সাধারণ জ্বর-সর্দি বা কঠিন কোনও ব্যামো— যা-ই হোক না কেন, চিকিৎসকের কাছে গেলে আগে রোগীর জিভ দেখতে চান তাঁরা। কারণ, শরীরে অস্বাভাবিক কিছু ঘটলেই জিভে তার লক্ষণ ফুটে ওঠে, যা দেখে রোগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। জিভের রং সাধারণত গোলাপি বা গাঢ় গোলাপি হতে পারে। কিন্তু সে রং বদলে লাল, বেগনি বা কালচে হতে শুরু করলেই মুশকিল। তার উপর জিভের পাশে যদি ব্রণ বা ফোলা মাংসপিণ্ড গজায়, অথবা জিভের উপর সাদা আস্তরণ পড়ে যায়, যা খুবই সাধারণ সমস্যা, তা হলে সেটি কিসের লক্ষণ, তা-ও বোঝা যাবে। এ ছাড়া কিছু রোগের ক্ষেত্রেও জিভে দেখেই যাচাই করেন চিকিৎসকেরা। কোন লক্ষণের কী মানে, তা কী ধরনের শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা বিশদে জানিয়েছেন আমেরিকার হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকেরা।
জিভের রং
লালচে রং বা গাঢ় লাল রং মানে হল জ্বর, অতিরিক্ত উদ্বেগ বা ভিটামিন বি-এর অভাব।
জিভের রং যদি ফ্যাকাসে হতে থাকে, তা হলে বুঝতে হবে শরীরের প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানগুলির ঘাটতি হচ্ছে। রক্তাল্পতার কারণেও এমন হতে পারে।
নীলচে বা বেগনি রং বোঝাবে শরীরে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হচ্ছে। হার্ট বা ফুসফুসের রোগের পূর্বলক্ষণও হতে পারে।
আরও পড়ুন:
জিভের রং হলদেটে হয়ে গেলে বুঝতে হবে লিভার ভাল নেই। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হলে এমন হতে পারে।
জিভের আস্তরণ
সাদাটে আস্তরণ মানে ছত্রাক বা ব্যাক্টেরিয়ার বাড়বাড়ন্ত। মুখের ভিতরেই ‘ক্যান্ডিডা ইস্ট’ নামের এক প্রকার ছত্রাক থাকে। এই ছত্রাকটি মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলেও জিভে সাদাটে আস্তরণ তৈরি হতে পারে। একেই বলে ওরাল থ্রাশ। সাধারণত এটি গুরুতর সমস্যা না হলেও ওরাল থ্রাশ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
হলুদ বা সবুজ আস্তরণ পড়তে থাকলে বুঝতে হবে সংক্রামক ব্যাক্টেরিয়া বাসা বাঁধছে শরীরে।
জিভের উপর কালচে আস্তরণ বা ছোপ ছোপ কালো দাগ হয় অনেকের। অতিরিক্ত ধূমপান বা মদ্যপানের কারণে এমন হতে পারে। তা ছাড়া অ্য়ান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও হতে পারে।
অন্যান্য লক্ষণ
১) জিভ ফুলে গেলে বুঝতে হবে হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যাচ্ছে। জিভে ফোলা ভাব, ব্যথার অর্থ হল অ্যালার্জি বা থাইরয়েডের সমস্যা।
২) জিভের দু’পাশে ফোলা ভাব, লালচে মাংসপিণ্ড দেখা দিতে থাকলে বুঝতে হবে ভিটামিন বি এবং আয়রনের ঘাটতি।
৩) জিভের উপর লাল লাল ছোপ, ক্ষতের দাগ দেখা দেয় অনেকের। নানা কারণে তা হতে পারে— উদ্বেগ, থাইরয়েডের সমস্যা, জলের ঘাটতি বা ডিহাইড্রেশন এবং কিছু ক্ষেত্রে মুখে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ।
৪) জিভ শুকিয়ে যাওয়া, মুখের ভিতরে শুষ্ক ভাব দেখা দিলে বুঝতে হবে শরীরে জলের ঘাটতি হচ্ছে। ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হলেও এমন হতে পারে। আবার কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।