আজকের সময়ে হৃদ্রোগ একটি অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হার্ট অ্যাটাক বা চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্র্যাকশন’ রোগীর মৃত্যুর প্রধান কারণ। ঠিকঠাক সময়ে সমস্যা ধরা না গেলে বা চিকিৎসা শুরু করা না গেলে অনেক ক্ষেত্রেই বেঁচে ফেরার আশা কম থাকে। হঠাৎ বুকে ব্যথা, অস্বস্তি, বুকের উপর কোনও ভারী কিছু চেপে থাকার অনুভূতি মানেই তা হার্টের রোগ কি না, তা বোঝা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই, যদি বিপদ এড়াতেই হয়, তা হলে একটি পরীক্ষা অবশ্যই করিয়ে রাখতে হবে। বয়স ৪০ বা ৫০ পার হলে পরীক্ষাটি করানো অতি জরুরি।
‘পাবমেড’ থেকে প্রকাশিত একাধিক গবেষণাপত্রে এই পরীক্ষাটি নিয়ে লেখা হয়েছে। হার্টের চিকিৎসক দিলীপ কুমারও জানিয়েছেন, পরিবারে হৃদ্রোগের ইতিহাস থাকলে বা কোলেস্টেরল-ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেশি হলে পরীক্ষাটি করিয়ে রাখা জরুরি। এর নাম ‘করোনারি ক্যালশিয়াম স্ক্যান’। মাত্র পাঁচ মিনিটের একটি পরীক্ষা, যা হার্টের ধমনীর খুঁটিনাটি স্ক্যান করে দেখে নেয়। ধমনীতে ব্লকেজ় হচ্ছে কি না বা হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না, তা অনেক আগেই ধরা পড়বে এই পরীক্ষায়। হৃৎপিণ্ডের ধমনী বা করোনারি আর্টারিতে ক্যালশিয়ামের স্তর জমা হলেই রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তখনই ধমনীতে ব্লকেজ় হয়। এই পরীক্ষাটি সেই সমস্যাই চিহ্নিত করবে অনেক আগে।
আরও পড়ুন:
হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অন্যতম কারণই হল ধমনীতে এই ব্লকেজ়। হৃৎপিণ্ডের নিজস্ব ধমনীগুলির (করোনারি আর্টারি) মধ্যে কোনও একটি ধমনীতে এই সমস্যা হয়। সেখানে ক্যালশিয়ামের স্তর জমে গিয়ে রক্ত চলাচল ব্যাহত হতে থাকে। একে বলে ‘এথেরোস্ক্লেরোসিস’। ধীরে ধীরে সেই জমা হওয়া ক্যালশিয়ামের পরিমাণ বাড়তে থাকে অর্থাৎ ব্লকটি বড় হতে থাকে। কোনও কারণে, এই ব্লক ফেটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে অনুচক্রিকারা এসে সেই অংশের রক্তকে জমাট বাঁধিয়ে দেয় এবং ধমনীর মধ্যে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বড়সড় সমস্যা দেখা দেয়। সেই ধমনী হার্টের যে অংশের মাংশপেশিকে রক্ত সরবরাহ করত এত দিন, তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সেই মাংসপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শুরু করে। তবে তা একদিনে হয় না। দীর্ঘ সময় ধরে ধীরে ধীরে হতে থাকে। এবং এক সময়ে গিয়ে আচমকা হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়।
করোনারি ক্যালশিয়াম স্ক্যান করানো থাকলে আর আচমকা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। কারণ ধমনীর ভিতর কী ঘটছে তা জানা যাবে আগেই। সেই মতো চিকিৎসাও শুরু হয়ে যাবে। পরিবারে উচ্চ কোলেস্টেরল, হাইপারটেনশন বা হৃদ্রোগের ইতিহাস থাকলে পরীক্ষাটি করিয়ে রাখতেই হবে।