বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রেশার, সুগার, হার্টের অসুখের মতো হাজারো রোগব্যাধি মাথাচাড়া দেবে, সে তো বোঝাই যায়, কিন্তু হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা শুধুমাত্র বড়দেরই নয়, কম বয়সিদের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে ইদানীং কালে। চিন্তাটা সেখানেই। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রকের একটি রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, এ দেশের স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যেও বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপ জনিত নানা সমস্যা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে, ‘পেডিয়াট্রিক হাইপারটেনশন’। দেশের নানা জায়গায় স্কুলগুলিতে সমীক্ষা চালিয়ে এমনটাই ধরা পড়েছে বলে দাবি।
মধ্যভারতের নানা জায়গায় সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে অন্তত ১.৪ শতাংশ ছেলেমেয়ে হাইপারটেনশনের শিকার। ছেলেদের মধ্যে তা প্রায় ২.৬ শতাংশ ও মেয়েদের মধ্যে ০.২ শতাংশের কাছাকাছি। পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন স্কুলে ও মহারাষ্ট্রের কিছু স্কুলে একই রকম সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, অন্তত ২৬০০ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৭.৫ শতাংশের হাইপারটেনশন রয়েছে। ‘জামা’ জার্নালে এই গবেষণার খবর প্রকাশিত হয়েছে।
রোগের এত বাড়াবাড়ি কেন?
জীবনযাপনের ধরনই কি উচ্চ রক্তচাপের কারণ? শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পালের বক্তব্য, শিশুদের চলাফেরা, দৌড়নোর সুযোগ এখন অনেক কমে গিয়েছে। তাদের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা বেড়েছে। শিশুরা শাকসব্জি বেশি খেতে চায় না, বদলে প্রক্রিয়াজাত মাংস, জ়াঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এর থেকে রক্তে কোলেস্টেরল দানা বাঁধছে কম বয়স থেকেই। দেখা দিচ্ছে ডায়াবিটিসের সমস্যাও। ফলে রক্তচাপের পাল্লা ভারীই হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
আবার কারও পরিবারে যদি হাইপারটেনশনে আক্রান্ত হওয়ার ধারা থাকে, সেই শিশুরও রক্তচাপের প্রবণতা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকবে।
অন্য দিকে, কিডনির অসুখের মতো কিছু রোগের কারণে শিশুদের মধ্যে হাইপারটেনশনের সমস্যা দেখা দেওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। সুতরাং, হাইপারটেনশনের সমস্যা থাকলে প্রথমেই চিকিৎসককে দেখে নিতে হবে শিশুটি কিডনির কোনও অসুখে আক্রান্ত কি না। কোনও শিশু দীর্ঘ দিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেলেও রক্তচাপ বাড়তে পারে।
নিয়ন্ত্রণের উপায় কী?
১) ফল, সব্জি, দানাশস্যের মতো খাবার রাখতে হবে রোজের ডায়েটে। রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রাণিজ প্রোটিন খেতে হবে। তবে, তা যেন ফ্যাট-বর্জিত হয়। পাশাপাশি, অতিরিক্ত নুন, চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
২) রোজ নিয়ম করে চল্লিশ থেকে ষাট মিনিট শিশুকে শারীরিক কসরত করতে হবে। বাইরে গিয়ে খেলাধূলার সুযোগ না থাকলে, বাড়িতে যোগাসন, ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম করা যেতে পারে।
৩) বাইরের খাবার খাওয়ার প্রবণতা এবং মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়া— এই দুই অভ্যাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে স্থূলত্বের সমস্যা কমবে। ফলে শিশুর রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৪) শিশুর ওজনের দিকে খেয়াল রাখুন। বয়সের তুলনায় ওজন বেশি বেড়ে যেতে দেবেন না। শিশুর ওজন যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেই অনুযায়ী সন্তানের খাদ্যতালিকা তৈরি করুন। দরকার হলে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।