শীত আসছে। বাতাসে এখন থেকেই হিমেল পরশ। গাল, হাতের চামড়ায় টান ধরতে শুরু করেছে। অনেকে এখন থেকেই রাতে ক্রিম, অলিভ অয়েল মাখা শুরু করে দিয়েছেন। তবে তাতে শুষ্ক ত্বকের সমস্যার যে খুব একটা সমাধান হচ্ছে তা নয়। ক্রিম বা তেল যতই মাখুন, রাস্তায় বেরোলে ত্বকে টান ধরবেই। একেই মরসুম বদলের সময়, তার উপরে পরিবেশে এত দূষণ যে ত্বক তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারাচ্ছে দিন দিন। শুধু শুষ্কই হচ্ছে না, তাতে দাগছোপও পড়ছে। এই সব সমস্যার সমাধানের উপায় হিসেবে অনেকেই সালোঁয় গিয়ে প্রচুর টাকা খরচ করে স্পা বা ফেশিয়াল করাচ্ছেন। তাতে লাভ হচ্ছে সাময়িক। যদি সারা বছরই ত্বক নরম ও টানটান রাখতে হয়, তা হলে ভিতর থেকে পুষ্টি প্রয়োজন। সেই পুষ্টি জোগাবে কাঞ্জি।
বাঙালিদের মধ্যে কাঞ্জি খাওয়ার চল খুব একটা নেই। দক্ষিণ ভারত ও উত্তর ভারতের কিছু জায়গায় কাঞ্জি খুবই জনপ্রিয় পানীয়। যেহেতু গেঁজিয়ে তৈরি হয়, তাই এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিক থাকে। শরীরে যেমন খারাপ ব্যাক্টেরিয়া আছে, তেমনই উপকারী ব্যাক্টেরিয়াও আছে। প্রোবায়োটিক হল এমন কিছু জৈব পদার্থ, যা শরীরে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়। ভাল ব্যাক্টেরিয়া খাদ্য বিপাকে সাহায্য করে। হজম ক্ষমতা বাড়ায়। শরীর ‘ডিটক্স’ করে। বাইরের প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে অন্ত্রে খারাপ ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যাও বাড়ে। এই খারাপ ব্যাক্টেরিয়াগুলি নষ্ট করার জন্যই প্রয়োজন প্রোবায়োটিক। এই প্রোবায়োটিক ত্বকেরও যত্ন নেয়। তাই কাঞ্জি এমন ভাবে বানাতে হবে যা শুধু খেতেই ভাল হবে না, রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বকের যত্নও নেবে এবং শরীর থেকে টক্সিনও দূর করবে।
আরও পড়ুন:
শীতের কাঞ্জি কী ভাবে বানাবেন?
কাঞ্জি তৈরি করতে হবে গাজর ও বিট দিয়ে।
উপকরণ:
৪-৫টি মাঝারি মাপের গাজর
১টি বিট
দেড় লিটার জল
১ চামচ সর্ষে
আধ চামচ লঙ্কাগুঁড়ো
আধ চামচ হলুদগুঁড়ো
প্রণালী:
গাজর ও বিট ছাড়িয়ে নিয়ে লম্বা লম্বা টুকরো করে নিন। এ বার বড় কাচের জারে গাজর ও বিটের টুকরো গুলি রাখুন। জার একটু বড় মাপের নিতে হবে। এর পর সেই জারে দিন সর্ষে, বিটনুন, লঙ্কা ও হলুদ গুঁড়ো। জল যোগ করে ভাল করে নেড়ে নিন। জারটি মসলিনের পাতলা কাপড় বা সুতির কাপড় দিয়ে ভাল ভাবে ঢেকে রোদে রেখে দিন। ৪-৫ দিন জারটি এই ভাবে রোদে রাখতে হবে। ৫ দিন পরে দেখবেন পানীয়টির রং বদলে গিয়েছে। সেটি গেঁজিয়ে উঠেছে। এ বার ভাল করে চামচ দিয়ে নেড়ে পানীয়টি ছেঁকে অন্য একটি পরিষ্কার জারে ঢেলে নিন। এই পানীয় ফ্রিজে রেখে রোজ খেতে পারেন।
গাজর ও বিট গেঁজিয়ে তৈরি এই পানীয় অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখবে। হজমপ্রক্রিয়া ভাল হবে, ফলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্যও বাড়বে। কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্বলের সমস্যাও দূর করবে এই পানীয়। নিয়মিত খেলে ত্বকে ব্রণ, ফুস্কুড়ি বা র্যাশের সমস্যা কমবে। দাগছোপ উঠে যাবে। ত্বক জেল্লাদার হয়ে উঠবে। বিটে প্রাকৃতিক ভাবে নাইট্রেট থাকে যা ত্বকের কোষের অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে। রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এতে বলিরেখা দূর হয় ও ত্বকের তারুণ্য বজায় থাকে। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস কাঞ্জি খেলে শরীর ডিটক্স হবে। আবার দুপুরের খাওয়ার পরেও খেতে পারেন।