সারা দিনের ক্লান্তির পর পায়ে ব্যথা হয়? আপনার মনে হতে পারে, এ তো স্বাভাবিক। কিন্তু সব সময়ে তা না-ও হতে পারে। পরিশ্রমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেকেই তাচ্ছিল্য করেন এ সব ব্যথাকে। রোজ একই জায়গায় ব্যথা হলে বুঝতে হবে, কোনও রোগের ইঙ্গিত রয়েছে তাতে। গোড়ালির বিভিন্ন অংশে ব্যথার এক এক অর্থ। সেই অনুযায়ী রোগ শনাক্ত করা হয়। অস্থিরোগ চিকিৎসক আরণ্যক সরকার গোড়ালি ব্যথার নেপথ্যে লুকিয়ে থাকা রোগগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন।
প্ল্যান্টার ফাসাইটিস
সকালে উঠে মাটিতে প্রথম পা ফেলতেই গোড়ালির নীচে যন্ত্রণা হয়? এমন ব্যথা প্ল্যান্টার ফাসাইটিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে। গোড়ালি ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ প্রকার এটি। আরণ্যক বলছেন, ‘‘আমাদের পায়ের তলায় একটি পাতলা চাদরের মতো আস্তরণ রয়েছে, যার নাম প্ল্যান্টার ফেসিয়া। সেটি যখন খুব শক্ত হয়ে যায়, তখন এই ব্যথা হতে পারে। চিনচিনে ব্যথা হয় এ ক্ষেত্রে।’’ অনেক ক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকলে অথবা স্ট্রেচিং না করলে এই সমস্যার প্রবণতা বাড়ে। দৌড়বিদদের পাশাপাশি, যাঁদের ফ্ল্যাট ফুট রয়েছে বা যাঁরা খারাপ মানের জুতো পরেন, তাঁদের ঝুঁকি বেশি। চিকিৎসক জানালেন, কিছু ওষুধ, ব্যায়াম এবং বিশ্রামে সেরে যেতে পারে এই অসুখ। তবে গুরুতর হয়ে গেলে পায়ের পাতায় ইঞ্জেকশনও দেওয়া হয়ক বা নরম কুশন দেওয়া হয় গোড়ালির ব্যথা সারানোর জন্য।
ক্যালকেনিয়াস স্পার
গোড়ালির হাড় হঠাৎ বেড়ে গেলে অনেক সময়ে ব্যথা হয়। সেই রোগটিকে ক্যালকেনিয়াস স্পার বলা হয়। চিকিৎসক বলছেন, ‘‘অনেকেই বলে থাকেন, গোড়ালির হাড়টা বেড়েছে। এটিই আসলে ক্যালকেনিয়াল স্পার। প্ল্যান্টার ফাসাইটিসের সঙ্গে সংযুক্ত এটি।’’
অ্যাকিলিস টেন্ডিনাইটিস
গোড়ালির নীচে নয়, পিছনে ব্যথা হয় এ ক্ষেত্রে। পায়ের পিছনের দিকের পেশি, অর্থাৎ গ্যাস্ট্রোসোলিয়ার টেন্ডনে যদি প্রদাহজনিত সমস্যা হয়, তা হলে তাকে বলা হয়, অ্যাকিলিস টেন্ডিনাইটিস। গোড়ালির হাড় অর্থাৎ ক্যালকেনিয়াসের সঙ্গে যুক্ত এই টেন্ডন। হাড় আর টেন্ডনের যে সংযোগস্থল, সেখানেই এই ব্যথা হয়। ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে অথবা জিমে পুরোদমে ব্যায়াম করলে বা গা গরম না করেই দৌড়নো শুরু করলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। গোড়ালির পিছনের অংশ শক্ত হয়ে যায় এ ক্ষেত্রে। এই ব্যথা কমানোর জন্য ঠান্ডা সেঁক, বা বিশ্রাম অথবা ওষুধে উপশম হতে পারে।
পায়ের পিছনের দিকের পেশির টেন্ডনে প্রদাহজনিত সমস্যা। ছবি: সংগৃহীত।
হিল বার্সাইটিস
শরীরে বার্সাই নামক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরল ভর্তি থলি রয়েছে। যা গাঁটগুলিকে সুরক্ষিত রাখে। সেই থলিগুলিতে বেশি তরল জমে গেলে প্রদাহ শুরু হয়। আর তখনই হিল বার্সাইটিস রোগ দানা বাঁধে। অতিরিক্ত চাপের ফলে শক্ত জায়গায় দীর্ঘ ক্ষণ হাঁটা, অথবা খারাপ মানের জুতো পরা হিল বার্সাইটিসের কারণ হতে পারে। প্রদাহ-বিরোধী ওষুধ, বিশ্রাম, ঠান্ডা সেঁক দিলে রোগ নিরাময় হতে পারে বলে জানালেন চিকিৎসক।
হ্যাগলন্ড ডিফর্মিটি
গোড়ালির পিছনের নির্দিষ্ট একটি হাড় বড় হয়ে গেলে এই সমস্যা দেখা দেয়। বেড়ে যাওয়া হাড়টি তখন ওই এলাকায় একই সঙ্গে অ্যাকিলিস টেন্ডন এবং বার্সাইগুলিতে চাপ দিতে শুরু করে। সব রকম সমস্যা তাই একসঙ্গে দেখা দেয়। আর সামগ্রিক ভাবে এই সমস্যাগুলিকে হ্যাগলন্ড ডিফর্মিটি বলা হয়। উঁচু হিল পরে চলাফেরা করলে হ্যাগলন্ড ডিফর্মিটি বাড়তে পারে। ওষুধ এবং ঠান্ডা সেঁকের পরেও যদি ব্যথা না কমে, সে ক্ষেত্রে হ্যাগলন্ড ডিফর্মিটি নিরাময়ের জন্য অস্ত্রোপচার করে বেড়ে যাওয়া হাড়টি বাদ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
সেভার্স ডিজ়িজ়
আরণ্যক বললেন, ‘‘সেভার্স ডিজ়িজ় হয় শিশুদের। খেলাধুলো, দৌড়নো, লম্ফঝম্প করলে বাচ্চাদের গোড়ালির এই সমস্যা দেখা দেয়। আসলে গোড়ালির পিছনের হাড়ে টান পড়ে তৈরি হয় রোগটি। আপনার সন্তান যদি খেলাধুলায় আগ্রহী হয়, তা হলে গোড়ালির যত্ন নেওয়াটাও দরকার। নয়তো এই সমস্যা দেখা দেবে বার বার।’’
এ ছাড়াও অতিরিক্ত দৌড়নো, হাঁটাহাঁটি, পরিশ্রম অথবা ভিটামিন ডি-র ঘাটতির কারণেও গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে বলে জানালেন চিকিৎসক।