Advertisement
E-Paper

জটিল অঙ্ক কষছে, ঝরঝরে ভাষায় লিখছে রচনা, হোমওয়ার্ক করতে কি এআই-নির্ভর হয়ে পড়ছে ছোটরা?

হোমওয়ার্ক করানো হোক বা প্রজেক্টের কাজ, যন্ত্রমেধার উপরেই কি নির্ভরতা বাড়ছে এখনকার প্রজন্মের? ইদানীং দেখা যাচ্ছে, স্কুলের হোমওয়ার্ক করতেও দিব্যি কৃত্রিম মেধা বা এআই-এর সাহায্য নিচ্ছে খুদেরা। সে কাজে তাদের সাহায্য করছেন বাবা-মায়েরাও।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৫ ১১:২৪
A Recent study reveals has raised concerns about the cognitive impact of AI use among young children

স্কুলের হোমওয়ার্কেও এআই, কী প্রভাব পড়ছে? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কঠিন অঙ্কটা কষতে না পারলে ক্লাসে বকাবকি করবেন শিক্ষিকা। তাই আর মাথা ঘামিয়ে কাজ কী! যে কোনও জটিল অঙ্কই দিব্যি কষে দেবে যন্ত্রমেধা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে অসংখ্য রোবট তৈরি হয়েছে, যারা যে কোনও জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতেই সক্ষম। বাংলা বা ইংরেজি রচনা লিখতে আর মাথা খাটানোর বা বই দেখার প্রয়োজন নেই। গুগ্‌ল সার্চ ইঞ্জিনে বিষয়টি নিয়ে খোঁজাখুঁজির কষ্টটাও বেকার। বিষয় যা-ই হোক না কেন, ঝরঝরে ভাষায় লেখা চলে আসবে চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই। যন্ত্রমস্তিষ্কই তাই পরিত্রাণের পথ হয়ে উঠেছে ছোটদের কাছে। হোমওয়ার্ক করানো হোক বা প্রজেক্টের কাজ, যন্ত্রমেধার উপরেই কি নির্ভরতা বাড়ছে এখনকার প্রজন্মের?

ইদানীং দেখা যাচ্ছে, স্কুলের হোমওয়ার্ক করতেও দিব্যি এআই-এর সাহায্য নিচ্ছে খুদেরা। সে কাজে তাদের সাহায্য করছেন বাবা-মায়েরাও। দিনভরের কর্মব্যস্ততার পর সন্তানের হোমওয়ার্ক নিয়ে মাথা খাটাতে তাঁদেরও হয়তো আর মন চাইছে না। অতএব যন্ত্রমেধাই ভরসা।

কয়েক সেকেন্ডে হাজার হাজার শব্দ লিখে ফেলা কিংবা নিমেষে জটিল কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়া— কৃত্রিম মেধার কাছে সবটাই যেন জলভাত। যে কোনও ধরনের প্রশ্ন করলেই সঙ্গে সঙ্গেই সে সব প্রশ্নের জবাব বলে দেবে কৃত্রিম মেধা পরিচালিত সফ্‌টঅয়্যার। মৌলিক কবিতা, নাটক কিংবা পরীক্ষার খাতায় প্রয়োজনীয় আস্ত রচনাও লিখে দেবে নিমেষে। যে কারণে এটি পড়ুয়াদের কাছে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর সেখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন গবেষকেরা।

গত বছর পেনসিলভানিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ছাত্র পিটার স্নিপভ্যানগার্সের এআই ব্যবহারের অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। তিনি জানান, ২ হাজার শব্দের একটি প্রতিবেদন লিখতে নির্দেশ দেন এআই-কে। আর প্রযুক্তির সাহায্যেই মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে নির্ভুল ভাবে ২০০০ শব্দের প্রতিবেদনটি লেখা হয়ে গিয়েছিল। সাধারণত, এই ধরনের বড় প্রশ্নের উত্তর মাথা খাটিয়ে লিখতে অনেক সময় লেগে যায়। এই বিষয়ে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-র গবেষকেরা একটি সমীক্ষা চালাচ্ছেন গত দু’বছর ধরে। তাঁরা জানাচ্ছেন, আমেরিকায় প্রায় ২৪ শতাংশ ছেলেমেয়ে তাঁদের স্কুলের পড়াশোনার কাজে এআই-কে কাজে লাগাচ্ছে। এদের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। স্কুলের হোমওয়ার্ক করা, অ্যাসাইনমেন্ট লেখা বা প্রজেক্টের কাজেও সহায়ক হয়ে উঠছে যন্ত্রমস্তিষ্ক।

হোমওয়ার্ক করতেও ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে অনেক খুদেই।

হোমওয়ার্ক করতেও ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে অনেক খুদেই। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

এই নিয়ে একটি গবেষণাও চলে। এমআইটির গবেষকেরা ৫৪ জন কচিকাঁচাকে নিয়ে একটি পরীক্ষা করেন। তাদের তিনটি দলে ভাগ করেন। প্রত্যেককে রচনা লিখতে দেওয়া হয়। একটি দল নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা খাটিয়ে লেখে, অন্য দল গুগ্‌ল হাতড়ে প্রয়োজনীয় তথ্য জোগাড় করে ও তৃতীয় দল পুরোপুরিই এআই-কে কাজে লাগিয়ে রচনাটি লিখে ফেলে। এর পরে ইলেক্ট্রোএনসেফ্যালোগ্রাফি (ইইজি) যন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে গবেষকেরা দেখেন, যে দল নিজের বুদ্ধি ও সৃজনশীলতা দিয়ে রচনা লিখেছিল তাদের বুদ্ধিমত্তা ও মেধা অনেক বেশি, যারা গুগ্‌লের সাহায্য নেয় তাদের আত্মবিশ্বাস কম ও যারা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছে তাদের চিন্তাশক্তি ও ভাবনার পরিসর একেবারেই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। কোনও কাজেই তারা সঠিক ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ। যন্ত্রমস্তিষ্কের উপর নির্ভরশীলতাই এই ক্ষতির কারণ। এই উদাহরণ কেবল বিদেশে নয়, এ দেশেও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। স্কুল থেকে দেওয়া যে কোনও প্রজেক্টের কাজে এখন কৃত্রিম মেধারই সাহায্য নিচ্ছে ছোটরা। এতে কাজটি অনেকাংশেই নির্ভুল হচ্ছে এবং সময়ও বাঁচছে। ফলে ছোটদের আগ্রহও উত্তরোত্তর বেড়ে যাচ্ছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম মেধার বাড়বাড়ন্তে প্রমাদ গুনছেন অনেকেই। এআই-নির্ভর সফ্‌টঅয়্যারগুলি যে সম্পূর্ণ খারাপ, তা তো নয়! অনেক জটিল বিষয় নিয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে নতুন তথ্যের জোগান দিয়ে সহায়ক হতে পারে তা। তাই সবটাই নির্ভর করছে কী ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই বিরাট সম্ভাবনাকে ব্যবহার করা হচ্ছে, তার উপর। শিক্ষকদের আশঙ্কা, এই প্রযুক্তির জন্য পড়ুয়াদের জানার আগ্রহ বা শিক্ষা, দুই-ই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে এই প্রযুক্তি সাহায্য করলেও অভিনব ফল করার ক্ষেত্রে শেষ কথা বলবে মেধাই। শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ভাবার ক্ষমতা কিংবা সৃজনশীলতা কতটা, সেটাই বিচার্য বিষয় হবে একটা সময়ে।

বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়েই পড়াশোনা করার পরামর্শ দিচ্ছেন শিক্ষকেরা।

বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়েই পড়াশোনা করার পরামর্শ দিচ্ছেন শিক্ষকেরা। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

বাবা-মায়েদের কী করণীয়?

১) সন্তানকে ভাবনাচিন্তা করার পরিসরটুকু দেওয়া প্রয়োজন। কঠিন অঙ্ক কষতে সময় লাগতেই পারে, বা সেটির সমাধান চটজলদি না-ও হতে পারে। তবুও চেষ্টাটা করে যাওয়া উচিত বলেই মনে করছেন গবেষকেরা।

২) হোমওয়ার্ক করা বা অ্যাসাইনমেন্ট লেখার কাজে এআই-এর সাহায্য নেওয়া যেতেই পারে, তবে এর ব্যবহার হতে হবে পরিমিত। সাহায্য নেওয়াটা যেন টুকে দেওয়ার পর্যায়ে চলে না যায়।

৩) নিজে থেকে লেখা, বা ভেবেচিন্তে জটিল সমস্যার সামধান বার করে ফেলার মধ্যে যে সৃষ্টির আনন্দ আছে, তা বোঝাতে হবে ছোটদের। যন্ত্রমেধাও যে সব সময়ে সঠিক ও নির্ভুল উত্তর দেবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।

৪) সন্তান এআই থেকে কী লিখছে, পড়াশোনার সময়ে কতটা ব্যবহার করছে, সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে অভিভাবকদের। প্রযুক্তি যেন তাদের মেধার বিকাশে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সে খেয়াল রাখতে হবে।

Artificial Intelligence Parenting Tips Child Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy