হয়তো, হঠাৎই ঠিক হল ঘুরতে যাবেন বা অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ এল। তাতে একটু চিন্তাতেই পড়ে গেলেন। কারণ বিশেষ উপলক্ষের জন্য প্রস্তুত হতে পার্লার যাওয়ার সময় বার করতে পারছেন না। প্রসাধনী দিয়ে জেল্লা তো অনেকটাই আনতে পারবেন কিন্তু সমস্যা হবে অবাঞ্ছিত রোম নিয়ে। সমাধান হল রোম তোলার ঘরোয়া পদ্ধতি। আগে তো আর এত রূপবিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার চল ছিল না। তখন ত্বক মসৃণ ও রোমমুক্ত রাখতে প্রাকৃতিক উপাদানের উপরে নির্ভর করতেন মেয়েরা। যাঁরা রাসায়নিক বা কৃত্রিম উপাদান ত্বকে ব্যবহার করতে চান না, তাঁরা আজও প্রাকৃতিক প্যাকগুলিকেই ভরসা করেন। এ ছাড়া, এখন রোমমুক্তির আরও কিছু সহজ কৌশলও রয়েছে। বাড়িতে ওয়্যাক্সিং করলে পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ভাবনা থাকে না এবং তা সাশ্রয়ীও বটে। ব্যক্তিগত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবাঞ্ছিত রোমও চুপিসারে পরিষ্কার করা যায়। তাই পদ্ধতিগুলো জেনে রাখা ভাল। উৎসবের মরসুম চলছে। ত্বক ঝকঝকে, মুখ নির্লোম রাখার প্রয়োজন তো থাকবেই।
ক্লিয়োপেট্রার সময় থেকে
শোনা যায়, ক্লিয়োপেট্রা নাকি রোমমুক্ত থাকতে ‘সুগারিং’ করতেন। প্রাচীন এই বডিপ্যাককে আধুনিক ওয়্যাক্সিং-এর পথপ্রদর্শক বলা হয়। দু’কাপ চিনি গলিয়ে রস করে, তাতে ১/২ কাপ জল আর চার চামচ লেবুর রস মিশিয়ে এই প্যাক তৈরি করে ব্রাশ দিয়ে দেহে রোমের বৃদ্ধির দিকে লাগান। ১০-১৫ মিনিট পরে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বৃদ্ধির উল্টো দিকে টান দেবেন। রোম তো উঠবেই, স্ক্রাবিং-এর কাজও হবে। মৃত কোষ আর ট্যানও উঠে যাবে। কাপড়ের বদলে এখন অনেকেই ওয়্যাক্সিং স্ট্রিপ ব্যবহার করেন।
সুগারিং ছিল মিশরের সুন্দরীদের পছন্দের রোমমুক্তির পদ্ধতি। ভারতেও কিছুটা কাছাকাছি পদ্ধতিতে রোম পরিষ্কারের চল ছিল। সেটা এখনকার হানি ওয়্যাক্সিং-এর পূর্বসূরি। দু’কাপ চিনি, দু’টি লেবু ও আধ কাপ জল একসঙ্গে মিশিয়ে গরম করতে থাকুন। মিশ্রণটি ঘন হওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন। লেইয়ের মতো তৈরি হয়ে গেলে দু’চামচ মধু মেশান। তার পর গরম লেই সইয়ে সইয়ে দেহে রোমবৃদ্ধির দিকে লাগান। ৫-১০ মিনিট বাদে কাপড় বা কাগজের স্ট্রিপ দিয়ে উল্টো দিকে টান দিলে লোম গোড়া থেকে উঠে আসবে।
দুধ ও হলুদের মিশ্রণ দিয়েও রোম তোলা যায়। আধ কাপ জল, আধ কাপ দুধ আর দু’চামচ চিনি ফুটিয়ে ঘন করে এক চামচ করে বেসন, হলুদ গুঁড়ো আর আধ চামচ নারকেল তেল মেশান। এই প্যাকটি জল দিয়ে স্ক্রাব করে তুলে নিন। রোম উঠবে, সঙ্গে ত্বক পরিষ্কার হয়ে যাবে। হলুদ ও কাঁচা পেপের মিশ্রণও ব্যবহার করতে পারেন। পেঁপের রস রোমের গোড়া আলগা করে দেয়। কাঁচা পেঁপে থেঁতো করে হলুদ গুঁড়োর সঙ্গে মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট ত্বকে রেখে দিন। ঘষে ঘষে তুলে নিন। শেষের দু’টি পদ্ধতি সপ্তাহে বার তিনেক করলে রোমমুক্ত ত্বক পাওয়া সম্ভব। পাশ্চাত্যে রোম তোলার জন্য কর্নফ্লাওয়ার ও চিনির সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে ঘন পেস্ট বানিয়ে সারা শরীরে লাগানোর রীতি রয়েছে। এই ফেস ও বডি মাস্ক শুকিয়ে গেলে সন্তর্পণে টেনে তুলতে হয়। এই প্যাকগুলি নিরাপদ। রোম তো ওঠেই, তার বাড়বৃদ্ধিও কমে যায়। সঙ্গে ত্বকে চেকনাই আসে।
সহজতর কৌশল
আরও কম সময়ে রোম তুলতে চাইলে বাড়িতেই রেজ়র, ডিপিলেটরি তো রয়েছেই। ফিমেল রেজ়র সবচেয়ে সুবিধাজনক। এগুলি আগের চেয়ে অনেক উন্নত হলেও কিছু ঝামেলা ও সাবধানতা রয়েছে, অনেকেই জ্বালা ভাবের কথা বলেন। তাই সে ক্ষেত্রে অনেকেরই বেশি পছন্দ ডিপিলেটরি বা ওয়্যাক্সিং ক্রিম। এটা লাগিয়ে কিছুক্ষণ পরে স্প্যাচুলার সাহায্যে রোম তুলে ফেলা হয়। তবে দু’ক্ষেত্রেই প্রভাব সাধারণত খুব বেশি দিন থাকে না। সংবেদনশীল অংশে এগুলি দিয়ে রোম তুললে সমস্যা হতে পারে।
তাই ইদানীং বাড়িতে রোম তোলার ক্ষেত্রে এপিলেটরের দিকে ঝুঁকেছেন অনেকে। এগুলি নানা আকৃতির ইলেকট্রনিক যন্ত্র। ব্যবহার সোজা। বিশেষত মুখের বাড়তি রোম পরিষ্কার করতে টুইজ়ারের চেয়ে এপিলেটর অনেক কার্যকর। ছোট ছোট সূক্ষ্ম রোম তোলা যায় এবং গোড়া থেকে উপড়ে দেয় বলে ত্বক পরিষ্কার থাকে প্রায় এক মাস।
বাড়তি যত্ন প্রয়োজন
- ওয়্যাক্সিং-এর আগে ত্বক স্ক্রাব করে পরিষ্কার করে নিলে ভাল ফল পাবেন। বারবার ত্বকের একই জায়গায় ওয়্যাক্সিং করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। কোনও অংশে আশানুরূপ ফল পাননি মনে করলে দু’দিন পরে আর এক বার রোম তোলার চেষ্টা করুন।
- রোম তোলার পরে ময়শ্চারাইজ়ার বা অ্যান্টিসেপটিক জেল লাগান।
- যে ভাবেই রোম তুলুন, আগে হাতের এক অংশে প্যাচ টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত। ওয়্যাক্সিং-এর পর র্যাশ বার হলে পরিষ্কার সুতির কাপড়ে বরফ ভরে ঠান্ডা সেঁক দিন। পরে নারকেল তেল, এসেনশিয়াল অয়েল অথবা অ্যালো ভেরা জেল লাগাবেন।
- রোম নির্মূল করার প্রক্রিয়ায় ত্বকের উপরের পাতলা পরত উঠে যায়। অন্তত ২৪ ঘণ্টা প্রসাধনী এবং দু’দিন সূর্যরশ্মি এড়িয়ে যেতে পারলে ভাল, নয়তো ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। স্ক্রাবও করবেন দু’-তিন দিন বাদে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)