দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম না বুঝলে বড়ই মুশকিল। কারণ সমস্যা শুধু দাঁত বা মাড়িতে নয়, এমন অনেক রোগ আছে, যার পূর্বলক্ষণই হল দাঁতে ব্যথা বা মাড়ি ফুলে যাওয়া। দাঁতে চিনচিনে ব্যথা রোজই হচ্ছে বা মাড়ি ফুলে লাল হয়ে যাচ্ছে মানেই গুচ্ছের ব্যথানাশক ওষুধ কিনে খেয়ে ফেললেন বা অ্যান্টিসেপ্টিক মলম লাগিয়ে নিলেন মাড়িতে, তাতে কিন্তু সমস্যা কমবে না। উল্টে রোগ তলে তলে ছড়াতে থাকবে। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, দাঁত ও মাড়ির অনেক সমস্যাই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এগুলি সঠিক সময়ে খেয়াল করলে ও চিকিৎসকের কাছে গেলে, অনেক জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
দাঁত ও মাড়ির কোন কোন সমস্যা এড়িয়ে গেলেই বিপদ?
মাড়ি থেকে রক্তপাত, মুখে দুর্গন্ধ
এই সমস্ত উপসর্গ দেখা দিলে কেউ হয়তো ভাববেন, ঠিকমতো দাঁত মাজা হয় না বলে সমস্যা। দিনে দু’বার নিয়ম করে দাঁত মাজা, মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচি করার পরেও কিন্তু মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। তার জন্য মাজন বা মাজার ধরন, কোনওটিই দায়ী নয়। বরং রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে যোগ রয়েছে এই সমস্যা্ যার নাম পেরিয়োডন্টাইটিস। এই রোগ হলে দাঁত ও মাড়ির সংলগ্ন কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, তখন দাঁতে প্রবল যন্ত্রণা হয়, মাড়িতে ঘা হতে পারে। এই সব লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে, তখন দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
দাঁতে যন্ত্রণা, লাল হয়ে ফুলে উঠেছে মাড়ি
অতিরিক্ত ধূমপান, অপুষ্টি, ডায়াবিটিস এবং স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে মাড়িতে সংক্রমণ ঘটে। তখন খাবার খেলে দাঁত শিরশির করে, মাড়ি লাল হয়ে ফুলে যায়, যন্ত্রণা সারতে চায় না। এই সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে জিঞ্জিভাইটিস। এমন হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
ব্রাশ করেও দুর্গন্ধ যাচ্ছে না
সাধারণত দাঁত, দাঁতের গোড়া, মাড়ি, জিভ, মুখগহ্বরে কোনও সংক্রমণ হলে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। যদি দেখেন, দু’বেলা ব্রাশ করেও মুখের গন্ধ যাচ্ছে না, তা হলে বুঝতে হবে সমস্যা অন্য জায়গায়। অম্বলের সমস্যা থাকলেও কিন্তু মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। সাইনাসের ক্ষেত্রে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। সাইনাস হলে গাঢ় হলুদ বা সবুজ রঙের মিউকাস বেরিয়ে আসে নাক কিংবা মুখ দিয়ে। এই কারণেও কিন্তু মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। ভিটামিন ডি-র ঘাটতির কারণে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন আপনি। দেহে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না থাকলে দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ক্ষয়ে যেতে পারে এনামেল। ফলে দাঁতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, যা মুখের দুর্গন্ধের কারণ।
জিভের নীচে মাংসপিণ্ড
জিভের নীচে কিংবা গালে ঘা হলে খাওয়াদাওয়া করতে বা কথা বলার সময়ে প্রবল সমস্যার মুখে পড়তে হয়। এ রকম সমস্যাই হল মুখে আলসারের লক্ষণ। মুখগহ্বরে লাল বা সাদা আস্তরণ পড়লে, মাংসপিণ্ড তৈরি হলে সতর্ক হতে হবে। যদি দেখা যায়, ক্ষত বেড়ে চলেছে এবং ক্ষতস্থান ও তার আশপাশ শক্ত হয়ে যাচ্ছে, তা হলে দেরি করা ঠিক হবে না। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, হরমোনের সমস্যার কারণে মুখের ভিতরে আলসার হয়। এ ছাড়া শরীরে ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি-এর ঘাটতির কারণেও এই রোগ হতে পারে। এই ধরনের মাংসপিণ্ড সাধারণত কম ক্ষতিকারক, তবে যদি দেখা যায়, জিভে অসংখ্য ছোট ছোট ঘা হচ্ছে এবং দাঁতও নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। দাঁত মাজতে গেলে রক্ত বার হচ্ছে, তা হলে দেরি করা ঠিক হবে না। অনেক ক্ষেত্রেই তা জিভের ক্যানসারের কারণ হয়ে উঠতে পারে।