মরসুম বদলের সময়ে সংক্রমণ জনিত নানা রোগব্যাধি বাড়ে। হাঁপানি বা সিওপিডির রোগীদের এই সময়টাতে খুব কষ্ট হয়। ঠান্ডা বাড়লেই হাঁপানির টান ওঠে, রাতে শুলে শ্বাসকষ্ট হয়। আবার হাঁপানি যাঁদের নেই, কিন্তু অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাঁরাও শ্বাসকষ্টে ভোগেন মাঝেমধ্যেই। ক্রমাগত হাঁচি বা কাশির পরেই শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুকে সাঁই সাঁই আওয়াজও হয়। তখন হাত চলে যায় ইনহেলারের দিকেই। সমস্যা যাঁদের আছে, তাঁরা হাতের কাছে ইনহেলার রাখেনই। তবে তা ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানেন তো? ইনহেলার সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার না করলে লাভ কিছুই হবে না।
যে দু’ধরনের ইনহেলারের ব্যবহার বেশি হয়, সেগুলি হল ‘মিটারড-ডোজ় ইনহেলার’ (এমডিআই) এবং ‘ড্রাই পাউডার ইনহেলার’ (ডিপিআই)। তার মধ্যে ‘মিটারড-ডোজ় ইনহেলার’-এ্র ব্যবহারই বেশি। ইনহেলার যেমনই হোক না কেন, সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে ওষুধ খুব তাড়াতাড়ি ফুসফুসে গিয়ে পৌঁছবে এবং কষ্টেরও উপশম হবে।
‘মিটারড-ডোজ় ইনহেলার’ কী ভাবে ব্যবহার করবেন?
১) ইনহেলারটিকে হাতে নিয়ে ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড ধরে খুব জোরে ঝাঁকান। এতে ক্যানিস্টারের ভিতরের ওষুধ ভাল ভাবে মিশে যাবে।
২) মাউথপিসের কভারটি সরিয়ে নিন ও ভিতরটা পরিষ্কার আছে কি না দেখে নিন। পরিষ্কার না থাকলে শুকনো কাপড় দিয়ে আগে মুছে নিন। বার বার ব্যবহারের পরে মাউথপিস পরিষ্কার না রাখলে, সেখান থেকেই থুতু-লালা আবার মুখে ঢুকে সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
ইনহেলার ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি জেনে রাখা ভাল। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
৩) যদি ইনহেলারটি নতুন হয়, অথবা কয়েক সপ্তাহ ব্যবহার না করে থাকেন, তবে ব্যবহারের আগে এক থেকে দু’বার বাইরে স্প্রে করে নিন। এতে ওষুধের ডোজ় ঠিক থাকবে।
৪) এ বারে পাফ নেওয়ার আগে সোজা হয়ে বসুন বা দাঁড়ান এবং মাথা সামান্য পিছনের দিকে হেলান।
৫) গভীর ভাবে শ্বাস নিয়ে মুখ বা নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন।
৬) ইনহেলারের মাউথপিসটি দাঁতের মাঝে রাখুন এবং ঠোঁট দিয়ে শক্ত করে চেপে মুখ বন্ধ করুন। জিভ যেন বাধা না হয়।
আরও পড়ুন:
৭) এর পরে ধীরে ধীরে শ্বাস টেনে ইনহেলারের ক্যানিস্টারে তর্জনী দিয়ে জোরে চাপ দিন।
৮) চাপ দেওয়ার পর ৩ থেকে ৫ সেকেন্ড শ্বাস টেনে নিতে থাকুন ও তার পর শ্বাস ধরে রাখুন বেশ কিছু ক্ষণ। মুখ বন্ধ রাখতে হবে। এতে ফুসফুসে ওষুধ ঠিক ভাবে পৌঁছতে পারবে।
৯) ১০-২০ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখার পরে ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন।
১০) যদি দ্বিতীয় বার পাফ নিতে হয় অথবা চিকিৎসক একাধিক বার পাফ নিতে বলেন তা হলে, প্রথম পাফ নেওয়ার পর অন্তত ১-২ মিনিট অপেক্ষা করুন। তার পর আগের পদ্ধতিতেই ইনহেলারটি ব্যবহার করুন। অনেকেই এই নিয়ম না মেনে প্রথম পাফ নেওয়ার পর পরই দ্বিতীয় বার টান দেন। এটি না করাই ভাল।
ইনহেলার ঠিকমতো ব্যবহার করতে না পারলে উপকার হবে না। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
স্টেরয়েডযুক্ত ইনহেলার ব্যবহার করলে, প্রতি বার পাফের পরে মুখ কুলকুচি করে ধুয়ে নিতে হবে। না হলে ওষুধ মুখে জমে থেকে সেখানে ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে।
‘ড্রাই পাউডার ইনহেলার’ (ডিপিআই) ব্যবহারের পদ্ধতি
হাঁপানি বা সিওপিডির রোগীরা আরও এক ধরনের ইনহেলার ব্যবহার করেন, যেখানে ওষুধ গুঁড়ো করে বা শুকনো পাউডারের মতো অবস্থায় দেওয়া থাকে। এই ধরনের ইনহেলার এমডিআই থেকে কিছুটা আলাদা।
১) প্রথমে ডোজ় কাউন্টারে ওষুধের ডোজ় ভরে নিন।
২) কিছু ডিপিআই ইনহেলারে ক্যাপসুল ব্যবহার করতে হয়, যা ডিভাইসের চেম্বারে রেখে গুঁড়ো করে নিতে হয়। এই ইনহেলার ঝাঁকানোর প্রয়োজন নেই।
৩) ইনহেলারের ঢাকনা সরিয়ে পাফ নেওয়ার আগে গভীর ভাবে শ্বাস টেনে ধীর ধীরে শ্বাস ছাড়ুন।
৪) মাউথপিসটি মুখে রেখে ঠোঁট দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে থাকুন।
৫) এ বার মুখ দিয়ে খুব জোরে ও দ্রুত গতিতে পাফ নিন। ডিপিআই ইনহেলারে যেহেতু ওষুধ গুঁড়ো আকারে থাকে, তাই খুব জোরে পাফ নিতে হবে, যাতে শুকনো ওষুধ ফুসফুসে গিয়ে পৌঁছতে পারে।
৬) এ বার ইনহেলারটি মুখ থেকে সরিয়ে শ্বাস বন্ধ করে রাখুন। মুখ খোলা চলবে না। এই ভাবে ১০-২০ সেকেন্ড থেকে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। যত ক্ষণ দম ধরে রাখতে পারবেন, ওষুধ ততটাই দ্রুত এবং ভাল ভাবে ফুসফুসে গিয়ে পৌঁছবে। খেয়াল রাখতে হবে, শুয়ে থাকা অবস্থায় এমন ইনহেলার ব্যবহার করবেন না। সব সময়ে বসে বা দাঁড়িয়ে ব্যবহার করবেন।