলে পুজোর মজা হবে দ্বিগুণ।
বুঝে খাওয়া
পুজোর দিনে পাতে একটু তেল-মশলা বেশি হবে, এটাই স্বাভাবিক। প্যান্ডেলের পাশে ফুচকা থেকে রেস্তরাঁয় বিরিয়ানি... চলতে থাকবে। কিন্তু শরীরে না সইলে বাকি দিনগুলো মাটি! মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. অরুণাংশু তালুকদার পরামর্শ দিচ্ছেন, “কোনও এক বেলা বেশি মিষ্টি, ভাজাভুজি, তেল-ঝাল খাওয়া হয়ে গেলে অন্য বেলা খাবারের পরিমাণ কমাতে হবে। বেছে নিতে হবে স্বাস্থ্যকর বিকল্প।”
স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরীও। তাঁর মতে, “পুজোয় যেহেতু বাইরে খাওয়ার দিকেই বেশি ঝোঁক থাকে, তাই খাদ্যতালিকায় এমন খাবার অন্তত রাখা উচিত যাতে ফ্যাট কিছুটা কম থাকবে। বরং বেশি পরিমাণে থাকবে প্রোটিন, ফাইবার।” রাস্তার ধারের শরবত নয়, জলেই গলা ভেজানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। কাটা ফল, তেলেভাজা, ফুচকা, ফলের রসের বদলে গোটা ফল, ডাবের জল, মুড়িমাখার মতো খাবার বেছে নিলে সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বাড়ে।
পুজোর হুল্লোড়ের মধ্যে অনেকে খেয়াল রাখেন না খাবার থেকে অ্যালার্জির কথা। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর বলছেন, “মাশরুম, চিংড়ি, বাদাম বা অন্য কিছুতে যদি অ্যালার্জি থাকে তা হলে রেস্তরাঁয় খাবার অর্ডার করার সময়ে সংশ্লিষ্ট পদে এই সব জিনিসগুলি রয়েছে কি না, তা জিজ্ঞাসা করে নিতে হবে। নতুন কোনও পদ খাওয়ার ক্ষেত্রেও এই বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত।”
তা বলে কি ফুচকা, রোল, চাউমিনে একেবারে না? চিকিৎসকদের আশ্বাস, দু’-এক দিনের অনিয়মে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু খাবারগুলি যেন স্বাস্থ্যকর জায়গায় বানানো হয়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
সাজগোজে সতর্ক
সকালে বন্ধুদের সঙ্গে মণ্ডপে আড্ডা হোক কিংবা রাত জেগে প্যান্ডেল হপিং, পার্টি— পুজোর ক’টা দিন এই সব চলবে। কিন্তু এ সময়ে ত্বকের কথাও মাথায় রাখতে হবে। ডা. ধরের কথায়, “ত্বক সুরক্ষিত রাখতে কিছু নিয়ম মানা দরকার। দিনের বেলা বেরোতে হলে সানস্ক্রিন মাখা জরুরি। এসপিএফ ৩০-৫০-এর মধ্যে যে কোনও সানস্ক্রিনই কাজে দেবে। রোদ, ধুলো থেকে বাঁচতে সঙ্গী করা যেতে পারে ছাতা, মাস্ক।” পুজোর আগে নতুন কোনও প্রসাধনী ব্যবহার না করাই ভাল। ত্বকে সহ্য না হলে অ্যালার্জি-ব্রণ হতে পারে, তখন পুজোর সাজটাই মাটি। ঘোরাঘুরি শেষে বাড়ি ফিরে স্নান আবশ্যক। ত্বকে জমে থাকা ধুলো, জীবাণু অনেকটাই সাফ হয়ে যাবে।
নতুন জামা, জুতো
নতুন জুতো প্রথম দিন পরেই যদি অনেক হাঁটাহাঁটি হয়, তা হলে পায়ে ফোস্কা পড়তে পারে। চিকিৎসকদের পরামর্শ, নতুন জুতো কেনার পরে অল্প অল্প করে তা পরা অভ্যাস করতে হবে। অনেকের আবার বিভিন্ন কাপড়ে (যেমন সিন্থেটির, রেয়ন ইত্যাদি) অ্যালার্জি থাকতে পারে। নতুন জামা পরার আগে তাই গায়ে যদি একটু ময়শ্চরাইজ়ার মেখে নেওয়া যায়, তা হলে উপকার মিলতে পারে। অ্যালার্জির ধাত থাকলে, সঙ্গে অ্যালার্জি কমানোর ওষুধ রাখা জরুরি।
ছোটদের জন্য
পুজোর আনন্দ যাতে ছোটরাও পুরোপুরি উপভোগ করতে পারে, সে জন্য তাদের সুস্থতার দিকেও নজর দিতে হবে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরীর পরামর্শ:
- বাচ্চাদের খাওয়ার সময়ের যেন খুব বেশি হেরফের না হয়। খাওয়ার জায়গা বাছাই নিয়েও সতর্ক থাকতে হবে। খুব তেল-মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- বাড়ি থেকেই জল, ফলের রস নিয়ে গেলে গ্যাস, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস এ-র মতো রোগ থেকে বাচ্চাদের সুরক্ষিত রাখা যেতে পারে।
- আবহাওয়া কেমন থাকে, তা বুঝে বাচ্চাদের জামাকাপড় পরাতে হবে।
নজরে খুঁটিনাটি
নির্দিষ্ট পরিমাণে জল খাওয়া এবং ঘুমের কোনও বিকল্প নেই। রাত জেগে ঠাকুর দেখা বা ভোর থেকে পুজোর জোগাড়, সব কিছুর সঙ্গেই যেন দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম হয়, খেয়াল রাখতে হবে। এই সময়ে শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত রোগের বাড়াবাড়ি দেখা যায়। ট্রেন, বাসের ভিড়ে সমস্যা বাড়ে। শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে, ভিড় এড়িয়ে চলুন।
মধুমেহ, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা কিডনির সমস্যা আছে যাঁদের, বিশেষত যাঁরা নিয়মিত ওষুধ খান, সেখানে যেন কোনও বেনিয়ম না হয়, তা দেখতে হবে। বাইরে গেলে ব্যাগে ওষুধ রাখা জরুরি। প্রয়োজনীয় সব ওষুধপত্র যেন বাড়িতে মজুত থাকে। আপৎকালীন নম্বর হাতের কাছে রাখুন, প্রয়োজনে হয়রানি কমবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)