লেখা পরীক্ষায় যতটা না ভয় হয়, মৌখিক পরীক্ষা থাকলে ভয়টা যেন দ্বিগুণ হয়ে যায়। পরীক্ষার আগের দিন থেকেই ভীষণ উদ্বেগে ভোগে অনেকে। পরীক্ষা দিতে গিয়ে জানা উত্তরও ভুল বলে আসে। অথবা উত্তরই দিতে পারে না ঠিক মতো। তার মানে যে প্রস্তুতি পর্বে গলদ ছিল, তা নয়। কেবল শিক্ষক বা শিক্ষিকাদের সামনে বসে প্রশ্নের উত্তর দেওয়াতেই যত ভয়। এই ভীতি দূর হবে কী ভাবে?
পরীক্ষার আগে বুক ধড়ফড় করে, একটু চিন্তা হয়— সেটাই স্বাভাবিক। পরীক্ষা নিয়ে একেবারে হেলদোল না থাকাটা কাম্য নয়। এমনটাই জানাচ্ছেন, মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। তবে, পরীক্ষার ভয়কে মনের উপর চেপে বসতে দিলেও চলবে না। বছরভর যা পড়া হয়েছে, পরীক্ষার সময়ে তার ষোলো আনা দিতে হলে মনের জোরটাই আসল। মৌখিক পরীক্ষায় তা আরও বেশি করে মনে রাখতে হবে। কারণ খাতায় যখন লেখা হচ্ছে, তখন তা কেউ দেখতে পাচ্ছে না। তবে উত্তর বলার সময়ে আরও পাঁচজন শুনছে। আতঙ্কটা হয় সেখানেই। আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলে বা মেলামেশা করতে অস্বস্তি বোধ করে, এমন শিশুরাই মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে বেশি উদ্বেগে ভোগে। এমনও দেখা গিয়েছে, মৌখিক পরীক্ষার আগের দিন বা পরীক্ষা দিতে যাওয়ার কিছু আগে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হয়েছে অনেকের।
তবে শুধু ছোটদের বেলায় নয়, একটু উঁচু ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরাও কিন্তু অনেকেই পরীক্ষা নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগে ভোগেন। তবে তাঁদের ভয়ের কারণ ও মাত্রা ছোটদের মতো নয়। আর এই ভয়ের জেরে ফলাফল আরও খারাপ হয়। জানা প্রশ্নেরও উত্তর ভুল হয়।
আরও পড়ুন:
ভয়কে জয় করা যাবে কী ভাবে?
সন্তানের ভয়ের জায়গাটাও দূর করতে হবে। তার জন্য বাড়ির পরিস্থিতিও ঠিক রাখতে হবে। সন্তানের পরীক্ষাকে যেমন অবহেলা করবেন না, তেমনই তা নিয়ে অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা প্রকাশেরও দরকার নেই।
উৎকণ্ঠা প্রকাশের ভঙ্গি কিন্তু সন্তানের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। বিষয়টিকে সহজ ও সাধারণ ভাবেই নেওয়া উচিত। বরং সন্তানের সঙ্গে বসে আলোচনা করুন। যে বিষয়ে মৌখিক পরীক্ষা হবে, সেই বিষয়ে সে কতটা জানে, কী কী প্রশ্ন হতে পারে, তার উত্তরই বা কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা করুন আগে থেকেই।
প্রশ্ন এবং উত্তর ভাষায় লিখে আয়নার সামনে বলা অভ্যাস করতে হবে৷ সন্তানকে সামনে বসিয়ে আপনিই প্রশ্ন করুন। বলুন খাতা না দেখে উত্তর দিতে৷ পরের ধাপে বাড়ির কয়েক জনকে প্রশ্নোত্তর পর্বে থাকতে বলুন। এতে অনেকের সামনে উত্তর দেওয়ার অভ্যাস তৈরি হবে। পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে ভয় পাবে না।
বিষয়ের বাইরেও কিছু প্রশ্ন করুন। ভেবেচিন্তে উত্তর দেওয়া ও অজানা প্রশ্নের মোকাবিলা করা সহজ হবে৷ কোনও বিষয়ে দু’-তিন মিনিট বলা অভ্যাস করান। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
সন্তানের উপর প্রত্যাশার ভার চাপিয়ে দেবেন না। কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়। সন্তানকে বিচার করুন ওর নিজের মাপকাঠিতে। বাড়িতে সে যে ভাবে পড়াশোনা নিয়ে কথা বলে, বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে, তেমন ভাবেই যেন প্রশ্নের উত্তর বলে। আলাদা করে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে বলে উদ্বেগে ভোগার কিছু নেই। বরং প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় ও নিজের মতো করে গুছিয়ে বলাই জরুরি।
পরীক্ষার আগের দিন খুব বেশি চাপ নিয়ে পড়ার প্রয়োজন নেই। বরং যেটুকু পড়েছে, তা ঝালিয়ে নিতে হবে। একটানা না পড়ে বরং খেলাধুলা করা, ছবি আঁকা বা গল্পের বইও পড়তে পারে। এতে মানসিক চাপ কমবে।
ঘুমের সময় কিন্তু খুব একটা কাটছাঁট করবেন না৷ কারণ, ঠিক মতো না ঘুমোলে পড়ায় মন বসবে না৷ পড়া মনে রাখতেও অসুবিধে হবে৷ ডিপ ব্রিদিংয়ের জন্য সকাল–বিকেল দশ মিনিট করে রাখুন৷ আধ ঘণ্টা রাখুন আড্ডা, বেড়ানো ইত্যাদির জন্য৷ পড়া মনে রাখতে গেলে এ সবের দরকার আছে৷