দিন কয়েক ধরে টানা পিঠে ব্যথা হচ্ছেন সুমনের। প্রথমে ভেবেছিলেন টানা কাজ। ধকলের জন্য ব্যথা। ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে কিছু দিন সমস্যা ঠেকানো গেলেও, শেষ পর্যন্ত জানা যায় সমস্যা গভীরে। কিডনি থেকেই এমন ব্যথা।
শরীর সুস্থ রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি প্রত্যঙ্গ হল কিডনি, যার কাজই হল শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করে দেওয়া। রক্তে লোহিত কণিকা তৈরিতে সাহায্যকারী হরমোন নিঃসরণ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
কিডনি বিগড়ে গেলে শরীরের অন্য প্রত্যঙ্গেও তার প্রভাব পড়ে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে মৃত্যুও হতে পারে। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলেছন, সমস্যা হল কিডনির কর্মক্ষমতা যত ক্ষণ না যথেষ্ট কমে যাচ্ছে তত ক্ষণ তার লক্ষণ সে ভাবে বোঝা যায় না। রক্ত বা মূত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বোঝা যায় কিডনির সমস্যা রয়েছে কি না। কিন্তু লক্ষণ বা উপসর্গ না থাকলে, কেউ আগ বাড়িয়ে পরীক্ষার কথা ভাবেন না। ফলে কিডনির অসুখ চিহ্নিত করতেই দেরি হয়ে যায়।
কোন কোন লক্ষণে সতর্ক হওয়া দরকার?
পিঠে ব্যথা: পিঠের নীচের দিকে, শিরদাঁড়ার দুই পাশে মারাত্মক ব্যথা হচ্ছে কি? পিঠের নীচের অংশের ব্যথা বসার ভঙ্গির ভুলে, হাড়ের ক্ষয়ের জন্যও হতে পারে। কিন্তু কিডনির সমস্যার জন্য ব্যথা একটু আলাদা রকম হয়। সাধারণ পেশিতে ব্যথার চেয়ে এর ধরনে সূক্ষ্ম তফাত হয়। শিরদাঁড়ার নীচের অংশে কোমরের দুই পাশের কোনও এক দিকে বা দুই দিকে ব্যথা হলে সতর্ক হওয়া দরকার। বিশেষত, যদি সেই ব্যথা সহজে কমতে না চায়, দু’দিন অন্তর ফিরে আসে। কিডনিতে পাথর হলে এমন ব্যথা হতে পারে।
আরও পড়ুন:
কিডনিতে সংক্রমণ হলে, পাথরের কারণে প্রস্রাব কিডনি থেকে নির্গত হতে না পারলে, কিডনি ফুলে গেলে এমন ব্যথা হতে পারে।
তলপেটে ব্যথা: তলপেটে ব্যথাও কিডনির সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। ঋতুস্রাবের জন্যও মহিলাদের তলপেটে যন্ত্রণা হয়। যদি তা চট করে না কমে, ব্যথার ওষুধেও সুরাহা না হয়, একই সঙ্গে প্রস্রাবের রং, গন্ধে বদল চোখে পড়ে তা হলে সতর্ক হতে হবে। প্রস্রাবে সংক্রমণ হলে, কখনও কখনও কিডনিতে পাথর হলেও পেটের বাঁ দিক বা ডান দিক ঘেঁষে যন্ত্রণা হয়।
তলপেটে যন্ত্রণা থেমে না থেকে পেলভিস এলাকাতেও যন্ত্রণা হলে সতর্ক হতে হবে। কিডনিতে সংক্রমণ হলে, কোনও কারণে মূত্র ঠিকমতো নির্গত হতে না পারলে এমন লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
বুকে কষ্ট
কিডনির সমস্যা যদি গুরুতর হয়, তবে তা থেকে শ্বাসকষ্টও হতে পারে। কারণ কিডনির কাজ ব্যাহত হলে জল জমতে পারে ফুসফুসেও। তা থেকে শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি বুকে ব্যথা বা বুকে চাপ লাগার মতো সমস্যাও হতে পারে।
পা ফোলা
পা-সহ শরীরের কোনও অংশ ফুলছে কি? কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীর থেকে বাড়তি নুন এবং জল বার করতে পারে না। ফলে শরীরে জল জমতে থাকে। কোনও কোনও অংশ ফুলে যায়। যদি দেখেন পায়ের পাতা, পায়ের গোছ এবং গোড়ালির পাশের অংশ ফুলছে, তবে তা কিডনির সমস্যার কারণেও হতে পারে।
সাধারণ বিষয়ও হতে পারে কিডনির সমস্যার উপসর্গ
· পরিশ্রম ছাড়াও ক্লান্তিবোধ
· ওজম কমা এবং খিদে কমে যাওয়া
· চোখের চারপাশে, পায়ে ফোলা ভাব
· শুষ্ক ত্বক
· মূত্রের বর্ণ এবং গন্ধ বদল
· প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি
· শ্বাসের কষ্ট
· ঘুমের সমস্যা